কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী ও পেনশনভোগীদের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে—মহার্ঘ ভাতা (ডিএ) কি মূল বেতনের সঙ্গে একীভূত হবে? সম্প্রতি ডিএ ৫৫% এ পৌঁছেছে, যা ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে কার্যকর। এই বৃদ্ধির পর থেকে ডিএ মূল বেতনের সঙ্গে একীভূত করার সম্ভাবনা নিয়ে জল্পনা তীব্র হয়েছে। এই প্রতিবেদনে আমরা বিশেষজ্ঞদের মতামত, সরকারের অবস্থান, এবং অষ্টম বেতন কমিশনের (8th Pay Commission) প্রেক্ষাপটে এই বিষয়টি বিশ্লেষণ করব।
क्या डीए मूल वेतन में विलय होगा? विशेषज्ञों की राय
ডিএ একীভূতকরণের ইতিহাস
মহার্ঘ ভাতা মূল বেতনের সঙ্গে একীভূত করার প্রথা পঞ্চম বেতন কমিশনের সময়ে (১৯৯৬-২০০৬) প্রচলিত ছিল। ২০০৪ সালে, যখন ডিএ মূল বেতনের ৫০% ছাড়িয়েছিল, তখন এটি মূল বেতনের সঙ্গে একীভূত করা হয়েছিল। এই পদক্ষেপ মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব মোকাবিলা করতে এবং বেতন কাঠামোকে সরল করতে গৃহীত হয়েছিল। তবে, ষষ্ঠ এবং সপ্তম বেতন কমিশনে এই প্রথা বন্ধ করা হয়। ষষ্ঠ বেতন কমিশন স্পষ্টভাবে বলেছিল যে ডিএ মূল বেতনের সঙ্গে একীভূত করা উচিত নয়, এবং সপ্তম বেতন কমিশনও এই সুপারিশ সমর্থন করেনি।
বর্তমান পরিস্থিতি
২০২৪ সালের জুলাই থেকে ডিএ ৫০% থেকে বেড়ে ৫৩% এ পৌঁছেছে, এবং ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে এটি ৫৫% হয়েছে। এই বৃদ্ধি প্রায় ৫০ লক্ষ কর্মচারী এবং ৬৫ লক্ষ পেনশনভোগীকে প্রভাবিত করেছে। ডিএ ৫০% ছাড়িয়ে যাওয়ায়, অনেক কর্মচারী সংগঠন, বিশেষ করে ন্যাশনাল কাউন্সিল অব জয়েন্ট কনসালটেটিভ মেশিনারি (এনসি-জেসিএম), ডিএ মূল বেতনের সঙ্গে একীভূত করার দাবি জানিয়েছে। তারা মনে করেন, এই একীভূতকরণ বেতন কাঠামোকে স্থিতিশীল করবে এবং পেনশন, গ্র্যাচুইটি, এবং অন্যান্য ভাতার পরিমাণ বাড়াবে।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
বিশেষজ্ঞদের মধ্যে এই বিষয়ে মিশ্র মতামত রয়েছে। বিশাল গেহরানা, সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট এবং করঞ্জাওয়ালা অ্যান্ড কোং-এর প্রিন্সিপাল অ্যাসোসিয়েট, ইকোনমিক টাইমসকে বলেন, “পঞ্চম বেতন কমিশনে ডিএ ৫০% ছাড়িয়ে গেলে এটি মূল বেতনের সঙ্গে একীভূত করা হয়েছিল। এটি বেতন কাঠামো সরল করতে এবং মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব মোকাবিলা করতে সাহায্য করেছিল। তবে, ষষ্ঠ এবং সপ্তম কমিশনে এই প্রথা বন্ধ করা হয়েছে।”
অন্যদিকে, দেবযানী আইচ, ইন্ডাসল-এর পার্টনার, বলেন, “বর্তমানে ডিএ মূল বেতনের সঙ্গে একীভূত হবে না। সপ্তম বেতন কমিশন এই ধরনের কোনো সুপারিশ করেনি।” সঞ্জীব কুমার, লুথরা অ্যান্ড লুথরা ল অফিসেসের পার্টনার, একই মত প্রকাশ করে বলেন, “সপ্তম বেতন কমিশনের প্রতিবেদনে ডিএ একীভূতকরণের কোনো প্রস্তাব নেই।”
আলয় রাজভি, অ্যাকর্ড জুরিসের ম্যানেজিং পার্টনার, বলেন, “এই মুহূর্তে ডিএ একীভূতকরণের বিষয়ে কোনো সরকারি নিশ্চিতকরণ নেই। তবে, অষ্টম বেতন কমিশনের আগে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।”
সরকারের অবস্থান
২০২৫ সালের মার্চে রাজ্যসভায় একটি প্রশ্নের জবাবে অর্থ প্রতিমন্ত্রী পঙ্কজ চৌধুরী স্পষ্ট করেছেন যে বর্তমানে ডিএ মূল বেতনের সঙ্গে একীভূত করার কোনো পরিকল্পনা নেই। তিনি বলেন, “অষ্টম বেতন কমিশনের প্রতিবেদন প্রস্তুত ও গৃহীত হওয়ার আগে ডিএ একীভূতকরণের কোনো প্রস্তাব বিবেচনাধীন নয়।”
তবে, কিছু সূত্রের মতে, অর্থ মন্ত্রণালয় এই প্রস্তাবকে পুরোপুরি খারিজ করেনি। এনডিটিভি প্রফিটের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যদি ডিএ মূল বেতনের সঙ্গে একীভূত হয়, তবে ন্যূনতম মূল বেতন ১৮,০০০ টাকা থেকে বেড়ে ২৭,৫৪০ টাকা হতে পারে। তবে, এটি অষ্টম বেতন কমিশনের ফিটমেন্ট ফ্যাক্টরের উপর নির্ভর করবে।
অষ্টম বেতন কমিশনের ভূমিকা
২০২৫ সালের জানুয়ারিতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা অষ্টম বেতন কমিশন গঠনের অনুমোদন দিয়েছে, যা ২০২৬ সালের জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে। এনসি-জেসিএম-এর স্টাফ সাইড ডিএ একীভূতকরণের দাবি জানিয়েছে এবং এটিকে কমিশনের টার্মস অব রেফারেন্সে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছে।
কিছু সূত্রের মতে, যদি ডিএ একীভূত হয়, তবে ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর ২.৫৭ থেকে ২.৮৬ এর মধ্যে থাকতে পারে। এটি বেতন বৃদ্ধির পরিমাণ কমিয়ে দিতে পারে, কারণ মূল বেতন ইতিমধ্যে বাড়বে।
সম্ভাব্য প্রভাব
যদি ডিএ মূল বেতনের সঙ্গে একীভূত হয়, তবে এটি নিম্নলিখিত সুবিধা আনতে পারে:
• বেতন কাঠামো স্থিতিশীলতা: ডিএ-এর ওঠানামার কারণে সৃষ্ট জটিলতা কমবে।
• ভাতা বৃদ্ধি: গৃহভাড়া ভাতা (এইচআরএ), পরিবহন ভাতা (টিএ), এবং অন্যান্য ভাতা মূল বেতনের উপর ভিত্তি করে বাড়বে।
• পেনশন ও গ্র্যাচুইটি: পেনশন এবং গ্র্যাচুইটির পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে।
• অবসরকালীন সঞ্চয়: ন্যাশনাল পেনশন সিস্টেম (এনপিএস) অবদান বাড়বে।
তবে, কিছু চ্যালেঞ্জও থাকতে পারে। উচ্চতর মূল বেতন আয়করের বোঝা বাড়াতে পারে, বিশেষ করে নতুন কর ব্যবস্থায়।
বর্তমানে ডিএ মূল বেতনের সঙ্গে একীভূত হওয়ার সম্ভাবনা কম, কারণ সরকার এবং সপ্তম বেতন কমিশন এই বিষয়ে নেতিবাচক অবস্থান নিয়েছে। তবে, অষ্টম বেতন কমিশন এই দাবি বিবেচনা করতে পারে, বিশেষ করে কর্মচারী সংগঠনগুলির চাপের কারণে। কর্মচারী ও পেনশনভোগীদের অর্থ মন্ত্রণালয় এবং ডিপার্টমেন্ট অব পার্সোনেল অ্যান্ড ট্রেনিং (ডিওপিটি)-এর আনুষ্ঠানিক ঘোষণার দিকে নজর রাখা উচিত।