দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক মানচিত্রে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত। বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের প্রধান রফতানি খাত টেক্সটাইল বা পোশাক শিল্প আজ গভীর সঙ্কটে। রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিদেশি বিনিয়োগে ভাটার টান এবং আন্তর্জাতিক বাজারে আস্থাহীনতার ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ডে বড় ধাক্কা লেগেছে। সেই সুযোগে বিপুল গতি পাচ্ছে ভারতের বস্ত্র শিল্প (India textile), যা এখন আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের কাছে আরও বেশি স্থিতিশীল ও প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠেছে।
২০২৪ সালের অগস্টে হাসিনা সরকারের পতন এবং পরবর্তী রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ভবিষ্যতকে প্রশ্নচিহ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই অস্থিরতা সরাসরি প্রভাব ফেলেছে দেশের সবচেয়ে বড় রফতানি খাতে—পোশাক শিল্পে।
বাংলাদেশের টেক্সটাইল শিল্পে ধসের কারণগুলি:
রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও বিনিয়োগে ভাটার টান
আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের আস্থা হ্রাস
উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি ও শ্রমিক আন্দোলন
বিদ্যুৎ সংকট ও কাঁচামালের ঘাটতি
চীন থেকে আমদানির ওপর ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক-নীতি
এই প্রেক্ষাপটে ভারতের টেক্সটাইল সংস্থাগুলি ক্রমশ নিজেদের আন্তর্জাতিক বাজারে বিশ্বাসযোগ্য ও নির্ভরযোগ্য হিসাবে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে। মে ২০২৫-এ ভারতের বস্ত্র রফতানিতে ১১.৩ শতাংশ বৃদ্ধি হয়েছে, যা বিগত পাঁচ বছরে সর্বোচ্চ।
কেন ভারত হয়ে উঠছে বিকল্প?
রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা: তুলনামূলকভাবে ভারত একটি সুসংগঠিত বাজার।
সরকারি সহায়তা ও উৎপাদন উৎসাহ প্রকল্প (PLI)
বৈচিত্র্যময় উৎপাদন ক্ষমতা: তুলা, সিল্ক, সিন্থেটিক, হ্যান্ডলুম — সব শাখাতেই শক্ত ভিত্তি
লজিস্টিক সুবিধা ও সমুদ্র বন্দর সংযুক্তি
বিশ্বের বহু খুচরো ফ্যাশন চেইন (যেমন Zara, H&M, Uniqlo) ইতিমধ্যে ভারতের সরবরাহকারীদের সঙ্গে নতুন করে চুক্তি সই করেছে, যেখানে আগে বাংলাদেশ ছিল তাঁদের প্রথম পছন্দ।
বাংলাদেশে এর প্রভাব
বিশ্ববাজারে ক্রমশ হারানো জায়গা ফেরত পাওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকার নানান নীতি গ্রহণ করলেও তা রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে বাস্তবায়নে বিলম্ব হচ্ছে। টেক্সটাইল শিল্পের সঙ্গে যুক্ত হাজার হাজার শ্রমিক কাজ হারানোর আশঙ্কায় রয়েছেন। পাশাপাশি বিদেশি অর্ডারও বাতিল হচ্ছে বা স্থানান্তর হচ্ছে ভারতে ও ভিয়েতনামে।
বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের এই দুর্দিনে ভারতের টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি এক নতুন সম্ভাবনার মুখে দাঁড়িয়ে। তবে এই সুবিধাকে টেকসই করতে হলে ভারতকে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা, মানসম্পন্ন পণ্য ও আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডদের আস্থা ধরে রাখার দিকেও নজর রাখতে হবে।
দক্ষিণ এশিয়ার টেক্সটাইল দুনিয়ায় এক নয়া শক্তির উত্থান আর এক পুরনো কেন্দ্রের ধস — ২০২৫ সালের এই পালাবদল নজরে রাখছে গোটা বিশ্ব।