কলকাতা: মধ্যপ্রাচ্য কার্যত যুদ্ধক্ষেত্র। ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলা টানা ছ’দিনের সংঘর্ষ বুধবার গিয়ে ঠেকল নতুন এক মাত্রায়। এই প্রথম, ইরান দাবি করল তারা ইসরায়েলের উদ্দেশে ছুঁড়েছে Fattah-1 নামে একটি হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র। এই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই আন্তর্জাতিক মহলে ছড়িয়ে পড়ে প্রবল উদ্বেগ। কারণ, এতদিন কেবল দেখনদারি হিসেবে উপস্থিত এই মিসাইল এবার সরাসরি ব্যবহার হল যুদ্ধক্ষেত্রে।
সকাল থেকেই ইরানের দিক থেকে ছোঁড়া একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র এসে আঘাত হানে তেল আভিভের আকাশে। শহরের একাধিক এলাকায় শোনা যায় বিস্ফোরণের শব্দ। প্রায় একই সময়ে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান হামলা চালায় তেহরান ও কারাজ শহরের আশপাশে। ইরানের রাজধানীর ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের নিরাপত্তার জন্য সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
Fattah-1: ৪০০ সেকেন্ডের ভিতর তেল আভিভ?
২০২৩ সালে ইরান তাদের এই হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রথম সামনে আনে। তখনই সেনাবাহিনীর তরফে বলা হয়েছিল এই মিসাইল ৪০০ সেকেন্ডের মধ্যে তেল আভিভে পৌঁছে যেতে পারে। সে সময় এক বিশাল ব্যানারে লেখা ছিল: “৪০০ সেকেন্ড টু তেল আভিভ”। এই প্রথম এই অস্ত্রকে মাঠে নামাল ইরান।
উত্তপ্ত বার্তা ট্রাম্পের, আশঙ্কার কেন্দ্রবিন্দুতে আমেরিকা Iran Israel Conflict
পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠেছে আরও একটি কারণে-মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রকাশ্যে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইরানকে। জি-৭ সম্মেলন থেকে আচমকাই ফিরে গিয়েছেন ট্রাম্প। আর দেশে ফিরে একের পর এক পোস্ট করেছেন Truth Social-এ। লিখেছেন, “আমরা জানি আয়াতোল্লাহ খামেনি কোথায় আছেন। তাঁকে এখনও হত্যা করছি না, কিন্তু আমাদের ধৈর্যের সীমা পেরিয়ে যাচ্ছে।” এর কিছুক্ষণ পরই আরও এক পোস্টে লেখেন, “ইরানের উচিত এখনই নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করা।”
সঙ্গে জানিয়েছেন, মার্কিন সেনাবাহিনী আপাতত প্রতিরক্ষামূলক অবস্থানে থাকলেও, প্রেসিডেন্ট স্তরে নিরাপত্তা বৈঠকে আক্রমণাত্মক কৌশল নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
খামেনির পাল্টা বার্তা: যুদ্ধ শুরু হয়েছে
ট্রাম্পের মন্তব্যের জবাবে এবার মুখ খুলেছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ আলি খামেনি। তাঁর বার্তা, “যুদ্ধ শুরু। আলি খায়বারে ফিরে গেল।” পরের বার্তায় তিনি বলেন, “জায়নিস্টদের কঠিন জবাব দিতে হবে। কোনো দয়া নয়।”
পালটা সুর রেজা পাহলভির, ‘খামেনি লুকিয়ে রয়েছেন’
ইরানের শেষ রাজবংশের উত্তরাধিকারী রেজা পাহলভি, যিনি বর্তমানে প্রবাসে রয়েছেন, তাঁর দাবি,
“খামেনি আর নিয়ন্ত্রণে নেই। তিনি এখন মাটির নিচে লুকিয়ে রয়েছেন। এই শাসন কাঠামো ধসে পড়ছে।”
মার্কিন যুদ্ধবিমান মধ্যপ্রাচ্যে, সংঘাতের বহর বাড়ছে
মার্কিন প্রশাসন ইতিমধ্যেই আরও যুদ্ধবিমান পাঠিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যে। আগের কিছু মিশনের সময়ও বাড়ানো হয়েছে। হোয়াইট হাউসের তরফে জানানো হয়েছে, ফোর্স এখনো সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেয়নি, তবে পরিস্থিতি পাল্টাতে সময় লাগবে না।
দুই রাষ্ট্রের সংঘাত, গোটা অঞ্চলের দুশ্চিন্তা
যুদ্ধ এখন আর সীমান্তে আটকে নেই। হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যবহার, আমেরিকার সরাসরি সম্ভাব্য সম্পৃক্ততা এবং ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্ব সব মিলিয়ে পরিস্থিতি বিপজ্জনক দিকেই যাচ্ছে।
বিশ্ব এখন তাকিয়ে তিন শহরের দিকে তেহরান, তেল আভিভ আর ওয়াশিংটন। পরবর্তী সিদ্ধান্ত যে কেবল এই অঞ্চল নয়, গোটা বিশ্বকেই প্রভাবিত করতে পারে, তা বলাই বাহুল্য।