ময়দান যেন ফের প্রাণ ফিরে পেয়েছে। বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরে মোহনবাগান (Mohun Bagan) ক্লাব চত্বর সরগরম, উত্তেজনায় টগবগ করছে গোটা সবুজ-মেরুন শিবির। কারণ একটাই, মোহনবাগান ক্লাব নির্বাচন (Mohun Bagan Election)। প্রাক্তন ফুটবলার থেকে বর্তমান কর্তা, তরুণ সদস্য থেকে প্রবীণ সমর্থক সবার নজর ক্লাবের নতুন কমিটি গঠনের দিকে। দীর্ঘ টানাপোড়েন, দলে দলে প্রচার সভা, সদস্যদের সঙ্গে মিটিং শেষে অবশেষে আজ, সোমবার ৯ জুন, নির্বাচনী উত্তেজনার অবসান ঘটতে চলেছে।
গত কয়েকদিন ধরে যেভাবে দু’পক্ষ সৃঞ্জয় বোস (Srinjoy Bose) ও দেবাশিস দত্ত শিবির—নির্বাচনী প্রচারে মাঠে নেমেছিলেন, তাতে অনেকেই ভেবেছিলেন যে এবার ক্লাবের ইতিহাসে অন্যতম রুদ্ধশ্বাস নির্বাচন হতে চলেছে। কিন্তু মোহনের ইতিহাস যেভাবে সমঝোতার সৌন্দর্যকে বারবার সম্মান জানিয়েছে, ঠিক তেমনটাই দেখা গেল আবারও। ক্লাবের ভবিষ্যতের কথা ভেবে দুই পক্ষই শেষমেশ নির্বাচন না করে সমঝোতার রাস্তায় হেঁটেছেন বলে জানা গিয়েছে। এর ফলে এবার সম্ভবত একটি মাত্র প্যানেল মনোনয়ন জমা পড়বে।
সমঝোতা অনুযায়ী, মোহনবাগানের সচিব (Secretary) পদে ফিরছেন সৃঞ্জয় বোস। তাঁর অভিজ্ঞতা ও দক্ষতায় ক্লাবের প্রশাসনিক স্তরে আগেও স্থিরতা এসেছিল, এবার তাঁর কাঁধেই পড়ছে আবার সেই দায়িত্ব। অন্যদিকে, দেবাশিস দত্ত হবেন ক্লাবের সভাপতি। যেহেতু মোহনবাগান ক্লাবে সভাপতি পদের জন্য সরাসরি ভোট হয় না, তাই সৃঞ্জয় বোসের নেতৃত্বে গঠিত কার্যকরী কমিটিই দেবাশিস দত্তকে সভাপতি হিসেবে মনোনীত করবে।
ফুটবল বিশ্বের চোখে জল, পর্তুগালের জয়ে অবসরের ইঙ্গিত রোনাল্ডোর
নির্বাচনী বোর্ডের চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অসীম কুমার রায় আগেই জানিয়েছিলেন, আজ ৯ জুন বিকেল তিনটে থেকে সাড়ে তিনটার মধ্যে মনোনয়ন পেশের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। এরপর মঙ্গলবার ও বুধবার জমা পড়া মনোনয়নপত্রগুলি খতিয়ে দেখা হবে। যদিও কার্যত যেহেতু একটি মাত্র প্যানেল জমা পড়তে চলেছে, তাই ১২ ও ১৩ জুনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের পর্বটিও হতে চলেছে অনেকটাই আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।
আজ বিকেলে সচিব পদে মনোনয়ন জমা দিতে ক্লাবে যাবেন সৃঞ্জয় বোস। সঙ্গে থাকবেন অন্যান্য সদস্যরাও, যাঁরা কার্যকরী কমিটির বাকি ২১টি পদে মনোনয়ন জমা দেবেন। দীর্ঘদিন ধরে চলা প্রচার-পর্ব, সামাজিক মাধ্যমে ক্যাম্পেন, সদস্যদের মধ্যে চলা গোপন আলোচনার অবসান ঘটিয়ে আজই পরিস্কার হয়ে যাবে আগামী দিনে কারা মোহনবাগানের নেতৃত্বে থাকবেন।
সৃঞ্জয় বোস ও দেবাশিস দত্তর মধ্যে এই সমঝোতা মোহনবাগানের ভবিষ্যতের পক্ষে ইতিবাচক বার্তা বলেই মনে করছেন ক্লাব-সংশ্লিষ্ট অনেকে। কেউ কেউ বলছেন, এই সিদ্ধান্ত ‘মোহনবাগান ঐতিহ্যের’ সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। একাধিক কর্তা এমনও মত দিয়েছেন যে, ক্লাবের মতো ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানে প্রতিযোগিতার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ সহযোগিতামূলক প্রশাসন।
তবে সচিব ও সভাপতির নাম চূড়ান্ত হলেও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদে কারা আসছেন, তা নিয়ে কিছুটা কৌতূহল রয়েই গিয়েছে। প্রাক্তন তারকা ফুটবলারদের কেউ কি এবার কমিটিতে জায়গা পাচ্ছেন? না কি পুরোনো অভিজ্ঞ কর্তারাই থাকবেন? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর মিলবে আজ বিকেলে, যখন পুরো প্যানেল প্রকাশ্যে আসবে।
সব মিলিয়ে, আজকের দিনটা মোহনবাগান ক্লাবের ইতিহাসে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা হতে চলেছে। প্রায় নাটকীয় রূপ নিয়েছিল যে নির্বাচন, তা শেষমেশ রূপ নিচ্ছে সমঝোতার মঞ্চে। মাঠের লড়াই নয়, এবার পর্দার অন্তরালে রচিত হচ্ছে ক্লাব পরিচালনার নীতিমালা। সেই পথে সৃঞ্জয় বোস ও দেবাশিস দত্তর একসঙ্গে হাঁটা যে ভবিষ্যতের জন্য শুভ ইঙ্গিত তা বলা যেতেই পারে।