ক্রমবর্ধমান ডিজিটাল পেমেন্ট প্রতারণার (Digital Payment Frauds) ঘটনা রোধে উদ্যোগী হয়েছে রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া (RBI)। এই লক্ষ্যেই এবার দেশজুড়ে সরকারি ও বেসরকারি খাতের বড় বড় ব্যাংকগুলিকে সঙ্গে নিয়ে গড়ে তোলা হচ্ছে ডিজিটাল পেমেন্ট ইন্টেলিজেন্স প্ল্যাটফর্ম (DPIP)—যা একটি ডিজিটাল পাবলিক ইনফ্রাস্ট্রাকচার (DPI) হিসেবে কাজ করবে।
ডিজিটাল প্রতারণার বিরুদ্ধে সম্মিলিত যুদ্ধ:
সূত্রের খবর, এই প্ল্যাটফর্মটি গড়ে তোলা হবে আরবিআই-এর সরাসরি তত্ত্বাবধান ও দিকনির্দেশনার অধীনে, এবং এতে অংশ নেবে দেশজুড়ে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংক। মূল লক্ষ্য হল, রিয়েল-টাইম ইনটেলিজেন্স শেয়ারিং এবং ডেটা বিশ্লেষণের মাধ্যমে প্রতারণার ঝুঁকি শনাক্ত করে তা প্রতিরোধ করা।
এই উদ্যোগের পিছনে মূল ভাবনা হল, ডিজিটাল প্রতারণা বা জালিয়াতি এমন একটি সমস্যা যা এককভাবে কোনও একটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে রুখে দেওয়া সম্ভব নয়। তাই, একটি সমন্বিত প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে গোটা আর্থিক ব্যবস্থা জুড়ে তথ্য ভাগাভাগি করে প্রতারণার আগেই সতর্কতা নেওয়া সম্ভব হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
উচ্চপর্যায়ের বৈঠক এবং রূপরেখা:
জানা গেছে, চলতি মাসের শুরুতেই এই বিষয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে বিভিন্ন ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, আরবিআই-এর শীর্ষ কর্মকর্তারা এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডাররা উপস্থিত ছিলেন। সেই বৈঠকে DPIP-এর কাঠামো এবং কার্যপদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
এই প্ল্যাটফর্মটি আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই কাজ শুরু করবে বলে সরকার এবং আরবিআই আশাবাদী।
তথ্য বিশ্লেষণ ও প্রতারণা রোধে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার:
DPIP চালু হলে, এটি বিভিন্ন উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে সম্ভাব্য হুমকির চিহ্ন শনাক্ত করবে। এর মাধ্যমে ডিজিটাল লেনদেনে জালিয়াতি আটকানো সম্ভব হবে এবং গ্রাহকদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা যাবে।
এই প্ল্যাটফর্মে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI), মেশিন লার্নিং (ML) এবং রিয়েল টাইম অ্যানালিটিক্স-এর মতো অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করা হবে বলে জানা গেছে।
RBIH এর দায়িত্বে প্রোটোটাইপ:
এই প্রকল্পের প্রাথমিক প্রোটোটাইপ তৈরি করছে Reserve Bank Innovation Hub (RBIH)। ৫ থেকে ১০টি ব্যাংকের সঙ্গে পরামর্শ করেই প্ল্যাটফর্মটির প্রযুক্তিগত রূপরেখা তৈরি হচ্ছে।
এর আগেই, ২০২৩ সালের জুনে আরবিআই-এর পক্ষ থেকে NPCI-এর প্রাক্তন এমডি ও সিইও এ.পি. হোটা-র নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল DPIP সংক্রান্ত বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখার জন্য। সেই কমিটির পরামর্শেই বর্তমান রূপরেখা তৈরি হয়েছে।
আরবিআই-এর বার্ষিক প্রতিবেদন: উদ্বেগজনক চিত্র:
রিজার্ভ ব্যাংকের সাম্প্রতিক বার্ষিক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ব্যাংক প্রতারণার পরিমাণ প্রায় তিনগুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৬,০১৪ কোটি টাকায়, যেখানে আগের অর্থবছরে এই পরিমাণ ছিল ১২,২৩০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২৫,৬৬৭ কোটি টাকার প্রতারণা ঘটেছে সরকারি ব্যাংকগুলিতে, যেখানে আগের বছর তা ছিল ৯,২৫৪ কোটি টাকা।
প্রতারণার সংখ্যা অনুযায়ী, বেসরকারি ব্যাংকগুলিতে সর্বাধিক ঘটেছে কার্ড ও ইন্টারনেট লেনদেনে। অপরদিকে, সরকারি ব্যাংকগুলিতে সবচেয়ে বেশি প্রতারণা হয়েছে ঋণ সংক্রান্ত লেনদেনে (অ্যাডভান্স ক্যাটাগরি)। এই পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট, ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থা যত দ্রুতগতিতে সম্প্রসারিত হচ্ছে, ততই বেড়ে চলেছে প্রতারণার সুযোগ।
DPIP: নিরাপদ লেনদেনের ভবিষ্যৎ:
DPIP চালু হলে, গ্রাহকেরা আরও সুরক্ষিতভাবে ডিজিটাল লেনদেন করতে পারবেন। এছাড়াও, এটি ব্যাংকগুলিকে প্রতারণার ঘটনা আগেভাগেই চিহ্নিত করে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে সাহায্য করবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারত ডিজিটাল অর্থনীতির দিক থেকে যেমন দ্রুত এগিয়ে চলেছে, তেমনই এইরকম প্রতিরোধমূলক পরিকাঠামোও তৈরি করা অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে।
সরকার এবং আরবিআই-এর এই যুগ্ম পদক্ষেপ দেশের আর্থিক নিরাপত্তা ও গ্রাহক স্বার্থ রক্ষায় এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হয়ে উঠবে বলে মনে করা হচ্ছে।
- RBI-এর উদ্যোগে তৈরি হচ্ছে ডিজিটাল পেমেন্ট ইন্টেলিজেন্স প্ল্যাটফর্ম
- সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের যৌথ উদ্যোগে তৈরি হবে এই পরিকাঠামো
- রিয়েল-টাইম ইনটেলিজেন্স শেয়ারিং ও প্রযুক্তিনির্ভর ডেটা অ্যানালিটিক্স
- লক্ষ্য: ডিজিটাল প্রতারণা রোধ এবং নিরাপদ ডিজিটাল অর্থনীতি গড়ে তোলা
