‘বৃষ্টিতেও শান্তি দেব না’,নকশালদের বিরুদ্ধে গর্জে উঠলেন অমিত শাহ

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (Amit-Shah) রবিবার ছত্তিশগড়ের রায়পুরে ঘোষণা করেছেন যে নকশালদের বিরুদ্ধে অভিযান বর্ষাকালেও অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, “নকশালরা বর্ষায় বিশ্রাম পাবে না। বৃষ্টির…

amit-shah message to naxals

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (Amit-Shah) রবিবার ছত্তিশগড়ের রায়পুরে ঘোষণা করেছেন যে নকশালদের বিরুদ্ধে অভিযান বর্ষাকালেও অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, “নকশালরা বর্ষায় বিশ্রাম পাবে না। বৃষ্টির মধ্যেও আমাদের অভিযান চলবে।” ২০২৬ সালের মার্চের মধ্যে ভারতকে নকশালমুক্ত করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে শাহ জানান, ছত্তিশগড়ে নকশালবাদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত আঘাত হানার সময় এসেছে। এই ঘোষণা নিরাপত্তা বাহিনীর মনোবল বাড়ানোর পাশাপাশি নকশালদের কঠোর বার্তা দিয়েছে।

নকশালবিরোধী অভিযানে তীব্রতা

ছত্তিশগড়ে বিজেপি (Amit-Shah) সরকার গঠনের পর থেকে নকশালবিরোধী অভিযানে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জিত হয়েছে। শাহ জানান, গত এক বছরে রাজ্যে ২৮৭ জন নকশাল নিহত, প্রায় ১,০০০ জন গ্রেফতার এবং ৮৩৭ জন আত্মসমর্পণ করেছে।

   

তিনি বলেন, “ছত্তিশগড় পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর সমন্বিত প্রচেষ্টায় আমরা নকশালবাদের মূলোৎপাটনে সফল হচ্ছি।” তিনি মুখ্যমন্ত্রী বিষ্ণু দেও সায়ের নেতৃত্ব এবং নিরাপত্তা বাহিনীর কঠোর পরিশ্রমের প্রশংসা করেন।

ঐতিহ্যগতভাবে, নকশালরা বর্ষাকালে তাদের কার্যকলাপ কমিয়ে দেয়, কারণ ঘন জঙ্গল এবং প্রতিকূল আবহাওয়া তাদের পক্ষে কাজ করে। তবে, শাহ (Amit-Shah) স্পষ্ট করেছেন যে এবার নিরাপত্তা বাহিনী আধুনিক প্রযুক্তি ও কৌশল ব্যবহার করে বর্ষায়ও অভিযান চালিয়ে যাবে। ড্রোন, স্যাটেলাইট ইমেজিং, এআই-ভিত্তিক নজরদারি এবং হেলিকপ্টারের ব্যবহার নকশালদের গতিবিধি ট্র্যাক করতে সহায়ক হচ্ছে। তিনি বলেন, “আমরা নকশালদের কোনো ছাড় দেব না। তারা যেখানেই লুকিয়ে থাকুক, আমরা তাদের খুঁজে বের করব।”

আত্মসমর্পণ নীতি ও উন্নয়ন

নকশালদের মূলধারায় ফিরিয়ে আনার জন্য ছত্তিশগড় সরকারের নতুন আত্মসমর্পণ নীতির প্রশংসা করেন শাহ। তিনি বলেন, “আমাদের প্রথম লক্ষ্য হল নকশালদের (Amit-Shah) হিংসা ত্যাগ করে সমাজের মূলধারায় ফিরিয়ে আনা।” রাজ্য সরকার আত্মসমর্পণকারী নকশালদের জন্য পুনর্বাসন প্রকল্প চালু করেছে, যার মাধ্যমে তাদের প্রশিক্ষণ, কর্মসংস্থান এবং আর্থিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এই নীতির ফলে গত এক বছরে শতাধিক নকশাল আত্মসমর্পণ করেছে, যা নকশালবাদের দুর্বলতার প্রমাণ।

শাহ (Amit-Shah) জানান, নকশাল প্রভাবিত এলাকায় উন্নয়নমূলক কাজ ত্বরান্বিত করা হচ্ছে। বস্তর অঞ্চলে রাস্তা, বিদ্যুৎ, স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষার সুযোগ বাড়ানো হচ্ছে। তিনি বলেন, “উন্নয়নই নকশালবাদ দমনের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। যেখানে উন্নয়ন পৌঁছে যায়, সেখানে নকশালবাদ টিকতে পারে না।” তিনি সোমবার (২৩ জুন) অবুঝমাড় অঞ্চল পরিদর্শন করে স্থানীয় গ্রামবাসীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন এবং উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর পর্যালোচনা করবেন।

নিরাপত্তা বাহিনীর সাফল্য (Amit-Shah)

ছত্তিশগড়ে নকশালবিরোধী অভিযানে নিরাপত্তা বাহিনী গত কয়েক বছরে বড় সাফল্য অর্জন করেছে। ২০২৫ সালে এখন পর্যন্ত বিজাপুর, কাঙ্কের এবং নারায়ণপুর জেলায় একাধিক মুঠভেড়ে ১০০-এর বেশি নকশাল নিহত হয়েছে। এর মধ্যে ‘অপারেশন সংকল্প’ এবং কর্রেগুট্টা অভিযানে ৫০ জনেরও বেশি নকশাল নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। শাহ (Amit-Shah) জানান, নকশালদের শীর্ষ নেতৃত্ব এবং তাদের পিএলজিএ ব্যাটালিয়ন নাম্বার ১-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট ধ্বংস করা হয়েছে, যা তাদের সাংগঠনিক কাঠামোকে দুর্বল করেছে।

Advertisements

তিনি বলেন, “আমাদের বাহিনী এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি প্রশিক্ষিত এবং সজ্জিত। আমরা নকশালদের জঙ্গলের গভীরে তাড়া করে যাব।” নিরাপত্তা বাহিনীতে অতিরিক্ত ৪,০০০ জন সিআরপিএফ সৈন্য মোতায়েন করা হয়েছে, যারা বস্তরের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অভিযান চালাচ্ছে।

গ্রামবাসীদের উপর নকশালদের অত্যাচার

নকশালরা গ্রামবাসীদের পুলিশের মুখবির সন্দেহে টার্গেট করছে। সম্প্রতি বিজাপুরে দুই নিরীহ গ্রামবাসীকে হত্যা করা হয়েছে, যার মধ্যে একজন ছিলেন আত্মসমর্পণকারী নকশাল। শাহ এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা করে বলেন, “নকশালদের এই কাপুরুষোচিত কাজ তাদের হতাশার প্রমাণ। তারা গ্রামবাসীদের ভয় দেখিয়ে তাদের প্রভাব ধরে রাখতে চায়, কিন্তু এতে তারা সফল হবে না।”

মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া

মুখ্যমন্ত্রী বিষ্ণু দেও সায় শাহের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “নকশালবাদ ছত্তিশগড়ের উন্নয়নের পথে বড় বাধা। আমরা কেন্দ্রীয় সরকারের সহায়তায় এই সমস্যার সমাধান করব।” তিনি গ্রামবাসীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং উন্নয়নমূলক কাজ ত্বরান্বিত করার প্রতিশ্রুতি দেন।

টানা পাঁচ জয়ে ভারত আয়োজি বিশ্বকাপে যোগ্যতা অর্জন এই দেশের

আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক প্রেক্ষাপট

শাহ (Amit-Shah) বলেন, নকশালবাদ কেবল ছত্তিশগড় বা ভারতের সমস্যা নয়, এটি বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদের একটি রূপ। তিনি জানান, নকশালদের অর্থায়ন ও অস্ত্র সরবরাহের উৎস খুঁজে বের করতে গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো হচ্ছে। এছাড়া, আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে নকশালদের লজিস্টিক নেটওয়ার্ক ধ্বংস করা হবে।

অমিত শাহের এই ঘোষণা ছত্তিশগড়ে নকশালবিরোধী অভিযানে নতুন গতি সঞ্চার করবে। বর্ষায় অভিযান অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নকশালদের দুর্বল করতে এবং তাদের ঘাঁটি ধ্বংস করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। একইসঙ্গে, আত্মসমর্পণ নীতি এবং উন্নয়নমূলক কাজের মাধ্যমে নকশাল প্রভাবিত এলাকায় শান্তি ও সমৃদ্ধি ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। শাহের এই সফর এবং ঘোষণা ছত্তিশগড়কে নকশালমুক্ত করার লড়াইয়ে একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।