ভারতীয় বিমান বাহিনীর গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভাংশু শুক্লা (shubhanshu) আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) অ্যাক্সিওম স্পেসের চতুর্থ বেসরকারি মহাকাশচারী মিশন (অ্যাক্স-৪) এর অংশ হিসেবে যাত্রা করতে প্রস্তুত। এই ঐতিহাসিক মিশন ভারত ও নাসার মধ্যে মহাকাশ সহযোগিতার একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত।
মিশনটি ১০ জুন ভারতীয় সময় সকাল ৮:২২ মিনিটে ফ্লোরিডার নাসার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে স্পেসএক্সের ফ্যালকন-৯ রকেটে উৎক্ষেপণের জন্য নির্ধারিত হয়েছে। শুভাংশুর পরিবার ও প্রতিবেশীরা গর্ব ও উৎসাহে উদ্বেল, এবং তারা তাঁর নিরাপদ ও সফল মিশনের জন্য প্রার্থনা করছেন।
পরিবারের গর্ব ও আবেগ
শুভাংশুর (shubhanshu) মা আশা শুক্লা সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তাঁর আবেগপ্রবণ অনুভূতি প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “আমরা ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করছি যেন তাঁর মিশন সফল হয় এবং তিনি ভারতের মুখ উজ্জ্বল করেন। আমরা ইতিমধ্যেই তাঁর জন্য গর্বিত। আমরা তাঁর সুস্থ যাত্রা ও নিরাপদ প্রত্যাবর্তনের জন্য কামনা করছি। সবাই বলছে তারা তাঁর জন্য গর্বিত, এটা আমাদের খুব খুশি করছে। আমি তাঁকে শুভকামনা জানিয়েছি এবং বলেছি আমরা তাঁর জন্য অপেক্ষা করব।”
তাঁর বাবা শম্ভু দয়াল শুক্লাও (shubhanshu) একই আবেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি এএনআই-কে বলেন, “আমরা তাঁর জন্য খুব গর্বিত, শুধু পরিবার নয়, গোটা দেশ। ৪০ বছর পর দেশের মহাকাশ মিশন পাঠানো হচ্ছে। আমার ছেলের কথা সবাই বলছে, তার পোস্টার সর্বত্র লাগানো হচ্ছে, এটা ভালো লাগছে।
মিশনের জন্য আর মাত্র ২৪ ঘণ্টা বাকি। আমরা ক্রমাগত ঈশ্বরের কাছে তাঁর মঙ্গল ও মিশনের সাফল্যের জন্য প্রার্থনা করছি।” তিনি আরও বলেন, “তিনি যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত। তিনি দীর্ঘদিন ধরে এই মিশনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আমাদের মোটেও ভয় নেই। তিনি সবসময় তাঁর কাজ নিখুঁতভাবে সম্পন্ন করেন। তিরুবনন্তপুরমে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁকে সম্মানিত করেছিলেন, আমরাও সেখানে ছিলাম, এটা আমাদের জন্য গর্বের মুহূর্ত ছিল।”
নির্বাচন ছাড়াই নেতৃত্ব পরিবর্তন! সচিব পদে মনোনয়ন দেবেন সৃঞ্জয়
প্রতিবেশীদের উৎসাহ ও গর্ব (shubhanshu)
লখনউয়ের ত্রিবেণী নগরে শুভাংশুর (shubhanshu)পৈতৃক বাড়ি অভিনন্দনমূলক পোস্টারে সজ্জিত। পুরো প্রতিবেশী সম্প্রদায় উৎসাহে মুখর। স্থানীয়রা বলছেন, তারা এই দিনটির জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন এবং শুভাংশুর ফিরে আসার পর তার জন্য একটি জমকালো স্বাগত অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করছেন। একজন প্রতিবেশী বলেন, “শুভাংশু আমাদের সবার জন্য রোল মডেল। তাঁর জন্য আমাদের এলাকার নাম গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।”
মিশনের প্রস্তুতি ও গুরুত্ব
স্পেসএক্স তাদের অফিসিয়াল এক্স হ্যান্ডেলে জানিয়েছে যে, অ্যাক্স-৪ ক্রু এবং স্পেসএক্স টিম মঙ্গলবার (১০ জুন) নির্ধারিত উৎক্ষেপণের আগে লঞ্চ দিবসের সম্পূর্ণ রিহার্সাল সফলভাবে সম্পন্ন করেছে। অ্যাক্সিওম স্পেস তাদের এক্স হ্যান্ডেলে ঘোষণা করেছে যে, ভারতের প্রতিনিধিত্বকারী গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভাংশু শুক্লা (shubhanshu) এই মিশনের পাইলট হিসেবে অংশ নিচ্ছেন। ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো) এবং আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনও তাদের অফিসিয়াল এক্স হ্যান্ডেলে এই মিশনের কথা উল্লেখ করেছে।
অ্যাক্সিওম স্পেসের মতে, অ্যাক্স-৪ মিশন ভারত, পোল্যান্ড এবং হাঙ্গেরির জন্য মানব মহাকাশযানে ফিরে আসার একটি মাইলফলক। এই তিনটি দেশের জন্য এটি ৪০ বছরেরও বেশি সময় পর প্রথম সরকার-পৃষ্ঠপোষক মহাকাশ মিশন।
যদিও এটি এই দেশগুলির ইতিহাসে দ্বিতীয় মানব মহাকাশ মিশন, তবে এই প্রথমবার তারা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে মিশন পরিচালনা করবে। এই ঐতিহাসিক মিশনটি দেখায় যে অ্যাক্সিওম স্পেস কীভাবে নিম্ন-পৃথিবী কক্ষপথে প্রবেশাধিকার পুনরায় সংজ্ঞায়িত করছে এবং বিশ্বব্যাপী জাতীয় মহাকাশ কর্মসূচিকে উন্নীত করছে।
মিশনের বিশেষত্ব
অ্যাক্স-৪ মিশনের ক্রুতে ভারত, পোল্যান্ড এবং হাঙ্গেরির সদস্যরা রয়েছেন। এটি এই দেশগুলির জন্য আইএসএস-এ প্রথম মিশন এবং ৪০ বছরেরও বেশি সময় পর দ্বিতীয় সরকার-পৃষ্ঠপোষক মানব মহাকাশ মিশন। শুভাংশু শুক্লা (shubhanshu) এই মিশনে পাইলট হিসেবে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করছেন, যা ভারতের মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
শুভাংশুর (shubhanshu) এই যাত্রা ভারতের মহাকাশ কর্মসূচির জন্য একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করছে। ইসরোর সঙ্গে নাসা এবং অ্যাক্সিওম স্পেসের এই সহযোগিতা ভারতের মহাকাশ গবেষণার ক্ষমতাকে বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরছে। শুভাংশুর এই মিশন শুধু তাঁর পরিবার বা লখনউয়ের জন্য নয়, গোটা দেশের জন্য গর্বের বিষয়।
সমাজের প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ
লখনউয়ের ত্রিবেণী নগরের বাসিন্দারা শুভাংশুকে (shubhanshu) একজন অনুপ্রেরণাদায়ী ব্যক্তিত্ব হিসেবে দেখছেন। তাঁর এই অর্জন তরুণ প্রজন্মের কাছে বিজ্ঞান ও মহাকাশ গবেষণার প্রতি আগ্রহ জাগিয়ে তুলছে। স্থানীয়রা বলছেন, তাঁর সাফল্য তাদের এলাকার নাম উজ্জ্বল করেছে এবং তারা তাঁর ফিরে আসার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন।
শুভাংশুর (shubhanshu) এই মিশন ভারতের মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। তাঁর সাফল্য ভারতীয় তরুণদের মধ্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহ বাড়াবে এবং দেশের মহাকাশ কর্মসূচিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে। তাঁর পরিবার, প্রতিবেশী এবং গোটা দেশ এখন তাঁর নিরাপদ প্রত্যাবর্তন ও মিশনের সাফল্যের জন্য প্রার্থনা করছে।