প্রতি বছর ৩১ মে বিশ্বব্যাপী পালিত হয় বিশ্ব তামাকবিরোধী দিবস (World No Tobacco Day), যার মূল উদ্দেশ্য হলো মানুষকে তামাকজাত দ্রব্যের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতন করা। স্বাস্থ্য ঝুঁকির পাশাপাশি ধূমপান ও তামাক সেবনের ফলে যে আর্থিক ক্ষতি হয়, তা অনেকেই জানেন না। স্বাস্থ্য বিমা ও টার্ম ইন্স্যুরেন্সের ক্ষেত্রে ধূমপায়ীদের গুণতে হয় বেশি প্রিমিয়াম, যা কখনও কখনও দ্বিগুণ পর্যন্ত হতে পারে।
ভারতে তামাক ব্যবহারের চিত্র
গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে ২০১৬-১৭ অনুযায়ী, ভারতে ১৫ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সী প্রায় ২৮.৬% প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ কোনো না কোনোভাবে তামাক ব্যবহার করেন। প্রতি দশজন প্রাপ্তবয়স্কের একজন ধূমপান করেন। এই পরিসংখ্যানই প্রমাণ করে যে ভারতে তামাক ব্যবহারের হার এখনও উদ্বেগজনকভাবে বেশি।
বিমায় ধূমপানের প্রভাব: দ্বিগুণ খরচ
ধূমপানের কারণে কেবল স্বাস্থ্য নয়, বিমা খাতেও বাড়ে খরচ। টার্ম ইন্স্যুরেন্স বা জীবন বিমার ক্ষেত্রে ধূমপায়ীদের জন্য প্রিমিয়াম অনেকটাই বেশি হয়। Policybazaar-এর টার্ম ইন্স্যুরেন্স বিভাগের প্রধান বরুণ আগরওয়াল বলেন, “ধূমপায়ীদের টার্ম ইন্স্যুরেন্স প্রিমিয়াম ৮০% থেকে ১০০% পর্যন্ত বেশি হতে পারে।”
এর কারণ হিসেবে তিনি জানান, ধূমপানের ফলে ক্যানসার, হৃদরোগ, ফুসফুসের সমস্যা সহ নানা প্রাণঘাতী রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়, যা বিমা সংস্থাগুলির কাছে ধূমপায়ীদেরকে উচ্চ-ঝুঁকির গ্রাহক হিসেবে চিহ্নিত করে।
Elephant.in-এর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট চেতন বসুদেবা বলেন, “ধূমপায়ীদের ক্ষেত্রে বিমা প্রিমিয়াম ২০% থেকে ৫০% পর্যন্ত বেশি হতে পারে। এটা নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির স্বাস্থ্য পরিস্থিতি ও বিমা সংস্থার নীতির উপর।”
ধূমপায়ী কাকে বলে?
বরুণ আগরওয়ালের মতে, “যে ব্যক্তি গত ১২ মাসে সিগারেট, বিড়ি, চুরুট অথবা চিবিয়ে খাওয়ার তামাকজাত দ্রব্য সেবন করেছেন, তাকেই ধূমপায়ী হিসেবে গণ্য করা হয়।”
এই শ্রেণীবিন্যাস স্বঘোষণা এবং মেডিকেল টেস্টের মাধ্যমে নির্ধারিত হয়। কেউ যদি ভুল তথ্য দেন বা তামাক সেবনের তথ্য গোপন করেন, তাহলে বিমা দাবি নাকচ হওয়া বা পুরো পলিসি বাতিল হওয়ার ঝুঁকি থাকে। চেতন বসুদেবা সতর্ক করে বলেন, “তথ্য গোপন করলে বিমা কোম্পানি দাবি নাও মেনে নিতে পারে।”
ধূমপান ছাড়লে কি প্রিমিয়াম কমবে?
এই প্রশ্নের উত্তরে বরুণ আগরওয়াল স্পষ্ট করে বলেন, “একবার ধূমপায়ী শ্রেণীতে পড়ে পলিসি জারি হয়ে গেলে, পুরো মেয়াদকালের জন্য সেই প্রিমিয়ামই কার্যকর থাকবে।” অর্থাৎ, আপনি পলিসি কেনার পর ধূমপান ছাড়লেও সেই প্রিমিয়াম কমবে না।
তবে স্বস্তির বিষয় হলো, টার্ম ইন্স্যুরেন্সে তামাক-সম্পর্কিত রোগের ক্ষেত্রে কোনো অপেক্ষাকাল (waiting period) নেই। পলিসি একবার চালু হয়ে গেলে, সেই সুবিধা অব্যাহত থাকবে।
স্বাস্থ্য বিমা: অপেক্ষাকাল ও পরিবর্তনযোগ্যতা
টার্ম ইন্স্যুরেন্সের তুলনায় স্বাস্থ্য বিমা ক্ষেত্রে কিছুটা নমনীয়তা আছে। চেতন বসুদেবার মতে, যদি কেউ ১২ থেকে ২৪ মাস ধূমপান বন্ধ রাখেন এবং চিকিৎসাগত প্রমাণ দিতে পারেন, তাহলে কিছু কিছু বিমা কোম্পানি নবীকরণের সময় তাকে নন-স্মোকার হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করতে পারে, ফলে প্রিমিয়াম কমতে পারে। তবে এটা পুরোপুরি বিমা সংস্থার নীতির উপর নির্ভর করে এবং নিশ্চিত নয়।
তামাক-সম্পর্কিত রোগে অপেক্ষাকাল
ধূমপায়ীদের ক্ষেত্রে ফুসফুস ক্যানসার, সিওপিডি (COPD) ইত্যাদি তামাক-সম্পর্কিত রোগের জন্য ২ থেকে ৪ বছর পর্যন্ত অপেক্ষাকাল থাকতে পারে, বিশেষ করে যদি সেই অসুস্থতা পলিসি নেওয়ার আগে থেকেই বিদ্যমান থাকে।
বিশ্ব তামাকবিরোধী দিবস আমাদের শুধু স্বাস্থ্য সচেতনতা নয়, আর্থিক সচেতনতারও বার্তা দেয়। ধূমপান ও তামাক সেবনের কারণে বিমার খরচ যেমন বাড়ে, তেমনি ভবিষ্যতের আর্থিক নিরাপত্তাও হুমকির মুখে পড়ে।
আজকের দিনে আমাদের উচিত নিজের ও পরিবারের সুস্থতা এবং আর্থিক সুরক্ষার কথা ভেবে ধূমপান ও তামাক সেবন সম্পূর্ণরূপে ত্যাগ করা। স্বাস্থ্যই সম্পদ, আর সেই সম্পদকে রক্ষা করতে হলে তামাক থেকে দূরে থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ।
