নোট বাতিলেই সমাধান! ৫০০ টাকার নোট নিষিদ্ধ করার ডাক

অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী এবং তেলুগু দেশম পার্টির (টিডিপি) প্রধান এন চন্দ্রবাবু নাইডু (Chandrababu Naidu) ফের একবার বড় মূল্যমানের নোট বাতিলের দাবি জানিয়ে দেশজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে…

Chandrababu Naidu Calls for Ban on ₹500 Notes

অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী এবং তেলুগু দেশম পার্টির (টিডিপি) প্রধান এন চন্দ্রবাবু নাইডু (Chandrababu Naidu) ফের একবার বড় মূল্যমানের নোট বাতিলের দাবি জানিয়ে দেশজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছেন। কড়াপা জেলায় অনুষ্ঠিত তিন দিনব্যাপী বার্ষিক মেগা সম্মেলন ‘মহানাড়ু’-এর সূচনালগ্নে হাজার হাজার দলীয় সদস্যের সামনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে নাইডু ঘোষণা করেন, ‘‘আরো একবার সময় এসেছে ৫০০, ১০০০ ও ২০০০ টাকার নোট বাতিল করার। আমাদের ডিজিটাল অর্থনীতির দিকে এগোতে হবে।’’

তিনি জোর দিয়ে বলেন, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক জীবনের গভীরে প্রবেশ করে থাকা দুর্নীতিকে নির্মূল করতে হলে ডিজিটাল লেনদেনকে বাধ্যতামূলক করতে হবে। নগদ টাকার চলাচল কমালে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা সম্ভব এবং সেইসঙ্গে কালো টাকার রমরমাও বন্ধ হবে।

   

২০১৬ সালের ঐতিহাসিক নোটবন্দির প্রসঙ্গ টেনে এনেই নাইডু বলেন, ‘‘তখন আমি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে পরামর্শ দিয়েছিলাম ডিজিটাল মুদ্রা চালুর জন্য, যাতে দুর্নীতির যে কোনো চিহ্ন সহজেই ধরা যায়।’’ উল্লেখ্য, ওই সময় নাইডু নীতি আয়োগের অধীনে একটি কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃত্বে ছিলেন, যার কাজ ছিল একটি নগদহীন অর্থনীতির রোডম্যাপ তৈরি করা।

এবারের মহানাড়ু সম্মেলনে তাঁর বক্তব্য ছিল কেবল অর্থনৈতিক সংস্কারের বার্তা নয়, বরং তা রাজনৈতিক কৌশল ও আদর্শগত দৃষ্টিভঙ্গির মিশেল। নাইডু স্পষ্ট ভাষায় বলেন, ‘‘যদি কেউ টিডিপিকে অনুদান দিতে চায়, তাঁকে এখন আর কাউকে জিজ্ঞেস করতে হয় না। আমরা কিউআর কোডের মাধ্যমে অনুদান গ্রহণ করছি। এতে সমস্ত লেনদেন উন্মুক্ত এবং স্বচ্ছ।’’

তিনি জানান, দলীয় তহবিলে আগের মতো নগদ গ্রহণের প্রয়োজন পড়ছে না, বরং কিউআর কোড স্ক্যান করেই সরাসরি ডিজিটাল মাধ্যমে অনুদান প্রদান সম্ভব। এতে শুধু অনুদানদাতার নামই নয়, কত টাকা কবে এসেছে—সবই দলীয় কর্মী ও সাধারণ মানুষের জন্য দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে।

চন্দ্রবাবু নাইডুর এই বক্তব্য এমন সময় এল, যখন সারা দেশে নির্বাচন তহবিল সংক্রান্ত স্বচ্ছতা নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে। দেশের রাজনৈতিক দলগুলির বড় অংশ এখনো নগদ অনুদানের ওপর নির্ভরশীল, যা দুর্নীতির প্রবেশপথ খুলে দেয়। নাইডুর মতে, ‘‘যতদিন নগদ থাকবে, ততদিন দুর্নীতি থেকে মুক্তি অসম্ভব।’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘ডিজিটাল অর্থনীতি কেবল প্রযুক্তির ব্যবহার নয়, এটি শাসন সংস্কারের পথ। জনগণের প্রতিটি লেনদেন, অনুদান, কর প্রদান—সবকিছুই যদি ডিজিটাল হয়, তাহলে দুর্নীতির পথ বন্ধ হবে।’’

Advertisements

নাইডুর এই বক্তব্য রাজনীতিক মহলে একদিকে যেমন দলীয় কর্মীদের মনোবল বাড়িয়েছে, তেমনি জাতীয় রাজনীতির ক্ষেত্রেও আলোচনার ঢেউ তুলেছে। একাধিক নীতি নির্ধারক ইতোমধ্যেই স্বচ্ছ নির্বাচন তহবিল গঠনের জন্য ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থার পক্ষে সওয়াল করেছেন। নাইডুর এই পদক্ষেপ তাই অনেকের কাছেই সময়োপযোগী এবং ভবিষ্যত মুখী হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

তবে প্রশ্ন উঠেছে—দেশের অধিকাংশ অঞ্চল এখনো পর্যন্ত ডিজিটাল লেনদেনের উপযুক্ত পরিকাঠামো পায়নি। বিশেষত গ্রামীণ এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক অর্থনীতির বড় একটি অংশ এখনো নগদের উপর নির্ভরশীল। এমন অবস্থায় আবার নতুন করে নোট বাতিলের দাবি কতটা বাস্তবসম্মত হবে, সে নিয়েও সংশয় রয়েছে।

তবুও, রাজনৈতিক দুনিয়ায় স্বচ্ছতার প্রয়াস হিসেবে নাইডুর এই ডিজিটাল সংস্কারের দাবি নতুন দিশা দেখাতে পারে বলেই মনে করছেন অর্থনীতি ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।

একজন দলীয় নেতা বলেন, ‘‘আমরা এখন QR কোড ব্যবহার করে তহবিল সংগ্রহ করছি। জনগণ জানে তাদের টাকা কোথায় যাচ্ছে। এটি একটি নতুন যুগের সূচনা।’’

চন্দ্রবাবু নাইডুর বক্তব্য স্পষ্ট, ‘‘এখন সময় এসেছে কাগজের নোটকে বিদায় জানানোর এবং প্রযুক্তিকে সাদরে গ্রহণ করার। এই দুনিয়ায় যে যত দ্রুত প্রযুক্তিকে গ্রহণ করবে, সেই তত তাড়াতাড়ি দুর্নীতিমুক্ত উন্নয়নের পথে এগোতে পারবে।’’
রাজনৈতিক স্বচ্ছতা ও আর্থিক সংস্কারের যুগপৎ বার্তাই এবার যেন নাইডুর মহানাড়ু বক্তৃতার মূল সুর।