EMI কমলে কি আবাসন বাজারে হবে চাহিদার বিস্ফোরণ? সিদ্ধান্তের আগে নজরে RBI

ভারতের রিজার্ভ ব্যাংক (RBI) এই সপ্তাহেই তাদের আর্থিক নীতিমালা কমিটির (MPC) বৈঠকে বসতে চলেছে। বাজার বিশ্লেষক ও শিল্প বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বৈঠকে সুদের হার কমানোর…

RBI’s Rate Cut Boost Affordable Housing Demand

ভারতের রিজার্ভ ব্যাংক (RBI) এই সপ্তাহেই তাদের আর্থিক নীতিমালা কমিটির (MPC) বৈঠকে বসতে চলেছে। বাজার বিশ্লেষক ও শিল্প বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বৈঠকে সুদের হার কমানোর সম্ভাবনা প্রবল, এবং তার প্রভাব পড়তে পারে দেশের আবাসন খাতে — বিশেষ করে সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসনের ক্ষেত্রে, যেখানে সুদের হারের সামান্য পরিবর্তনই বড় প্রভাব ফেলে।

চলতি অর্থবর্ষে (FY2025) দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন (GDP) ৬.৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং মুদ্রাস্ফীতিও অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। এই অনুকূল পরিস্থিতিতে, শুক্রবার (৬ জুন) রিজার্ভ ব্যাংক ২৫ বেসিস পয়েন্ট (bps) হারে রেপো রেট কমাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

   

নাইট ফ্র্যাঙ্ক ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান এবং ম্যানেজিং ডিরেক্টর শিশির বাইজাল বলেন, “রিজার্ভ ব্যাংকের পক্ষে হার কমানোর পক্ষে শক্তিশালী যুক্তি হলো তারল্য পরিস্থিতির উন্নতি। বর্তমানে বাজারে প্রায় ৩.৬ লক্ষ কোটি টাকার উদ্বৃত্ত তারল্য রয়েছে। এর ফলে নীতিগত হারের পরিবর্তনের প্রভাব অর্থনীতিতে আরও কার্যকরভাবে পৌঁছাতে পারে। পাশাপাশি, সরকারি বন্ডের উপর সুদের হার কমে আসাও স্পষ্ট করে যে বিনিয়োগকারীরা RBI-এর মুদ্রাস্ফীতি এবং তারল্য ব্যবস্থাপনায় আস্থা রাখছেন।” রেপো রেট ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমলে, বর্তমান মুদ্রানীতিতে মোট ৭৫ বেসিস পয়েন্ট কমানো হবে।

তবে আসল চ্যালেঞ্জ: হারের পরিবর্তন কতটা ‘ট্রান্সমিট’ হবে?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রেপো রেট কমলে তার সরাসরি প্রভাব গ্রাহকের ওপর পড়ে না, যতক্ষণ না বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো তাদের ঋণের উপর সুদের হার কমায়। যদিও কিছু বাণিজ্যিক ব্যাংক ইতিমধ্যেই তাদের MCLR এবং বেস রেট কিছুটা কমিয়েছে, সেই পরিবর্তন এখনও অতি সামান্য। এখন বাজারে তারল্য স্থিতিশীল হওয়ায়, ব্যাংকগুলোর সামনে সুযোগ রয়েছে নীতিগত হার কমানোর সুফলকে দ্রুত গ্রাহকদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার।

শিশির বাইজাল বলেন, “সুদের হার কমানো যতটা গুরুত্বপূর্ণ, তার থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ তা কত দ্রুত এবং কতটা ব্যাপকভাবে গ্রাহকদের কাছে পৌঁছচ্ছে। এতে শুধুমাত্র আবাসন নয়, ভোক্তা চাহিদা ও বেসরকারি বিনিয়োগেও গতি আসবে। এর মাধ্যমে সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও ত্বরান্বিত হবে।”

Advertisements

আশা বাড়াচ্ছে আবাসন খাত, বিশেষ করে সাশ্রয়ী আবাসনে
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাশ্রয়ী আবাসন খাত হল এমন একটি ক্ষেত্র যেখানে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষ প্রধান ক্রেতা। এদের মাসিক আয়ের একটা বড় অংশ EMI পরিশোধে ব্যয় হয়। সেক্ষেত্রে, মাত্র ২৫–৫০ বেসিস পয়েন্ট সুদের হার কমলেই তাদের মাসিক EMI-তে উল্লেখযোগ্য স্বস্তি পাওয়া যায়।
এটা বাড়ির ক্রয় সিদ্ধান্তে বড় ভূমিকা নিতে পারে। ফলে, এই খাতে নতুন চাহিদা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।

Crisil-এর সাম্প্রতিক একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, FY26 অর্থবর্ষে RBI আরও ৫০ বেসিস পয়েন্ট হারে রেপো রেট কমাতে পারে। এরই মধ্যে চলতি অর্থবর্ষে এপ্রিল পর্যন্ত ৫০ বেসিস পয়েন্ট কাটা হয়েছে। ফলে আগামী সময়ে আবাসন ঋণের সুদ আরও কমার সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে।

কীভাবে এই হার কমানো প্রভাব ফেলতে পারে রিয়েল এস্টেট খাতে?
1. EMI কমলে সাধারণ ক্রেতারা আর্থিকভাবে স্বস্তি পাবেন এবং আবাসন কেনার সিদ্ধান্ত নিতে আগ্রহী হবেন।
2. নতুন প্রজেক্টে চাহিদা বাড়বে, বিশেষ করে টায়ার-২ ও টায়ার-৩ শহরে, যেখানে সাশ্রয়ী আবাসনের চাহিদা বেশি।
3. বিনিয়োগকারীরাও আগ্রহ দেখাবেন, কারণ বাজারে আস্থার পরিবেশ তৈরি হবে।
রিজার্ভ ব্যাংকের এই সম্ভাব্য রেপো রেট হ্রাস শুধুমাত্র আর্থিক সিদ্ধান্ত নয়, এটি আবাসন খাতকে নতুন গতি দেওয়ার একটি সম্ভাব্য উদ্যোগ। তবে সেই গতি কতটা বাস্তবে পরিণত হবে, তা নির্ভর করছে ব্যাংকগুলির উপর — তারা কত দ্রুত এবং কতটা হারে এই সুদের হ্রাস গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দিতে পারে।

৬ জুনের RBI-এর ঘোষণা নিয়ে তাই শুধু অর্থনৈতিক মহল নয়, আবাসন ক্রেতা ও নির্মাতারাও চরম আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। এক টুকরো স্বস্তি এনে দিতে পারে এক ছাঁট সুদের হার!