দেশের লক্ষ লক্ষ কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী ও পেনশনভোগীদের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ আপডেট সামনে এসেছে। যদিও সরকার ইতিমধ্যেই ৮ম বেতন কমিশন (8th Pay Commission) গঠনের ঘোষণা দিয়েছে, তবুও এখনো পর্যন্ত এর আনুষ্ঠানিক গঠন এবং পরবর্তী কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে স্পষ্ট বার্তা আসেনি। এর ফলে কেন্দ্রীয় কর্মচারীরা কিছুটা ধোঁয়াশার মধ্যে রয়েছেন।
৮ম বেতন কমিশনের মাধ্যমে দেশের প্রায় ৫০ লাখ কর্মচারী এবং ৬৫ লাখেরও বেশি পেনশনভোগী সরাসরি উপকৃত হবেন। মূলত বেতন, ভাতা এবং পেনশন কাঠামোর আমূল পরিবর্তন এই কমিশনের মূল উদ্দেশ্য।
৮ম বেতন কমিশনের সম্ভাব্য বাস্তবায়নের সময়সীমা
সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, ৮ম বেতন কমিশন ২০২৬ সালের ১লা জানুয়ারি থেকে কার্যকর হতে পারে। তবে কয়েকটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, বাস্তবায়নের সময়সীমা ২০২৬-এর পরিবর্তে ২০২৭ সালেও গিয়ে পৌঁছাতে পারে, কারণ কমিশনের সুপারিশ কার্যকর করার আগে একাধিক ধাপ থাকে – যেমন সুপারিশ, পুনর্বিবেচনা, অনুমোদন এবং প্রয়োগ।
Fitment Factor: নতুন বেতন কাঠামোর মূল চাবিকাঠি
নতুন বেতন নির্ধারণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর (Fitment Factor)। এটি এমন একটি গুণক (Multiplier), যার মাধ্যমে পুরোনো বেসিক বেতনকে গুণ করে নতুন বেতন নির্ধারণ করা হয়।
ফর্মুলা
নতুন বেসিক বেতন = পুরোনো বেসিক বেতন × ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর
উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনও কর্মীর বর্তমান বেসিক বেতন হয় ২০,০০০ টাকা, এবং ৮ম কমিশনের ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর হয় ২.৮৬, তাহলে নতুন বেসিক বেতন হবে:
২০,০০০ টাকা × ২.৮৬ = ৫৭,২০০ টাকা
৭ম এবং ৮ম কমিশনের তুলনামূলক বিশ্লেষণ
৭ম বেতন কমিশনে ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর ছিল ২.৫৭। তখন কারও যদি ১০,০০০ টাকা বেসিক থাকত, সেটা হয়ে যেত ২৫,৭০০ টাকা। এখন যদি ৮ম কমিশনে ২.৮৬ ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর প্রয়োগ হয়, তাহলে সেই একই বেতন হতে পারে ২৮,৬০০ টাকা।
নিচে একটি তুলনামূলক টেবিল দেওয়া হল
বর্তমান বেসিক বেতন (৭ম কমিশন অনুযায়ী) ৮ম কমিশনে (২.৮৬ ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর) অনুযায়ী সম্ভাব্য নতুন বেসিক
₹18,000 ₹51,480
₹25,000 ₹71,500
₹30,000 ₹85,800
₹40,000 ₹1,14,400
₹50,000 ₹1,43,000
কমিশনের মূল সুপারিশ ও সম্ভাব্য পরিবর্তন
বিশেষজ্ঞদের মতে, ৮ম বেতন কমিশনে শুধু বেতন বৃদ্ধি নয়, বরং পারফরম্যান্স-রিলেটেড পে (PRP) ব্যবস্থা চালু হতে পারে। এর মাধ্যমে কর্মচারীদের কাজের মান অনুযায়ী অতিরিক্ত ভাতা বা ইনসেন্টিভ দেওয়া হবে।
তাছাড়াও, কেন্দ্রীয় কর্মচারীদের প্রধান সংগঠনগুলিও চায়, যেন সমস্ত স্তরের কর্মচারীদের জন্য একটি ইউনিফর্ম ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর রাখা হয়।
কর্মচারীদের প্রত্যাশা ও প্রতিক্রিয়া
কেন্দ্রীয় কর্মচারীদের মধ্যে এই কমিশন নিয়ে উচ্ছ্বাস যেমন রয়েছে, তেমনি আছে কিছুটা উদ্বেগও। কারণ এখনো পর্যন্ত সরকার কমিশনের আনুষ্ঠানিক গঠন, সদস্যদের নাম কিংবা রূপরেখা প্রকাশ করেনি। অনেকে চাইছেন কমিশনের কার্যক্রম দ্রুত শুরু হোক, যাতে ২০২৬ সালের নির্ধারিত সময়ে এটি বাস্তবায়ন সম্ভব হয়।
একজন রেল কর্মচারী বলেন, “৭ম কমিশনের পর আমাদের বেতন কিছুটা বেড়েছিল ঠিকই, তবে বর্তমান বাজারদরের তুলনায় সেটা পর্যাপ্ত নয়। আমরা চাই ৮ম কমিশন বাস্তব চাহিদা অনুযায়ী বেতন কাঠামো নির্ধারণ করুক।”
৮ম বেতন কমিশনের কার্যকারিতা ও সুপারিশ শুধু বেতন বৃদ্ধিতে সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং এটি হবে একটি বিস্তৃত আর্থিক সংস্কার প্রক্রিয়া। বেতন কাঠামোর পাশাপাশি, কর্মচারীদের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা, কর্মক্ষমতা এবং দক্ষতাকেও বিবেচনায় নেওয়া হবে বলে আশা করা যায়।
সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে এখন নজর রাখছে লক্ষ লক্ষ কেন্দ্রীয় কর্মচারী এবং পেনশনভোগী। কবে গঠিত হবে কমিশন, কী থাকবে সুপারিশে, কতটা বাড়বে বেতন—এই সব প্রশ্নের উত্তর সময়ই দেবে। তবে আশা করা যায়, ৮ম বেতন কমিশন কেন্দ্রীয় কর্মচারীদের জন্য এক নতুন অর্থনৈতিক স্বস্তি বয়ে আনবে।