টাকা তোলার আগে জেনে নিন মিউচুয়াল ফান্ড রিডেম্পশনের গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম

বর্তমান সময়ে বিনিয়োগকারীদের জন্য মিউচুয়াল ফান্ড (Mutual Fund) একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় ও লাভজনক বিনিয়োগ মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত। এর অন্যতম বড় সুবিধা হলো “লিকুইডিটি” বা তারল্য—অর্থাৎ…

ETF vs Mutual Fund Which Offers Better Tax Efficiency?

বর্তমান সময়ে বিনিয়োগকারীদের জন্য মিউচুয়াল ফান্ড (Mutual Fund) একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় ও লাভজনক বিনিয়োগ মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত। এর অন্যতম বড় সুবিধা হলো “লিকুইডিটি” বা তারল্য—অর্থাৎ বিনিয়োগ সহজে নগদে রূপান্তর করার সুবিধা। অনেকেই জানেন না, প্রয়োজনে কিভাবে মিউচুয়াল ফান্ড থেকে টাকা তুলে নেওয়া যায়। আজ আমরা জানবো কীভাবে এই প্রক্রিয়া কাজ করে, কোন কোন পদ্ধতিতে আপনি টাকা তুলতে পারেন, এবং এতে কি কি বিষয় মাথায় রাখা উচিত।

মিউচুয়াল ফান্ড রিডেম্পশন বলতে কী বোঝায়?
মিউচুয়াল ফান্ড রিডেম্পশন (Redemption) অর্থ হলো—আপনার বিনিয়োগকৃত ফান্ড থেকে টাকা তুলে নেওয়া, অর্থাৎ আপনার হোল্ডিং থাকা ইউনিট বিক্রি করে তার মূল্য নগদে গ্রহণ করা। এটি তখনই প্রয়োজন হয় যখন আপনি হঠাৎ আর্থিক চাপে পড়েছেন অথবা আপনার বিনিয়োগ থেকে লাভ তুলে নিতে চান। রিডেম্পশন মূলত ফান্ডের বর্তমান নেট অ্যাসেট ভ্যালু (NAV)-এর ওপর ভিত্তি করে হয়।

   

কিভাবে মিউচুয়াল ফান্ড থেকে টাকা তোলা যায়?
বর্তমানে বেশ কয়েকটি পদ্ধতিতে আপনি আপনার মিউচুয়াল ফান্ড ইউনিট রিডিম করতে পারেন। নিচে প্রতিটি পদ্ধতির বিস্তারিত আলোচনা করা হলো—
১. ব্রোকার বা ডিস্ট্রিবিউটরের মাধ্যমে:
যদি আপনি কোনো ব্রোকার বা ডিস্ট্রিবিউটরের মাধ্যমে ফান্ডে বিনিয়োগ করে থাকেন, তাহলে তাদের মাধ্যমেই রিডেম্পশন রিকোয়েস্ট জমা দিতে পারেন। এটি অনলাইনে বা অফলাইনে হতে পারে।
অফলাইনে: রিডেম্পশন ফর্ম পূরণ করে জমা দিতে হবে।
অনলাইনে: ব্রোকারের অ্যাপ বা ওয়েবসাইটে লগ ইন করে স্কিম বেছে নিয়ে, নির্দিষ্ট ইউনিট বা পরিমাণ লিখে রিকোয়েস্ট পাঠাতে পারবেন।

২. ডিম্যাট বা ট্রেডিং অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে:
আপনার মিউচুয়াল ফান্ড যদি ডিম্যাট অ্যাকাউন্টের সঙ্গে লিংক থাকে, তাহলে আপনি আপনার ট্রেডিং অ্যাপ বা ওয়েবসাইট ব্যবহার করেও টাকা তুলতে পারেন।
লগ ইন করুন
সংশ্লিষ্ট ফান্ড নির্বাচন করুন
ইউনিট বা পরিমাণ লিখে সাবমিট করুন

৩. এএমসি-র (AMC) মাধ্যমে সরাসরি:
প্রত্যেকটি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি (AMC)-র নিজস্ব ওয়েবসাইট বা অ্যাপ থাকে, যেখানে লগ ইন করে সরাসরি রিডেম্পশন রিকোয়েস্ট পাঠানো যায়।
লগ ইন করুন (ফোলিও নম্বর ও PAN দিয়ে)
স্কিম বেছে নিন
পরিমাণ বা ইউনিট লিখে সাবমিট করুন

Advertisements

৪. রেজিস্ট্রার ও ট্রান্সফার এজেন্ট (RTA) এর মাধ্যমে:
CAMS ও KFintech-এর মতো RTA সংস্থা গুলো রিডেম্পশন পরিষেবা দেয়। আপনি চাইলে অনলাইনে তাদের ওয়েবসাইটে অথবা অফিসে গিয়ে রিডেম্পশন করতে পারেন।

অনলাইনে টাকা তোলার ধাপসমূহ:
যারা ডিজিটাল মাধ্যমে টাকা তুলতে চান, তাদের জন্য নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুন:
1. ফান্ড হাউস বা থার্ড-পার্টি প্ল্যাটফর্মে যান
2. “Online Transactions” সেকশন বেছে নিন
3. ফোলিও নম্বর ও PAN দিয়ে লগ ইন করুন
4. স্কিম নির্বাচন করে ইউনিট/অ্যামাউন্ট লিখুন
5. তথ্য যাচাই করে কনফার্ম করুন

পুরো প্রক্রিয়ার সারাংশ:
১. রিকোয়েস্ট জমা দিন:
আপনার ব্রোকার, অ্যাপ, এএমসি বা আরটিএ-এর মাধ্যমে রিডেম্পশন রিকোয়েস্ট সাবমিট করুন।
২. যাচাই প্রক্রিয়া:
এএমসি আপনার ফান্ডের হোল্ডিং যাচাই করে দেখবে কোনো লক-ইন পিরিয়ড আছে কিনা অথবা এক্সিট লোড প্রযোজ্য কিনা।
৩. প্রসেসিং:
রিকোয়েস্ট সাধারণত ১-৩ কার্যদিবসের মধ্যে সম্পন্ন হয়।
৪. ট্যাক্স বিবেচনা:
রিডেম্পশনের পর লাভ হলে তা ক্যাপিটাল গেইন হিসেবে ধরা হয়।
ইকুইটি ফান্ড: এক বছরের বেশি হলে LTCG (১০% ১ লক্ষ টাকার বেশি লাভে
ডেট ফান্ড: ধরা হয় ইনকাম ট্যাক্স স্ল্যাব অনুযায়ী
৫. টাকা হস্তান্তর:
রিডেম্পশন অ্যামাউন্ট সরাসরি আপনার রেজিস্টার্ড ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা পড়ে।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:

  • লক-ইন পিরিয়ড: কিছু ফান্ডে যেমন ELSS-এ তিন বছরের লক-ইন থাকে, তাই সেই সময়ের আগে টাকা তোলা যাবে না।
  • এক্সিট লোড: অনেক ফান্ডে নির্দিষ্ট সময়ের আগে টাকা তুললে অতিরিক্ত চার্জ কাটা হয়।
  • নেট অ্যাসেট ভ্যালু (NAV): যেদিন আপনি রিডেম্পশন অনুরোধ পাঠান, সাধারণত সেই দিনের NAV অনুযায়ী আপনার অ্যামাউন্ট গণনা হয় (যদি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সাবমিট করা হয়)।
  • মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ যেমন সহজ, তেমনি টাকা তোলাও খুবই সুবিধাজনক ও দ্রুত। সঠিক প্রক্রিয়া জানলে আপনি প্রয়োজনে ঝঞ্ঝাটছাড়া নগদ অর্থ পেয়ে যেতে পারেন। তাই, বিনিয়োগের পাশাপাশি তার ব্যবস্থাপনাও জানা খুবই জরুরি।
  • আপনার বিনিয়োগ বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে পরিচালনা করুন এবং প্রয়োজনে নিশ্চিন্তে রিডেম্পশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করুন।