স্বস্তিতে Infosys! ৩২,৪০৩ কোটি টাকার জিএসটি মামলা বন্ধ

ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা ইনফোসিস (Infosys) সম্প্রতি কেন্দ্রীয় পরোক্ষ কর গোয়েন্দা দফতর (DGGI) থেকে একটি বড় ধরনের স্বস্তি পেল। সংস্থার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া ৩২,৪০৩…

Infosys to Hire

ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা ইনফোসিস (Infosys) সম্প্রতি কেন্দ্রীয় পরোক্ষ কর গোয়েন্দা দফতর (DGGI) থেকে একটি বড় ধরনের স্বস্তি পেল। সংস্থার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া ৩২,৪০৩ কোটি টাকার জিএসটি দাবিকে আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ ঘোষণা করেছে DGGI। এই কর দাবি ছিল ২০১৭ সাল থেকে ২০২২ সালের মধ্যে সংস্থার বিদেশি শাখা থেকে পরিষেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে রিভার্স চার্জ মেকানিজম অনুযায়ী আইজিএসটি (IGST) পরিশোধ না করার অভিযোগে।

কর-বিবাদের অবসান
ইনফোসিস জানিয়েছে, তারা সংশ্লিষ্ট সময়সীমার জন্য জিএসটি গোয়েন্দা দফতর (DGGI) থেকে একটি প্রি-শোকজ নোটিশ পেয়েছিল ২০২৪ সালের জুলাই মাসে। ওই নোটিশে জুলাই ২০১৭ থেকে মার্চ ২০২২ পর্যন্ত সময়কালে সম্ভাব্য ৩২,৪০৩ কোটি টাকার কর ফাঁকি ও অনুপালনের অভিযোগ আনা হয়েছিল।

   

সংস্থা একটি নিয়মিত দাখিলকৃত স্টক এক্সচেঞ্জ ফাইলিং-এ জানায়, “DGGI থেকে আজ প্রাপ্ত চিঠির মাধ্যমে এই বিষয়টি চূড়ান্তভাবে বন্ধ হয়েছে।” অর্থাৎ, এই কর বিবাদ আর আইনগত বা প্রশাসনিক স্তরে এগোবে না।

ইনফোসিস আরও জানিয়েছে, ২০১৭–১৮ আর্থিক বছরের জন্য তারা আগেই ২০২৪ সালের আগস্টে বন্ধ সংক্রান্ত যোগাযোগ পেয়েছিল। এবার জুলাই ২০১৭ থেকে মার্চ ২০২২ পর্যন্ত বাকি আর্থিক বছরগুলোর জন্যও পুরো বিষয়টি নিষ্পত্তি হল।

এই কর-বিতর্ক দীর্ঘদিন ধরে Infosys-এর উপর এক ধরনের চাপ তৈরি করেছিল, বিশেষ করে বিদেশি পরিষেবার ক্ষেত্রে জটিল রিভার্স চার্জ কাঠামোর প্রয়োগ ও ব্যাখ্যার কারণে। এই দাবির নিষ্পত্তি সংস্থার ব্যবসা পরিচালনায় স্বচ্ছতা আনবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

সিইও-র বেতনে নজরকাড়া বৃদ্ধি
কর-বিতর্কের নিষ্পত্তির পাশাপাশি সংস্থার বার্ষিক রিপোর্টেও উঠে এসেছে এক উল্লেখযোগ্য দিক—সিইও সলিল পাড়েখের (Salil Parekh) বেতনে ২২ শতাংশের বিশাল বৃদ্ধি। গত আর্থিক বছরে তাঁর মোট বার্ষিক পারিশ্রমিক দাঁড়িয়েছে ৮০.৬ কোটি টাকা, যা আগের বছরের ৬৬.২ কোটি টাকার তুলনায় অনেকটাই বেশি।

এই বেতনের মধ্যে মূল বেতন ছিল ৭.৪৫ কোটি টাকা, পারফরম্যান্স বোনাস ছিল ২৩.১ কোটি টাকা এবং স্টক-লিঙ্কড পার্কুইজিট ছিল ৪৯.৫ কোটি টাকা। সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, FY25-এ অধিক পরিমাণে Restricted Stock Units (RSUs) রিডিম করায় এই বেতনের অংক অনেকটাই বেড়ে গেছে।
এই বেতন বৃদ্ধির ফলে এখন সলিল পাড়েখ ভারতের আইটি ইন্ডাস্ট্রির সর্বোচ্চ বেতনপ্রাপ্ত সিইও-দের মধ্যে শীর্ষে অবস্থান করছেন।

Advertisements

তুলনামূলক বিশ্লেষণ:
ভারতের তিন প্রধান আইটি সংস্থার সিইওদের মধ্যে পারিশ্রমিক তুলনা করলে দেখা যায়—

  • TCS-এর সিইও কে কৃত্বিবাসান FY25-এ মোট ২৬.৫ কোটি টাকা বেতন পেয়েছেন, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ৪.৬ শতাংশ বৃদ্ধি।
  • Wipro-র সিইও শ্রীনি পালিয়া পেয়েছেন ৫৩.৬ কোটি টাকা, যা ১০ শতাংশ বৃদ্ধির প্রতিফলন।

এই তুলনায় ইনফোসিসের সিইও-র ২২% বেতনবৃদ্ধি এক দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ। যদিও বিভিন্ন বোনাস, শেয়ার বেনিফিট এবং পারফরম্যান্স ইনসেন্টিভ বিবেচনায় রেখে এই পারিশ্রমিক নির্ধারণ হয়েছে, তথাপি এতে শেয়ারহোল্ডার ও বিশ্লেষকদের মধ্যে কিছু প্রশ্নও উঠে আসছে, বিশেষত যখন তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পে চ্যালেঞ্জ এবং কর্মী ছাঁটাই নিয়ে বিতর্ক চলছে।

শিল্প মহলের প্রতিক্রিয়া
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই কর-মুক্তি সংস্থার জন্য একটি বড় ইতিবাচক সঙ্কেত। দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা কর দাবি বন্ধ হওয়ায় সংস্থা এখন ভবিষ্যৎ বিনিয়োগ ও সম্প্রসারণ পরিকল্পনায় আরও মনোনিবেশ করতে পারবে।

অন্যদিকে সিইও-র বেতন বৃদ্ধিকে কেউ কেউ সফল নেতৃত্বের পুরস্কার বলে মনে করলেও, আবার কেউ কেউ বলছেন যে সাধারণ কর্মীদের তুলনায় এই বেতন ব্যবধান প্রশ্ন তুলছে কর্পোরেট ভারসাম্যের বিষয়ে।

Infosys-এর জন্য এই সপ্তাহটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ও ইতিবাচক হিসেবে ধরা যেতে পারে। একদিকে কর-বিবাদ থেকে চূড়ান্ত স্বস্তি, অন্যদিকে নেতৃত্বের পুরস্কারস্বরূপ সিইও-র বেতনবৃদ্ধি, সব মিলিয়ে সংস্থার ভাবমূর্তি ও ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা দুটোই আরও মজবুত হয়েছে বলেই মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।