করদাতাদের জন্য সুখবর। আয়কর দপ্তর (Income Tax Department) ই-ফাইলিং পদ্ধতিকে আরও সহজ ও সুলভ করার লক্ষ্যে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। তারই অন্যতম এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলো প্রি-ফিল্ড (Pre-filled) ITR ফর্ম। বিগত কয়েক বছর ধরেই ট্যাক্স পোর্টালে ফর্মগুলি আংশিকভাবে পূরণ করে দেওয়া হচ্ছে, তবে এবার সেটি আরও উন্নত ও তথ্যভিত্তিক হয়েছে। আয়কর দপ্তর বিভিন্ন উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করে করদাতাদের জন্য ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন (ITR) ফর্মের বেশিরভাগ অংশই স্বয়ংক্রিয়ভাবে পূরণ করে দিচ্ছে। এর ফলে যেমন ভুলের সম্ভাবনা কমছে, তেমনই করদাতার সময় ও ঝামেলা দুটোই হ্রাস পাচ্ছে।
প্রি-ফিল্ড ফর্মে যা যা তথ্য থাকে
প্রি-ফিল্ড ITR ফর্মে সাধারণত নিচের তথ্যগুলি অগ্রিম পূরণ করা থাকে:
- ব্যক্তিগত বিবরণ: যেমন নাম, PAN নম্বর, আধার নম্বর, ঠিকানা, যোগাযোগের তথ্য
- বেতন সংক্রান্ত আয়: আপনার নিয়োগকর্তার জমা দেওয়া Form 16 থেকে
- ব্যাঙ্কের সুদের আয়: Form 26AS ও Annual Information Statement (AIS) থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে
- লভ্যাংশ আয় (Dividend): কোম্পানি বা মিউচুয়াল ফান্ড থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী
- মূলধনী লাভ (Capital Gains): শেয়ার বা মিউচুয়াল ফান্ড বিক্রির তথ্য, যেটি ব্রোকার রিপোর্ট করে
- ধার্যযোগ্য কর ছাড় (Tax Deductions): ধারা ৮০সি, ৮০ডি ইত্যাদি, যদি পূর্বে ঘোষণা করা হয়ে থাকে
- TDS বা TCS-এর বিবরণ: Form 26AS অনুযায়ী
- অগ্রিম কর বা আত্মমূল্যায়িত কর: করদাতার পেমেন্টের বিবরণ
- ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের বিবরণ: কর ফেরতের জন্য বা অতিরিক্ত কর জমার জন্য
এই ফর্মগুলি করদাতার আধার নম্বর, PAN, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, চাকরি, বিনিয়োগ ও অন্যান্য আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত তথ্যের ভিত্তিতে পূরণ হয়।
কেন দরকার প্রি-ফিল্ড ফর্ম?
আয়কর দপ্তরের মতে, এর মূল লক্ষ্য হলো –
- করদাতাদের অভিজ্ঞতাকে আরও উন্নত করা
- সময়মতো রিটার্ন জমা দেওয়ায় উৎসাহিত করা
- ভুল কমানো
- কর ফাঁকির ঝুঁকি হ্রাস করা
- সরকারকে রাজস্ব ফাঁকির বিরুদ্ধে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সহায়তা করা
- তবে সাবধানতা অবলম্বন আবশ্যক
- যদিও প্রি-ফিল্ড ফর্ম রিটার্ন ফাইলিং সহজ করে দেয়, তবুও করদাতাদের সাবধানে সমস্ত তথ্য যাচাই করে নেওয়া
প্রয়োজন। নিচের বিষয়গুলির প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া উচিত:
- লভ্যাংশ ও মূলধনী লাভের তথ্য অনেক সময় সম্পূর্ণ নাও থাকতে পারে
- এফডি বা অন্যান্য ডিপোজিট থেকে সুদের আয় বাদ পড়তে পারে
- ৮০সি, ৮০ডি ছাড় অনেক সময় ফর্মে অটো-ফিলড থাকে না, করদাতাকে নিজে থেকে যোগ করতে হয়
- চাকরি পরিবর্তনকারী করদাতারা যদি একাধিক নিয়োগকর্তার অধীনে কাজ করে থাকেন, তবে এক বা একাধিক Form 16 বাদ পড়তে পারে
- ব্রোকার থেকে Capital Gains statement না সংগ্রহ করলে কিছু লেনদেন বাদ পড়তে পারে
এছাড়াও, AIS ও Form 26AS-এ কিছু ভুল বা অপ্রাসঙ্গিক তথ্য দেখা যেতে পারে, তাই রিটার্ন জমা দেওয়ার আগে অবশ্যই এই তথ্যগুলি যাচাই করে নিতে হবে।
ITR ফাইলিং-এর সময়সীমা ও ফর্ম:
এই বছর CBDT ITR Form-1 থেকে Form-4 পর্যন্ত ফাইলিংয়ের ইউটিলিটি চালু করেছে। অর্থাৎ, সাধারণ ব্যক্তি থেকে শুরু করে ছোট ব্যবসায়ী বা পেশাদাররাও এখন সহজেই ITR ফাইল করতে পারেন।
আয়কর দপ্তর করদাতাদের সুবিধার্থে রিটার্ন জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ পর্যন্ত বাড়িয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শেষ মুহূর্তের ভিড় এড়াতে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রিটার্ন জমা দেওয়া ভালো।
প্রি-ফিল্ড ITR ফর্ম নিঃসন্দেহে করদাতাদের জন্য একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এটি যেমন রিটার্ন জমা দেওয়ার প্রক্রিয়াকে দ্রুততর করছে, তেমনই সরকারকেও কর আদায়ে আরও কার্যকর করছে। তবে শুধুমাত্র প্রযুক্তির উপর ভরসা না করে, করদাতাদের উচিত প্রতিটি তথ্য নিজে যাচাই করে নিশ্চিত হয়ে তবেই রিটার্ন ফাইল করা। এতে ভবিষ্যতে কোনো নোটিশ বা ভুল হিসাবের ঝুঁকি এড়ানো যাবে।
এই বছর যাঁরা এখনও রিটার্ন জমা দেননি, তাঁদের এখনই সমস্ত প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস হাতে নিয়ে প্রি-ফিল্ড ফর্ম খতিয়ে দেখা ও ই-ফাইলিং সম্পন্ন করার পরামর্শ দিচ্ছে বিশেষজ্ঞ মহল।
