গত ১২ জুন আমেদাবাদে এয়ার ইন্ডিয়া ফ্লাইট এআই ১৭১-এর ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনার তদন্তে কমপক্ষে (black-box) এক বছর সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছে ভারতের এয়ারক্রাফট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো (এএআইবি)। এই দুর্ঘটনায় ২৪২ জন যাত্রী ও ক্রু সদস্যের মধ্যে মাত্র একজন বেঁচে ফিরেছেন, এবং স্থানীয়ভাবে আরও কয়েক ডজন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।
এএআইবি-এর (black-box) নেতৃত্বে তদন্তে সহায়তা করছে বোয়িং এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ড (এনটিএসবি)। ইতিমধ্যে দুর্ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে দুটি ব্ল্যাক বক্স—ককপিট ভয়েস রেকর্ডার (সিভিআর) এবং ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার (এফডিআর)। এই ব্ল্যাক বক্সগুলোর (black-box) তথ্য বিশ্লেষণই দুর্ঘটনার কারণ উদঘাটনের মূল চাবিকাঠি।
তদন্তের জটিলতা
এই দুর্ঘটনা বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনারের প্রথম মারাত্মক দুর্ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, যা তদন্তকে আরও জটিল করে তুলেছে। এএআইবি ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ১২১টি গুরুতর দুর্ঘটনা এবং ১০২টি সাধারণ দুর্ঘটনার তদন্ত করেছে, কিন্তু ফ্লাইট এআই ১৭১-এর তদন্ত তাদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
২০২০ সালের ৭ আগস্ট কোঝিকোডে (black-box) এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের একটি বোয়িং বিমান দুর্ঘটনার তদন্তে এএআইবি-কে প্রায় এক বছর সময় লেগেছিল। এআই ১৭১-এর ক্ষেত্রে তদন্ত আরও জটিল হতে পারে, কারণ এটি একটি অত্যাধুনিক বিমান এবং দুর্ঘটনাটি মাত্র ৩৩ সেকেন্ডের মধ্যে ঘটেছে।
তদন্তের প্রাথমিক ফোকাস রয়েছে ইঞ্জিন ব্যর্থতা, উইং ফ্ল্যাপ এবং ল্যান্ডিং গিয়ারের সমস্যার উপর। প্রাথমিক তথ্য অনুসারে, বিমানটি টেকঅফের পর মাত্র ৬৫০ ফুট উচ্চতায় পৌঁছেছিল, যা ইতিহাসে সর্বনিম্ন উচ্চতায় ডাবল ইঞ্জিন ব্যর্থতার ইঙ্গিত দেয়। তবে, এই তথ্য যাচাইয়ের জন্য ব্ল্যাক বক্সের তথ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ব্ল্যাক বক্সের ভূমিকা (black-box)
ব্ল্যাক বক্স (black-box) দুটি ইউনিট নিয়ে গঠিত—ককপিট ভয়েস রেকর্ডার এবং ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার। এগুলো উজ্জ্বল কমলা রঙের হয়, যাতে ধ্বংসাবশেষের মধ্যে সহজে খুঁজে পাওয়া যায়। এই ডিভাইসগুলো বিস্ফোরণ, তীব্র আগুন, সমুদ্রের চাপ এবং প্রচণ্ড আঘাত সহ্য করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।
ককপিট ভয়েস রেকর্ডার (black-box) শেষ কয়েক ঘণ্টার ককপিটের অডিও রেকর্ড করে, যার মধ্যে রয়েছে পাইলটদের কথোপকথন, অ্যালার্ম, ইঞ্জিনের শব্দ এবং এমনকি সুইচ চাপার শব্দ। ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার ফ্লাইটের বিভিন্ন প্যারামিটার রেকর্ড করে, যেমন গতি, উচ্চতা, থ্রাস্ট, ফ্ল্যাপের অবস্থান, অটোপাইলট ইনপুট, ত্বরণ, লিফট এবং ল্যান্ডিং গিয়ারের নড়াচড়া। এই দুটি রেকর্ডারের তথ্য ক্রস-রেফারেন্স করে তদন্তকারীরা বিমানের শেষ মুহূর্তগুলো পুনর্গঠন করবেন।
দিল্লিতে এএআইবি-এর অত্যাধুনিক ডিজিটাল ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার এবং ককপিট ভয়েস রেকর্ডার ল্যাবরেটরিতে এই ব্ল্যাক বক্সগুলো (black-box) বিশ্লেষণ করা হবে। তবে, যদি ডেটা উদ্ধারে জটিলতা দেখা দেয়, তাহলে ব্ল্যাক বক্সগুলো বিদেশে পাঠানো হতে পারে। এই সিদ্ধান্ত এখনও নেওয়া হয়নি।
তদন্ত প্রক্রিয়া
এএআইবি-এর তদন্তে ধ্বংসাবশেষ এবং ব্ল্যাক বক্স ছাড়াও বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হবে। এর মধ্যে রয়েছে এয়ারপোর্টস অথরিটি অফ ইন্ডিয়া, এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল, গ্রাউন্ড স্টাফ, সেন্ট্রাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিকিউরিটি ফোর্স (সিআইএসএফ), ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা, পাইলটদের পরিবার এবং একমাত্র বেঁচে ফেরা যাত্রী ভিশ্বশকুমার রমেশ। (black-box) তদন্তকারীরা বিমানের রক্ষণাবেক্ষণ রেকর্ড, আবহাওয়ার অবস্থা, রাডার লগ এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবৃতিও পরীক্ষা করবেন।
এছাড়াও, একটি পৃথক উচ্চ-পর্যায়ের সরকারি কমিটি গঠন করা হয়েছে, যারা দুর্ঘটনার প্রযুক্তিগত, পরিচালনাগত এবং নিয়ন্ত্রণমূলক দিকগুলো পরীক্ষা করবে। এই কমিটির রিপোর্ট তিন মাসের মধ্যে জমা দেওয়ার কথা রয়েছে। এই কমিটি ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধে নতুন স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) প্রণয়নের সুপারিশ করবে।
চ্যালেঞ্জ এবং সময়কাল
এই তদন্তের জটিলতার মূল কারণ হলো দুর্ঘটনার তীব্রতা এবং বোয়িং ৭৮৭-এর অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। বিমানটি টেকঅফের মাত্র ৩৩ সেকেন্ডের মধ্যে মেঘানিনগরের একটি আবাসিক এলাকায় বিধ্বস্ত হয়, যেখানে এটি বিজে মেডিকেল কলেজের একটি ছাত্রাবাসে আঘাত করে।
ফ্লাইটরাডার২৪-এর তথ্য (black-box) অনুসারে, বিমানটি ৬২৫ ফুট উচ্চতায় পৌঁছানোর পর সংকেত হারিয়েছিল। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, বিমানটি দ্রুত নিচে নেমে আসে এবং ল্যান্ডিং গিয়ার প্রত্যাহার না করা অবস্থায় ধ্বংস হয়।
তদন্তকারীরা ইঞ্জিন থ্রাস্ট, ফ্ল্যাপ কনফিগারেশন, পাইলট ত্রুটি, রক্ষণাবেক্ষণের সমস্যা এবং এমনকি পাখির সঙ্গে সংঘর্ষের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখছেন। এএআইবি-এর মুখপাত্র জানিয়েছেন, “প্রতিটি সম্ভাব্য তত্ত্ব যাচাই করা হবে।” তবে, বিশ্লেষকরা মনে করছেন, হাজার হাজার ডেটা প্যারামিটার বিশ্লেষণ এবং বিমানের উন্নত সিস্টেমের আচরণ বোঝার জন্য যথেষ্ট সময় প্রয়োজন।
আন্তর্জাতিক সহযোগিতা
যেহেতু বিমানটি আমেরিকায় নির্মিত, তাই আন্তর্জাতিক প্রোটোকল অনুসারে এনটিএসবি একটি সমান্তরাল তদন্ত পরিচালনা করছে (black-box)। যুক্তরাজ্যের এয়ার অ্যাক্সিডেন্টস ইনভেস্টিগেশন ব্রাঞ্চ (এএআইবি)ও তদন্তে সহায়তা করছে, কারণ ফ্লাইটে ৫৩ জন ব্রিটিশ নাগরিক ছিলেন। বোয়িং এবং জিই অ্যারোস্পেসের প্রতিনিধিরাও তদন্তে প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করছেন।
Suvendu Adhikari: শুভেন্দুর গড়ে সমবায়ে তৃণমূলের একচ্ছত্র জয় অব্যাহত
শিক্ষা এবং ভবিষ্যৎ
দুর্ঘটনার পর ভারতের ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ সিভিল এভিয়েশন (ডিজিসিএ) এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭-৮ এবং ৭৮৭-৯ ফ্লিটের উপর অতিরিক্ত নিরাপত্তা পরীক্ষার নির্দেশ দিয়েছে। এয়ার ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান এন. চন্দ্রশেখরন জানিয়েছেন, এই দুর্ঘটনা এয়ারলাইনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নত করার জন্য একটি “প্রেরণা” হিসেবে কাজ করবে।
এই দুর্ঘটনা ভারতের বিমান চলাচল শিল্পের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হতে পারে (black-box)। তদন্তের ফলাফল ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধে নতুন নিরাপত্তা প্রোটোকল প্রণয়নে সহায়ক হবে। তবে, বর্তমানে তদন্তকারীদের প্রধান লক্ষ্য হলো ব্ল্যাক বক্সের তথ্য বিশ্লেষণ করে দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটন করা।
এয়ার ইন্ডিয়া ফ্লাইট এআই ১৭১-এর দুর্ঘটনা ভারতের বিমান চলাচলের ইতিহাসে একটি মর্মান্তিক ঘটনা। এএআইবি, এনটিএসবি এবং বোয়িং-এর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় তদন্ত চলছে, তবে এর জটিলতার কারণে চূড়ান্ত রিপোর্ট পেতে এক বছরেরও বেশি সময় লাগতে পারে।
ব্ল্যাক বক্স (black-box) এবং ধ্বংসাবশেষ থেকে প্রাপ্ত তথ্যই সত্য উদঘাটন করবে। এই তদন্ত শুধু দুর্ঘটনার কারণই নির্ধারণ করবে না, ভবিষ্যতে বিমান চলাচলকে আরও নিরাপদ করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের পথও প্রশস্ত করবে।