একজন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী ভারতীয় প্রবাসী (NRI) সম্প্রতি এক গুরুতর করসংক্রান্ত জটিলতার মুখোমুখি হন, যার মূল কারণ ছিল একজন ক্রেতার ফর্ম পূরণের একটি ছোট্ট কিন্তু গুরুতর ভুল। পুনে-স্থিত একটি সম্পত্তি ২ কোটি টাকায় বিক্রি করার পর, সকল প্রক্রিয়া সঠিকভাবে অনুসরণ করা সত্ত্বেও, তিনি আয়কর দপ্তরের কাছ থেকে প্রায় ৪৬.৮ লক্ষ টাকার একটি বিপুল কর দাবি পান।
ঘটনার সূচনা
এনআরআই বিক্রেতা ১৯৯৮ সালে পুনেতে একটি সম্পত্তি কেনেন। পরে, ২০১৫ সালের মার্চ মাসে এক ভারতীয় ক্রেতার কাছে সেই সম্পত্তি ২ কোটি টাকায় বিক্রি করার চুক্তি হয়। সেপ্টেম্বর ২০১৫-তে ক্রেতা সম্পত্তির মূল্য থেকে ২০% হারে টিডিএস, অর্থাৎ ১৮.৬৮ লক্ষ টাকা কেটে রাখেন এবং বাকি টাকা বিক্রেতাকে পরিশোধ করেন।
কিন্তু সমস্যার সূত্রপাত হয় যখন ক্রেতা ভুলবশত ফর্ম ২৭Q-এর পরিবর্তে ফর্ম ২৬QB ব্যবহার করে টিডিএস জমা দেন। যেখানে ফর্ম ২৭Q নির্দিষ্টভাবে এনআরআই বিক্রেতাদের জন্য, ফর্ম ২৬QB মূলত ভারতীয় বাসিন্দা বিক্রেতাদের জন্য ব্যবহৃত হয়।
আইএস-এ টিডিএসের ছাপ না থাকায় সংকট
এই ভুল ফর্ম ব্যবহারের ফলে, টিডিএসের তথ্যটি বিক্রেতার Annual Information Statement (AIS)-এ প্রতিফলিত হয়নি। ফলে ২০১৫-১৬ অর্থবর্ষে বিক্রেতা তার প্রকৃত মূলধনী লাভ হিসাব করে ১.৯১ লক্ষ টাকা অগ্রিম কর হিসেবে জমা দিলেও তিনি টিডিএস ক্রেডিট দাবি করতে পারেননি এবং ITR ফাইলও করেননি।
কর দপ্তরের নোটিশ ও ৪৬ লক্ষ টাকার দাবিপত্র
বছর কেটে যাওয়ার পর, মার্চ ২০২৩-এ আয়কর দপ্তর বিক্রেতাকে Section 148(b)-এর অধীনে একটি নোটিশ পাঠায়, যেখানে বলা হয় তার আয় কর মূল্যায়নের বাইরে থেকে গেছে।
পরে, মার্চ ২০২৫-এ কর দপ্তর বিক্রেতার সব ব্যাখ্যা এবং অগ্রিম কর জমা দেওয়ার প্রমাণ উপেক্ষা করে ৪৬.৮ লক্ষ টাকার একটি চূড়ান্ত কর দাবিপত্র জারি করে এবং Section 270A অনুযায়ী জরিমানার প্রক্রিয়া শুরু করে।
টিডিএস জমার প্রমাণ থাকলেও সঙ্কট কাটেনি
যদিও ক্রেতা একটি বৈধ ব্যাঙ্ক চালান জমা দিয়ে প্রমাণ দেন যে তিনি ১৮.৬৮ লক্ষ টাকা করপূর্বেই জমা দিয়েছেন, তবুও আয়কর দপ্তর জানান যে ভুল ফর্ম সংশোধন করতে হলে ক্রেতার লিখিত সম্মতি, একটি ইন্ডেমনিটি বন্ড এবং অতিরিক্ত নথিপত্র লাগবে।
ব্যাঙ্কের পক্ষ থেকেও সংশোধন প্রক্রিয়ায় বিলম্ব হয়, যার ফলে এনআরআই বিক্রেতা দীর্ঘ সময় ধরে কোনও সমাধান পাননি।
দিল্লি হাইকোর্টে রিট আবেদন ও রায়
সর্বশেষে, বিক্রেতা দিল্লি হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন দায়ের করেন। শুনানির সময়, আয়কর দপ্তর নিশ্চিত করে যে ক্রেতা টিডিএস জমা দিয়েছেন, কিন্তু এটিও জানায় যে প্রক্রিয়াগত সীমাবদ্ধতার কারণে তারা নিজেরা এই ফর্ম সংশোধন করতে পারছে না।
আদালত প্রশ্ন তোলে যে, যখন টিডিএস জমা হওয়া নিয়ে কোনও বিতর্ক নেই, তখন ক্রেতার সম্মতির প্রয়োজনীয়তা কেন? আয়কর দপ্তর ব্যাখ্যা করে যে ভবিষ্যতে ক্রেতা যাতে ফেরত দাবি না করতে পারেন, তার জন্য এই প্রক্রিয়া বাধ্যতামূলক।
তবে হাইকোর্ট বলেছে—“এই বিশেষ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, আমরা রেভিনিউ বিভাগকে নির্দেশ দিচ্ছি যেন টিডিএসের জমা টাকা বিক্রেতার নামে প্রতিফলিত করা হয় এবং ভুলভাবে জমা দেওয়া ফর্ম ২৬QB-এর মাধ্যমে জমা পড়া টিডিএস সংশোধন করে তার ফর্ম ২৬এএস-এ অন্তর্ভুক্ত করা হয়।”
আদালত আরও নির্দেশ দেয়, বিক্রেতার হিসেব অনুযায়ী যেকোনও রিফান্ড যদি প্রাপ্য থাকে, তা দ্রুত প্রদান করতে হবে এবং আগের সব বৈপরীত্যপূর্ণ আদেশ ও যোগাযোগগুলো বাতিল বলে গণ্য করতে হবে।
প্রবাসীদের জন্য শিক্ষা
এই ঘটনাটি ভারতের প্রবাসী নাগরিকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। প্রোপার্টি লেনদেনে শুধুমাত্র কর হার জানাই যথেষ্ট নয়, প্রক্রিয়াগত দিকগুলোও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। বিক্রেতা কিংবা ক্রেতা – উভয় পক্ষেরই ফর্ম নির্বাচনে সতর্ক থাকা উচিত। ভুল ফর্ম ব্যবহারের ফলে শুধু করদাতা নয়, সম্পূর্ণ লেনদেনই গুরুতর আইনি জটিলতায় পড়তে পারে।
এই ঘটনায় দিল্লি হাইকোর্টের বিচক্ষণ রায় শুধুমাত্র এক ব্যক্তিকে রক্ষা করেনি, বরং একটি নীতি নির্ধারণ করেছে যে সরকারকে প্রতিটি করদাতার বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। নির্দোষ নাগরিকরা যেন শুধুমাত্র ফর্মাল ভুলের কারণে করপীড়নের শিকার না হন, সেটাই এই রায়ের মূল বার্তা।