উত্তরাখণ্ডের সোনপ্রয়াগ থেকে কেদারনাথ (kedarnath) ধামের তীর্থযাত্রা রবিবার স্থগিত করা হয়েছে। রুদ্রপ্রয়াগ জেলার জঙ্গলচট্টি এলাকায় ধ্বংসাবশেষ ও পাথর খাদে পড়ায় পায়ে হাঁটা পথে বাধা সৃষ্টি হয়েছে। রুদ্রপ্রয়াগ পুলিশ ভক্তদের নিরাপদ স্থানে থাকার আহ্বান জানিয়েছে।
এক্স পোস্টে পুলিশ জানায়, “জঙ্গলচট্টির কাছে ধ্বংসাবশেষ ও পাথর খাদে পড়ায় পথে বাধা সৃষ্টি হয়েছে। সোনপ্রয়াগ থেকে কেদারনাথ ধামের তীর্থযাত্রা পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। কেদারনাথ ধামে আগত ভক্তদের যেখানে আছেন, সেখানে নিরাপদে থাকার জন্য জেলা পুলিশ আবেদন করছে।”
এদিকে, রুদ্রপ্রয়াগ (kedarnath) জেলার গৌরীকুণ্ডের কাছে একটি ঘন জঙ্গলে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামী (kedarnath) দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন এবং ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ সিভিল এভিয়েশন (ডিজিসিএ)-এর নিয়ম কঠোরভাবে পালনের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, আগামী দুই দিন হেলিকপ্টার পরিষেবা বন্ধ থাকবে।
হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার বিবরণ
রবিবার ভোর ৫:৩০টায় কেদারনাথ ধাম(kedarnath) থেকে গুপ্তকাশীগামী একটি আর্যান এভিয়েশনের বেল ৪০৭ হেলিকপ্টার (ভিটি-বিকেএ) গৌরীকুণ্ডের কাছে গৌরী মাই খর্ক এলাকায় ঘন জঙ্গলে দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয়। হেলিকপ্টারটি মাত্র ১০ মিনিটের উড়ানে ছিল। দুর্ঘটনার পর তা আগুনে পুড়ে যায়, ফলে হেলিকপ্টারে থাকা সাতজনই নিহত হন।
নিহতদের পরিচয় নিশ্চিত করা হয়েছে: পাইলট ক্যাপ্টেন রাজবীর সিং চৌহান (৩৯, জয়পুর), বদ্রীনাথ-কেদারনাথ মন্দির কমিটির প্রতিনিধি বিক্রম রাওয়াত (৪৭, রাসি, উত্তরাখণ্ড), বিনোদ দেবী (৬৬, উত্তর প্রদেশ), তৃষ্টি সিং (১৯, উত্তর প্রদেশ), রাজকুমার সুরেশ জয়সওয়াল (৪১, গুজরাট), শ্রদ্ধা রাজকুমার জয়সওয়াল এবং তাঁদের দুই বছরের কন্যা কাশী (মহারাষ্ট্র)।
স্টেট ডিজাস্টার রেসপন্স ফোর্স (kedarnath) (এসডিআরএফ) কমান্ডার অর্পণ যাদবের নেতৃত্বে উদ্ধারকারী দল তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। এসডিআরএফ, ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স ফোর্স (এনডিআরএফ) এবং স্থানীয় পুলিশের যৌথ দল প্রতিকূল আবহাওয়া সত্ত্বেও উদ্ধার অভিযান চালায়। ঘটনাস্থলটি দুর্গম এবং ঘন জঙ্গল এলাকায় হওয়ায় উদ্ধার কাজ বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল। সমস্ত শব উদ্ধার করা হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া
মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামী (kedarnath) এএনআই-কে বলেন, “আজ ভোরে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে একটি হেলিকপ্টার দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয়। যাঁরা প্রাণ হারিয়েছেন, তাঁদের জন্য আমি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি।” তিনি নিরাপত্তা নিয়ম কঠোরভাবে পালনের উপর জোর দিয়ে বলেন, “একটি জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে। নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে ডিজিসিএ’র নিয়ম লঙ্ঘন করা যাবে না। উঁচু হিমালয় অঞ্চলে উড়ানো পাইলটদের এই এলাকার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এভিয়েশন কোম্পানিগুলোকেও এটি নিশ্চিত করতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “একটি কন্ট্রোল অ্যান্ড কমান্ড সেন্টার স্থাপন করা উচিত। এই দুর্ঘটনার দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আজ ও আগামীকাল হেলিকপ্টার পরিষেবা চলবে না। যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত এই পরিষেবা বন্ধ থাকবে।”
নিরাপত্তা উদ্বেগ ও ডিজিসিএ’র পদক্ষেপ (kedarnath)
এই দুর্ঘটনা চারধাম যাত্রা রুটে গত ৪০ দিনে পঞ্চম হেলিকপ্টার দুর্ঘটনা। এর আগে, ৭ জুন গুপ্তকাশী-গৌরীকুণ্ড (kedarnath) মহাসড়কে একটি হেলিকপ্টার জরুরি অবতরণ করে, যেখানে পাঁচজন তীর্থযাত্রী নিরাপদে ছিলেন। এই ঘটনাগুলো উত্তরাখণ্ডের উচ্চ-উচ্চতার দুর্গম এলাকায় হেলিকপ্টার পরিষেবার নিরাপত্তা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। ডিজিসিএ চারধামে হেলিকপ্টার পরিষেবার ফ্রিকোয়েন্সি কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং কঠোর তদারকি ও আকস্মিক নিরীক্ষার পরিকল্পনা করছে।
পাকিস্তানের সঙ্গে তুলনা করে নিশিকান্তের তীব্র কটাক্ষ জয়রামকে
তীর্থযাত্রা স্থগিত ও ভক্তদের আবেদন
জঙ্গলচট্টির কাছে ধ্বংসাবশেষ ও পাথর পড়ার ঘটনা তীর্থযাত্রীদের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। রুদ্রপ্রয়াগ (kedarnath) পুলিশ জানিয়েছে, পথ পরিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত তীর্থযাত্রা বন্ধ থাকবে। ভক্তদের নিরাপদ স্থানে অপেক্ষা করতে বলা হয়েছে। এই ঘটনা এবং হেলিকপ্টার দুর্ঘটনা কেদারনাথ ধামের তীর্থযাত্রার নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনার ত্রুটি তুলে ধরেছে।
কেদারনাথ ধামের (kedarnath) তীর্থযাত্রা এবং হেলিকপ্টার পরিষেবার উপর এই দুই ঘটনা গভীর প্রভাব ফেলেছে। মুখ্যমন্ত্রী ধামীর নির্দেশে একটি কঠোর স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) তৈরির পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এই ঘটনা উত্তরাখণ্ডে তীর্থযাত্রা ও এভিয়েশন নিরাপত্তার গুরুত্ব তুলে ধরেছে। সরকার ও প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ এবং তদন্তের মাধ্যমে ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানোর আশা করা হচ্ছে।