শেয়ার বাজারের আয় ITR-এ রিপোর্ট করবেন কীভাবে? আয়কর বিশেষজ্ঞের বিশদ ব্যাখ্যা

আয়কর দফতর ২০২৪-২৫ অর্থবছরের (মূল্যায়ন বছর ২০২৫-২৬) জন্য আয়কর রিটার্ন (ITR) দাখিল প্রক্রিয়া শুরু করেছে। বর্তমানে শুধুমাত্র Excel Utilities-এর মাধ্যমে রিটার্ন দাখিলের সুযোগ চালু হয়েছে…

How to Report Stock Market Income in ITR for AY 2025-26: Expert Guide

আয়কর দফতর ২০২৪-২৫ অর্থবছরের (মূল্যায়ন বছর ২০২৫-২৬) জন্য আয়কর রিটার্ন (ITR) দাখিল প্রক্রিয়া শুরু করেছে। বর্তমানে শুধুমাত্র Excel Utilities-এর মাধ্যমে রিটার্ন দাখিলের সুযোগ চালু হয়েছে এবং ইতিমধ্যে ৮৬,৪৮২টি রিটার্ন দাখিল হয়েছে এই মাধ্যম ব্যবহার করে। অনলাইন ITR দাখিলের অপশন এখনও চালু হয়নি।

সাধারণ বেতনভুক্ত করদাতাদের জন্য বিশেষ পরামর্শ—Form 16 হাতে পাওয়ার আগে রিটার্ন দাখিল না করাই বাঞ্ছনীয়।

   

এছাড়াও, গত কয়েক বছরে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ব্যাপক হারে বেড়েছে। ফলে অনেক বেতনভুক্ত ব্যক্তি এখন শেয়ার বাজার থেকে আয় (যেমন—লাভ, লভ্যাংশ, F&O ট্রেডিং ইত্যাদি) সঠিকভাবে কীভাবে রিপোর্ট করবেন, তা নিয়ে বিভ্রান্তিতে রয়েছেন।

মুম্বইয়ের খ্যাতনামা চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট সুরেশ সুরানা ব্যাখ্যা করেছেন, কীভাবে ২০২৫ সালের আয়কর রিটার্নে বিভিন্ন ধরনের শেয়ার বাজারের আয় রিপোর্ট করতে হবে।

শেয়ার বাজারের আয়ের ধরন ও কর সংক্রান্ত নিয়ম

১. ডেলিভারি ভিত্তিক শেয়ার বিক্রি:
যদি ১২ মাসের বেশি সময় ধরে কোনো তালিকাভুক্ত শেয়ার ধরে রেখে বিক্রি করা হয়, তাহলে এটি দীর্ঘমেয়াদি মূলধনী লাভ (LTCG) হিসেবে গণ্য হয় এবং ১.২৫ লক্ষ টাকার বেশি লাভের উপর ১০% হারে কর (২৩ জুলাই, ২০২৪ থেকে ১২.৫%) ধার্য হয়।

১২ মাসের কম সময়ে বিক্রি করলে, এটি স্বল্পমেয়াদি মূলধনী লাভ (STCG) হিসেবে গণ্য হয় এবং ১৫% হারে কর (২৩ জুলাই, ২০২৪ থেকে ২০%) প্রযোজ্য হয়।

২. ইনট্রাডে ট্রেডিং:
এটি অনুমানভিত্তিক (speculative) ব্যবসায়িক আয় হিসেবে বিবেচিত হয় এবং ব্যক্তির প্রযোজ্য স্ল্যাব অনুযায়ী কর ধার্য হয়।

৩. Futures & Options (F&O):
এটি অ-অনুমানভিত্তিক (non-speculative) ব্যবসায়িক আয় হিসেবে গণ্য হয় এবং স্ল্যাব রেট অনুসারে কর প্রযোজ্য।

৪. লভ্যাংশ আয়:
ভারতীয় কোম্পানির কাছ থেকে পাওয়া লভ্যাংশ ‘অন্যান্য উৎস থেকে আয়’ হিসেবে বিবেচিত হয় এবং ব্যক্তিগত স্ল্যাব অনুযায়ী কর প্রযোজ্য। এছাড়া Section 194 অনুযায়ী TDS কাটা হতে পারে।

কোন ITR ফর্মটি বেছে নেবেন?
ITR-1: শুধুমাত্র বেতন, একটিমাত্র গৃহ সম্পত্তি এবং অন্যান্য সাধারণ আয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এছাড়াও ১.২৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত LTCG থাকলে ITR-1 ব্যবহার করা যায়।

ITR-2: শুধুমাত্র মূলধনী লাভ (STCG/LTCG) এবং বেতন বা গৃহসম্পত্তির আয়ের ক্ষেত্রে, যেখানে ব্যবসায়িক আয় নেই, সেখানে এই ফর্ম প্রযোজ্য।

Advertisements

ITR-3: যারা F&O বা ইনট্রাডে ট্রেডিং করেন, তাদের আয় ‘ব্যবসায়িক আয়’ হিসেবে গণ্য হওয়ায় ITR-3 ব্যবহার বাধ্যতামূলক।

ITR-4 (Sugam): যদি F&O বা ইনট্রাডে ট্রেডিং-এর টার্নওভার ২/৩ কোটি টাকার মধ্যে থাকে এবং করদাতা অনুমানভিত্তিক করপদ্ধতি (Section 44AD) গ্রহণ করেন, তাহলে ITR-4 ব্যবহার করা যায়। তবে মূলধনী লাভ থাকলে এটি ব্যবহারযোগ্য নয়।

বিভিন্ন আয় কীভাবে রিপোর্ট করবেন?

১. মূলধনী লাভ (Capital Gains):
শেয়ার কেনা ও বিক্রির বিস্তারিত (ISIN, কোম্পানির নাম, কেনা ও বিক্রির তারিখ, মূল্য, খরচ ইত্যাদি) ‘Capital Gains’ অংশে রিপোর্ট করতে হবে।

২. ইনট্রাডে ট্রেডিং (Speculative Income):
এটি ‘Profits and Gains from Business or Profession’ অংশে রিপোর্ট করতে হবে। লাভ ও ক্ষতির ভিত্তিতে মোট টার্নওভার দেখাতে হবে। ইন্টারনেট বিল, ব্রোকারেজ, অ্যাডভাইসরি ফি ইত্যাদি খরচ ডিডাকশন হিসেবে দেখানো যাবে।

যদি টার্নওভার ১ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায় (বা নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে ১০ কোটি), তবে Section 44AB অনুযায়ী ট্যাক্স অডিট প্রয়োজন হতে পারে।

৩. F&O ট্রেডিং (Non-Speculative Business Income):
F&O থেকে আয়ও ব্যবসায়িক আয় হিসেবে রিপোর্ট করতে হবে। মোট লাভ ও ক্ষতির সমষ্টি ভিত্তিতে টার্নওভার নির্ধারণ করতে হবে। Section 44AD অনুসারে ৬% বা ৮% লাভ ধরে অনুমানভিত্তিক কর প্রদান করা যেতে পারে।

৪. লভ্যাংশ আয়:
‘Income from Other Sources’ অংশে লভ্যাংশের মোট পরিমাণ রিপোর্ট করতে হবে। Form 26AS ও AIS অনুযায়ী মিলিয়ে নিতে হবে। Section 57 অনুযায়ী ২০% পর্যন্ত সুদের খরচ ডিডাকশন হিসাবে দেখানো যায়।

রিটার্ন দাখিলের সময়সীমা

  • যাদের ট্যাক্স অডিট প্রযোজ্য নয়: ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
  • যাদের ট্যাক্স অডিট প্রযোজ্য: ৩১ অক্টোবর, ২০২৫

২০২৫ সালের ITR দাখিলের ক্ষেত্রে শেয়ার বাজারে আয়কারী বেতনভুক্ত করদাতাদের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যে, সঠিক ফর্ম নির্বাচন করে এবং আয় যথাযথভাবে রিপোর্ট করে রিটার্ন দাখিল করা হোক। ভুল ফর্মে দাখিল করলে রিটার্ন অবৈধ হতে পারে, এমনকি জরিমানাও ধার্য হতে পারে। তাই অভিজ্ঞ কর পরামর্শদাতার সাহায্য নেওয়া সবসময়ই বাঞ্ছনীয়।