পুলিশকে গালি-ক্ষমা চাওয়ার পর কেষ্টর নয়া লীলা

বোলপুর: ভাইরাল অডিও ক্লিপে থানার আইসি-কে কুৎসিত ভাষায় আক্রমণের অভিযোগে তৃণমূলের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা অনুব্রত মণ্ডলকে হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল পুলিশ। বলা হয়েছিল, শনিবার সকাল ১১টার…

anubrata mondal skips police summons

বোলপুর: ভাইরাল অডিও ক্লিপে থানার আইসি-কে কুৎসিত ভাষায় আক্রমণের অভিযোগে তৃণমূলের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা অনুব্রত মণ্ডলকে হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল পুলিশ। বলা হয়েছিল, শনিবার সকাল ১১টার মধ্যে বোলপুর মহকুমা পুলিশ আধিকারিক (SDPO)-এর দফতরে তাঁকে উপস্থিত হতে হবে। কিন্তু নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও অনুব্রত থানায় হাজিরা দেননি।

তাঁর পরিবর্তে সেখানে হাজির হন চারজন আইনজীবী। তাঁদের মধ্য থেকে একজন জানান, তাঁরা এসেছেন ‘শুধু সৌজন্য সাক্ষাৎ’-এ। যদিও পুলিশ সূত্রে নিশ্চিত, অনুব্রতের পক্ষে সেই চার আইনজীবীই হাজিরা সংক্রান্ত বিষয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে এসেছিলেন।

   

তৃণমূলের চাপে ক্ষমা, কিন্তু বিতর্কে ইতি নেই

ঘটনার সূত্রপাত একটি অডিও ক্লিপ ঘিরে। যেখানে বোলপুর থানার আইসি লিটন হালদারকে ফোনে অকথ্য ভাষায় আক্রমণ করতে শোনা যায় অনুব্রত মণ্ডলকে। ‘অনুব্রত মণ্ডল বলছি’—এই নাম পরিচয় দিয়েই শুরু হয় তির্যক মন্তব্যের পর্ব। সেই অডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে পড়ে। যদিও ওই অডিও ক্লিপের সত্যতা স্বাধীনভাবে যাচাই করিনি আমরা৷

এ নিয়ে দলের অন্দরেই অস্বস্তি ছড়ায়। তৃণমূল নেতৃত্ব অনুব্রতকে নির্দেশ দেয়, যেন তিনি নিঃশর্ত ক্ষমা চান। শুক্রবার দুপুরে, সেই নির্দেশ মান্য করে, প্রথমে লিখিতভাবে পুলিশের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন অনুব্রত। পরে ভিডিও বার্তাও দেন। তাতে তিনি বলেন, ‘‘হ্যাঁ, ভাইরাল হওয়া অডিওতে যাঁর গলা শোনা যাচ্ছে, সেটা আমারই। আমি বরাবর পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে সুসম্পর্কে থেকেছি। কিন্তু ওই দিন কিছু ব্যক্তিগত কারণে উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলাম। আমার এমন কথা বলা উচিত হয়নি। আমি দুঃখিত।’’

চারটি ফৌজদারি ধারায় মামলা, একটি জামিন অযোগ্য  anubrata mondal skips police summons

বীরভূমের পুলিশ সুপার আমনদীপ নিশ্চিত করেছেন, অনুব্রতের বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (BNS)-র অধীনে চারটি ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। অভিযোগ অনুযায়ী, তিনি সরকারি কর্মচারীর কাজে বাধা দিয়েছেন, হুমকি দিয়েছেন এবং মানহানিকর মন্তব্য করেছেন।

জানা গিয়েছে, দায়ের হওয়া ধারাগুলি হল—

BNS ২২৪: সরকারি কাজে বাধা দেওয়া এবং কর্তব্যরত কর্মীকে হুমকি

BNS ১৩২: সরকারি কর্মচারীকে হেনস্থা

BNS ৭৫: শ্লীলতাহানি ও মানহানি

Advertisements

BNS ৩৫১: হুমকি প্রদান

এর মধ্যে একটি ধারা জামিন অযোগ্য। সেই কারণেই আইনি দিক থেকে মামলাটি গুরুতর বলে মনে করছেন পুলিশকর্তারা। পুলিশ শুক্রবার দুপুরে বোলপুরে তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে অনুব্রতের হাতে এই সংক্রান্ত নোটিস তুলে দেয়।

রাজনৈতিক চাপ বাড়ছে, সরব বিরোধীরা

অনুব্রতের আচরণ নিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোও সরব হয়েছে। বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, “অনুব্রত মণ্ডলকে কান ধরে জেলে ঢোকাতে হবে। তিনি পুলিশের সঙ্গে এমন আচরণ করে ছাড় পাচ্ছেন কেন?” কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী-ও অনুব্রতের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, “আইন যদি সমান হয়, তাহলে অনুব্রত এতদিনে জেলে থাকতেন।”

পুরনো অনুব্রতই যেন ফিরে এলেন

তৃণমূলের এই প্রভাবশালী নেতার বিরুদ্ধে পুলিশকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ নতুন নয়। গরু পাচার মামলায় তাঁর নাম জড়ানোর পর কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা তাঁকে গ্রেফতার করে। বহুদিন জেল হেফাজতে থাকার পর, তিনি ২০২৩-এ জামিনে ছাড়া পান। তখনই তৃণমূল জানায়, আইন আইনের পথে চলবে। কিন্তু জামিনের পরও বারবার বিতর্কে জড়িয়ে পড়ছেন অনুব্রত।

এই ঘটনার পর প্রশ্ন উঠেছে, দলের মধ্যে কি তিনি আগের মতোই দাপট দেখাচ্ছেন? নাকি এবার দলীয় শীর্ষ নেতৃত্ব তাঁর প্রতি আরও কঠোর হতে চলেছে?

আইনি প্রক্রিয়ার পথে অগ্রগতি, নজরে তৃণমূলও

এখন দেখার বিষয়, অনুব্রতকে গ্রেফতার করা হয় কি না। পুলিশ তাঁর আইনজীবীদের মাধ্যমেই পরবর্তী পদক্ষেপ জানাবে বলে মনে করা হচ্ছে। তৃণমূল সূত্রে ইঙ্গিত, দলের তরফেও বিষয়টি পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।

 West Bengal: TMC strongman Anubrata Mondal skipped his police summons today, May 31, regarding a viral audio clip where he allegedly abused Bolpur IC. His lawyers attended instead, after he issued a public apology for the incident that sparked party discomfort.