কর্ণাটকের আমচাষিদের জন্য কেন্দ্রীয় অর্থ সহায়তার ঘোষণা

কর্ণাটকের আমচাষিদের (Mango Farmers) দীর্ঘদিনের দুর্ভোগে অবশেষে কিছুটা স্বস্তি মিলল। বাজারে আমের দাম লাগাতার কমে যাওয়ায় কেন্দ্রীয় ও কর্ণাটক রাজ্য সরকার যৌথভাবে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত…

Mango Farmers,Karnataka Mango Farmers ,Central Government Aid , Price Deficiency Payment

কর্ণাটকের আমচাষিদের (Mango Farmers) দীর্ঘদিনের দুর্ভোগে অবশেষে কিছুটা স্বস্তি মিলল। বাজারে আমের দাম লাগাতার কমে যাওয়ায় কেন্দ্রীয় ও কর্ণাটক রাজ্য সরকার যৌথভাবে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মোট ২.৫ লক্ষ মেট্রিক টন আমের জন্য এই ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে, যা রাজ্যের মোট উৎপাদনের ২৫ শতাংশ।

এই সিদ্ধান্ত শনিবার একটি ভার্চুয়াল বৈঠকে নেওয়া হয়, যেখানে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান এবং কর্ণাটকের কৃষিমন্ত্রী এন চালুভারায়া স্বামী। বৈঠকে কেন্দ্রীয় কৃষি সচিব দেবেশ চতুর্বেদীও অংশগ্রহণ করেন। আলোচনার মূল বিষয় ছিল আমের দাম পড়ে যাওয়া এবং তার ফলে কৃষকদের আর্থিক ক্ষতি।

   

সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “মার্কেটে আমের দাম কমে যাওয়ায় কৃষকদের আর্থিক সুরক্ষার স্বার্থে, কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার যৌথভাবে দামের পার্থক্য ভরাট করে ক্ষতিপূরণ দেবে।”

টোটা-পুরি আমের দাম পতনে দিশেহারা চাষি:
বিশেষ করে টোটা-পুরি জাতের আমের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। এই জাতটি কর্ণাটকে ব্যাপক হারে চাষ হয় এবং মূলত রফতানি ও প্রসেসিং-এর জন্য ব্যবহৃত হয়। কিন্তু চলতি মরশুমে চাহিদার তুলনায় জোগান বেশি থাকায় দাম ব্যাপক হারে কমে গেছে। ফলে অনেক কৃষক ন্যায্য মূল্য পাচ্ছিলেন না, এমনকি অনেক ক্ষেত্রে উৎপাদন খরচও ওঠেনি।

কর্ণাটক সরকার আগে থেকেই কেন্দ্রকে একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছিল, যেখানে জানানো হয়েছিল যে আম এবং টমেটোর দাম পড়ে যাওয়ায় কৃষকদের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। যদিও বৈঠকে কর্ণাটকের কৃষিমন্ত্রী জানিয়েছেন, বর্তমানে টমেটোর দাম স্থিতিশীল হয়েছে, তাই আপাতত টমেটো নিয়ে কোনও পদক্ষেপ নেওয়ার দরকার নেই।

১০ লক্ষ টন উৎপাদনের মধ্যে ২.৫ লক্ষ টনে ক্ষতিপূরণ:
চলতি বছরে কর্ণাটকে আনুমানিক ১০ লক্ষ মেট্রিক টন আম উৎপাদিত হয়েছে। তার মধ্যে ২৫ শতাংশ অর্থাৎ ২.৫ লক্ষ মেট্রিক টনের জন্য ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকার উভয়েই ৫০:৫০ অনুপাতে এই ব্যয় ভাগ করে নেবে। কৃষকদের তাদের বিক্রয় মূল্যের সঙ্গে স্বাভাবিক বাজার মূল্যের পার্থক্যের ভিত্তিতে ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হবে। এই সিদ্ধান্তকে কৃষকদের জন্য একটি “উল্লেখযোগ্য আর্থিক সহায়তা” হিসেবে চিহ্নিত করেছে কৃষি মন্ত্রক।

Advertisements

চাষিদের জন্য বড় সহায়তা: কৃষিমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া:
বৈঠক শেষে কর্ণাটকের কৃষিমন্ত্রী এন চালুভারায়া স্বামী বলেন, “আমচাষিদের দুর্দশা বোঝার জন্য আমি কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। কৃষকরা যেভাবে বাজারে দাম পাচ্ছিলেন না, তাতে তাদের চাষে আগ্রহ হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল। এই সিদ্ধান্ত সেই সমস্যা অনেকটাই লাঘব করবে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা চাই এই ক্ষতিপূরণ যত দ্রুত সম্ভব চাষিদের হাতে পৌঁছে যাক, যাতে তারা ভবিষ্যতে চাষ চালিয়ে যেতে উৎসাহ পান।”

ক্ষতিপূরণের পরিমাণ নির্ধারণ হবে বাজার দরের ভিত্তিতে:
সরকারি সূত্র অনুযায়ী, ক্ষতিপূরণ নির্ধারণের ক্ষেত্রে আমের প্রাক-মৌসুমি গড় বাজারদর ও বর্তমানে কৃষকরা যেই দামে বিক্রি করছেন, সেই দামের ফারাক হিসাব করা হবে। এই দামের ফারাকের অর্ধেক কেন্দ্র এবং অর্ধেক রাজ্য দেবে।
উল্লেখযোগ্যভাবে, এই সহায়তা দেওয়া হবে একটি কেন্দ্রীয় স্কিমের আওতায়, যাতে প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা বাজার ঝুঁকির কারণে কৃষকদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করা যায়।

বিশেষজ্ঞদের মতামত:
কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. শঙ্কর রাও বলেন, “এটি একটি যথার্থ পদক্ষেপ। বহু কৃষক এই বছর আম চাষ করে বড় লোকসানে পড়েছেন। চাষিদের আস্থা ধরে রাখতে হলে এধরনের আর্থিক সহায়তা খুব প্রয়োজন। তবে ক্ষতিপূরণের টাকা যেন দ্রুত হাতে আসে, তা নিশ্চিত করাও জরুরি।”

চাষিদের আবেদন: দ্রুততার সঙ্গে কার্যকর হোক সিদ্ধান্ত:
এই ঘোষণায় খুশি হলেও চাষিদের একাংশ চাইছেন দ্রুত এবং স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় ক্ষতিপূরণ পৌঁছে যাক তাঁদের কাছে। কৃষক নেতা রামলিঙ্গাইয়া বলেন, “ঘোষণার পরেও আমরা আগে দেখেছি বহু সময় চলে যায় টাকা হাতে পেতে। এবার যেন তেমন না হয়। যারা সত্যিই ক্ষতিগ্রস্ত, তারা যেন উপকৃত হন, সেদিকেও নজর দিতে হবে।”

কর্ণাটকের আমচাষিদের জন্য কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্ত একটি বড় স্বস্তির খবর। আগত মৌসুমে কৃষকদের মনোবল বাড়াতে ও ভবিষ্যতের কৃষিকাজে উৎসাহ যোগাতে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহল। এখন চাষিদের চোখ রয়েছে কবে এবং কীভাবে এই ক্ষতিপূরণ বাস্তবে রূপ পাবে, তার দিকেই।