New Pension Rules 2025: কেন্দ্রীয় সরকার পেনশন সংক্রান্ত নিয়মে এক বড়সড় পরিবর্তন এনেছে, যা বিশেষভাবে প্রভাব ফেলবে সেই সমস্ত কর্মীদের ওপর যাঁরা আগে সরকারি দপ্তরে কর্মরত ছিলেন এবং পরে সরকারি মালিকানাধীন সংস্থা বা PSU-তে স্থায়ীভাবে যুক্ত হয়েছেন।
২০২৫ সালের ২২ মে থেকে কার্যকর হওয়া এই পরিবর্তনগুলি Central Civil Services (Pension) Amendment Rules, 2025-এর মাধ্যমে আনা হয়েছে, যা Central Civil Services (Pension) Rules, 2021-এ সংশোধনী আকারে সংযোজিত হয়েছে।
কারা এই নতুন নিয়মের আওতায় পড়বেন না?
এই সংশোধিত পেনশন নিয়মগুলি প্রযোজ্য হবে না নিম্নোক্ত বিভাগের কর্মীদের ক্ষেত্রে:
- রেলওয়ে কর্মচারী
- ক্যাজুয়াল ও দৈনিক মজুরিতে নিয়োজিত কর্মী
- IAS (ইন্ডিয়ান অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস)
- IPS (ইন্ডিয়ান পুলিশ সার্ভিস)
- IFoS (ইন্ডিয়ান ফরেস্ট সার্ভিস)
কী পরিবর্তন হয়েছে?
নতুন নিয়ম অনুযায়ী, Rule 37(29C)-এর মাধ্যমে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান যুক্ত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, যদি কোনও PSU-র কর্মী — যিনি পূর্বে সরকারি পরিষেবায় নিযুক্ত ছিলেন এবং পরে PSU-তে স্থায়ীভাবে যুক্ত হয়েছেন — তাকে শৃঙ্খলাভঙ্গ বা অসদাচরণের কারণে বরখাস্ত বা চাকরি থেকে অপসারিত করা হয়, তবে তিনি তার সরকারি চাকরির সময় অর্জিত পেনশনসহ সমস্ত অবসরজনিত সুবিধা হারাতে পারেন।
আগে এই ধরনের পরিস্থিতিতে PSU-র চাকরি থেকে বরখাস্ত হলেও, ওই কর্মী তার আগের সরকারী চাকরির সময়ের পেনশন সুবিধা পেতেন। নতুন নিয়ম সেই সুবিধাকে সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহার করার সুযোগ তৈরি করেছে।
মূল দিকনির্দেশ:
সম্পূর্ণ পেনশন বাতিলের সম্ভাবনা: PSU থেকে অসদাচরণের কারণে বরখাস্ত হলে কর্মচারী তার PSU-র সময়কার পেনশনের পাশাপাশি পূর্ববর্তী সরকারী চাকরির পেনশনও হারাতে পারেন।
- শুধুমাত্র শৃঙ্খলাভঙ্গের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য: স্বেচ্ছায় অবসর, স্বাস্থ্যজনিত কারণ বা অন্য সাধারণভাবে চাকরি ছাড়ার ক্ষেত্রে এই নিয়ম প্রযোজ্য নয়।
- পর্যালোচনার ব্যবস্থা: এই সিদ্ধান্ত স্বয়ংক্রিয়ভাবে কার্যকর হবে না। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক মন্ত্রক বিষয়টি পর্যালোচনা করবে এবং তারপরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
- দয়া ভিক্ষা ভিত্তিক রেহাই: দুটি বিকল্প পরিস্থিতিতে আংশিক বা শর্তসাপেক্ষ পেনশন পাওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে—
- ভবিষ্যতে ভালো আচরণের ভিত্তিতে পেনশন
- সরকার নির্ধারিত Compassionate Allowance (অনুকম্পাজনিত ভাতা)
কারা এই নিয়মের আওতায় আসবেন?
- ২০০৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর বা তার আগে নিযুক্ত সরকারি কর্মচারী
- যারা পরে স্থায়ীভাবে PSU-তে যুক্ত হয়েছেন
কেন এই পরিবর্তন গুরুত্বপূর্ণ?
সরকারি মহলের মতে, এই সংশোধনের মাধ্যমে PSU-তে শৃঙ্খলা ও দায়বদ্ধতা আরও মজবুত হবে। কর্মীদের বোঝানো হবে যে, একবার সরকারি চাকরি ছেড়ে PSU-তে যোগ দিলেও শৃঙ্খলার অভাব বা দুর্ব্যবহার মারাত্মক আর্থিক পরিণতি ডেকে আনতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই নিয়ম PSU গুলির মধ্যে আরও সতর্ক ও নিয়মানুগ কর্মপরিবেশ গড়ে তুলবে। তবে অন্যদিকে, প্রাক্তন সরকারী কর্মীদের জন্য এটি এক ধরনের মানসিক চাপও সৃষ্টি করতে পারে, কারণ চাকরি থেকে বরখাস্ত হওয়ার অনেক পরে এমনকি তারা তাদের পূর্বের সঞ্চিত পেনশন থেকেও বঞ্চিত হতে পারেন
সমালোচনা ও বিতর্ক
এই নতুন নিয়মকে কেন্দ্র করে কর্মী সংগঠনগুলির মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। তাদের মতে, এটি অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা হ্রাস করতে পারে। অনেকেই বলছেন, প্রশাসনিক বা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে কোনও কর্মীর বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাজনিত পদক্ষেপ নিলে, তার পেনশন কেড়ে নেওয়ার সুযোগ তৈরি হবে, যা অন্যায় হতে পারে।
সরকারের এই নতুন পদক্ষেপ যেমন শৃঙ্খলার বার্তা দিচ্ছে, তেমনই এটি একটি গুরুতর সামাজিক ও আর্থিক প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে—বিশেষ করে সেইসব কর্মীদের জন্য, যাঁরা সরকারি চাকরি করে অবসর সুনিশ্চিত ভেবেছিলেন এবং পরে PSU-তে অবসৃত হন। পেনশনের মত একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক সুরক্ষাকে শৃঙ্খলার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা কি আদৌ ন্যায়সঙ্গত, তা নিয়ে সমাজে বিস্তর আলোচনা চলবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
পরবর্তী সময়ে এই নিয়মে কোনও সংশোধনী আসে কিনা বা আদালতের হস্তক্ষেপ হয় কিনা, সেটাই দেখার বিষয়। কিন্তু আপাতত, PSU-তে কর্মরত প্রাক্তন সরকারি কর্মীদের জন্য এটি একটি সতর্কবার্তা—‘অসদাচরণ মানে শুধুই চাকরি হারানো নয়, জীবনের শেষ পর্যায়ের আর্থিক নিরাপত্তাও হারিয়ে যেতে পারে।’