যুদ্ধের আঁচে ভারতে বাড়ছে সাবান-বিস্কুট-তেলের দাম

মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে অস্থিরতা—ইরান ও ইজ়রায়েলের (Iran-Israel War) মধ্যে চলা সংঘাত কেবল ওই দুই দেশের সীমাবদ্ধ নয়। এর প্রভাব ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছে সারা বিশ্বে। ভৌগোলিকভাবে…

যুদ্ধের আঁচে ভারতে বাড়ছে সাবান-বিস্কুট-তেলের দাম

মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে অস্থিরতা—ইরান ও ইজ়রায়েলের (Iran-Israel War) মধ্যে চলা সংঘাত কেবল ওই দুই দেশের সীমাবদ্ধ নয়। এর প্রভাব ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছে সারা বিশ্বে। ভৌগোলিকভাবে ভারত অনেক দূরে থাকলেও এই যুদ্ধের পরোক্ষ প্রভাব এসে পড়ছে দেশের বাজারেও। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, ইরান-ইজ়রায়েল যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের (crude oil) দাম ক্রমবর্ধমান, যা সরাসরি প্রভাব ফেলতে চলেছে ভারতের এফএমসিজি (FMCG) শিল্পে।

যুদ্ধ আর তেলের অঙ্ক
বিশ্বের একটি বড় অংশের তেল সরবরাহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলির উপর নির্ভরশীল। ইরান, সৌদি আরব, কুয়েত, ইরাক, ইত্যাদি দেশগুলি বহু দশক ধরে ভারতসহ বহু দেশের জ্বালানি চাহিদা পূরণ করে আসছে। কিন্তু যখনই ওই অঞ্চলে অশান্তি ছড়ায়, তখনই তেলের সরবরাহ ব্যাহত হয় এবং তার দর চড়ে যায়।

   

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান-ইজ়রায়েলের চলতি যুদ্ধ পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হচ্ছে। তার জেরে অপরিশোধিত তেলের দাম ব্যারেল পিছু ১০০ ডলারের কাছাকাছি পৌঁছতে পারে। ভারত তেল আমদানিতে বিশ্বে তৃতীয় বৃহত্তম দেশ। এই বৃদ্ধির সরাসরি প্রভাব পড়বে পেট্রোল-ডিজেলের দামে, যা আবার প্রভাব ফেলবে পণ্যের উৎপাদন ও পরিবহণ খরচে।

কোন কোন জিনিসের দাম বাড়তে পারে?
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই যুদ্ধ এবং তেলের দামের বৃদ্ধির ফলে যেসব FMCG পণ্যগুলির দাম বাড়তে পারে তার মধ্যে রয়েছে—

প্যাকেজড ফুড ও পানীয় (বিস্কুট, চিপস, স্ন্যাকস, সফট ড্রিংক)

সাবান, ডিটারজেন্ট, টুথপেস্ট, স্যানিটারি প্রোডাক্টস

কসমেটিক্স ও পার্সোনাল কেয়ার আইটেম

Advertisements

পেইন্ট ও ঘরোয়া পরিষ্কার সামগ্রী

এগুলি তৈরি ও পরিবহণের সময় অনেকটাই তেলের উপর নির্ভর করে। পরিবহণ খরচ বাড়লে উৎপাদক সংস্থাগুলি তা মূল্য বৃদ্ধির মাধ্যমে সাধারণ ভোক্তার উপর চাপিয়ে দেয়।

শিল্প সংস্থাগুলির উদ্বেগ
এই পরিস্থিতি নিয়ে ইতিমধ্যেই বহু FMCG সংস্থা নড়েচড়ে বসেছে। বিভিন্ন কোম্পানি সূত্রে জানা গিয়েছে, যদি যুদ্ধ পরিস্থিতি দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং তেলের দাম ১০০ ডলারের উপরে যায়, তাহলে আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই বাজারে পণ্যের দাম ৫% থেকে ১৫% পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে।

বিশেষ করে ছোট ও মাঝারি ব্র্যান্ডগুলির জন্য এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ, তাদের উৎপাদন ব্যয় বাড়লেও, দাম বাড়ালে বাজার ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে।

গ্রাহকরা কীভাবে প্রভাবিত হবেন?
যুদ্ধ-জ্বালানির সমীকরণে আবারও মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত শ্রেণির উপর চাপ বাড়বে। এমনিতেই বাজারে জিনিসপত্রের দাম ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। তার উপর FMCG পণ্যের দাম বৃদ্ধি মানে দৈনন্দিন জীবনের খরচ আরও বাড়বে। বহু মানুষ হয়তো বাধ্য হবেন কম দামি বিকল্প বেছে নিতে কিংবা ব্যবহারের পরিমাণ কমিয়ে দিতে।

ইরান-ইজ়রায়েল যুদ্ধ শুধুই রাজনীতির বিষয় নয়, তা সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে ভারতের মতো দেশে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনে। বিশ্বায়িত অর্থনীতিতে দূরের একটি সংঘাতও দেশের মুদ্রাস্ফীতি, খরচ এবং ক্রয়ক্ষমতার উপর বড় প্রভাব ফেলতে পারে। এখন দেখার বিষয়, ভারত সরকার ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলি এই মূল্যবৃদ্ধির সম্ভাব্য ঢেউ সামাল দিতে কী ব্যবস্থা নেয়।