২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের (২০২৫-২৬ মূল্যায়ন বর্ষ) জন্য আয়কর রিটার্ন (ITR) দাখিলের সময়সীমা বাড়িয়ে ৩১ জুলাই ২০২৫ থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তে যেমন করদাতারা কিছুটা স্বস্তি পেলেন, তেমনি এতে এক নতুন আর্থিক সুবিধাও মিলছে—আয়কর ফেরতের (tax refund) ওপর প্রাপ্য সুদের পরিমাণ ৩০ শতাংশেরও বেশি বেড়ে যেতে পারে।
কর ফেরতের সঙ্গে সুদের কারণ কী?
যেসব করদাতারা অগ্রিম কর বা উৎসে কর কেটে বেশি পরিমাণ কর ইতিমধ্যেই দিয়ে ফেলেছেন, তাদের প্রকৃত করদায়িত্বের তুলনায় বেশি কর দেওয়া হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়। এই অতিরিক্ত অর্থ ফেরত দেওয়া হয় আয়কর ফেরতের মাধ্যমে। তবে শুধু টাকা ফেরতই নয়, এই ফেরতের সঙ্গে সুদও মেলে।
আয়কর আইনের ২৪৪এ ধারা অনুযায়ী, যেকোনো কর ফেরতের পরিমাণের ওপর আয়কর বিভাগ প্রতি মাসে ০.৫% হারে সরল সুদ প্রদান করে। অর্থাৎ বার্ষিক হিসাবে সুদের হার দাঁড়ায় ৬%।
সময়সীমা বাড়ানোয় কীভাবে বাড়ছে সুদ?
আইন অনুযায়ী, যেসব করদাতারা নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে (আগে ছিল ৩১ জুলাই, এখন ১৫ সেপ্টেম্বর) আয়কর রিটার্ন দাখিল করেন, তাদের ক্ষেত্রে ফেরতের ওপর সুদ গণনা করা হয় মূল্যায়ন বর্ষের ১ এপ্রিল থেকে শুরু করে রিফান্ড প্রক্রিয়াকরণ পর্যন্ত।
এই নিয়ম অপরিবর্তিত থাকায়, এখন ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রিটার্ন দাখিল করলেও ১ এপ্রিল ২০২৫ থেকেই সুদের হিসাব চলবে। অর্থাৎ, আপনি যতদিন দেরিতে রিফান্ড পান, সুদের পরিমাণ তত বাড়বে। যদি কেউ ১৫ সেপ্টেম্বর রিটার্ন জমা দেন এবং ধরুন ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে রিফান্ড পান, তাহলে ১ এপ্রিল থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ১৮৩ দিনের জন্য সুদ প্রাপ্য হবে।
তুলনামূলকভাবে, যদি আগের সময়সীমা ৩১ জুলাই পর্যন্ত রিটার্ন দাখিল করা হতো এবং সেইমতো ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে রিফান্ড আসত, তাহলে সুদ মিলত মাত্র ১৪৪ দিনের জন্য। সেই হিসাবে বাড়তি ৩৯ দিন অর্থাৎ ২৭ শতাংশ বেশি সময় সুদ প্রযোজ্য হবে। যদি প্রক্রিয়াকরণ ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হয়, তবে বাড়তি সময় দাঁড়াবে ৪৬ দিন—যা ৩১.৯৪ শতাংশ বেশি।
উদাহরণ দিয়ে সহজ ব্যাখ্যা
ধরা যাক, কোনো এক করদাতার ২৫,০০০ টাকা কর ফেরতের দাবি রয়েছে। যদি তিনি ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে রিটার্ন দাখিল করতেন এবং সেই অনুযায়ী ফেরত পেতেন, তবে সুদ পেতেন প্রায় ৫০০ টাকা (২৫,০০০ টাকার ৬% হারে ১৪৪ দিনের জন্য)।
কিন্তু যদি তিনি নতুন সময়সীমা অনুযায়ী ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে রিটার্ন দাখিল করেন এবং ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে রিফান্ড পান, তাহলে সুদের পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ৭৫০ টাকা। অর্থাৎ, ৩৩% বেশি।
সুদের ওপর কর দিতে হবে কি?
হ্যাঁ, কর ফেরতের ওপর পাওয়া সুদ ‘অন্যান্য উৎস থেকে আয়’ (Income from Other Sources) হিসাবে গণ্য হয় এবং তা আয়কর রিটার্নে দেখাতে হয়। তবে FY 2025-26 (AY 2026-27)-এ Section 87A-র অধীনে করছাড় সীমা বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেক করদাতা এই সুদের ওপর কার্যত কোনও কর দিতে নাও পারেন।
বর্তমানে, অবেতনভোগীদের ক্ষেত্রে বার্ষিক আয় যদি ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হয় এবং বেতনভোগীদের ক্ষেত্রে ১২.৭৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হয়, তাহলে করদাতারা ৮৭এ ধারা অনুযায়ী পূর্ণ করছাড় পেতে পারেন। ফলে এই সুদ আয় কার্যত করমুক্ত হয়ে উঠবে অনেকের জন্য।
সময়মতো ফাইল করাটাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ
যদিও সুদের পরিমাণ বাড়ার একটা আর্থিক সুবিধা রয়েছে, তবে এটাও মাথায় রাখতে হবে—যত দেরি করে রিটার্ন দাখিল করা হবে, তত দেরিতে রিফান্ড পাওয়া যাবে। তাছাড়া কোনো ত্রুটি বা সমস্যা দেখা দিলে তা সংশোধনের সময়ও কমে যাবে। তাই শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা না করে, প্রয়োজনীয় নথি প্রস্তুত করে যত দ্রুত সম্ভব রিটার্ন জমা দেওয়াই হবে সর্বোত্তম কৌশল।
আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময়সীমা বৃদ্ধি করদাতাদের জন্য স্বস্তির খবর বটে, তবে এর সঙ্গে বাড়তি সুদের সুবিধাও রয়েছে—যা অনেকের কাছে সুখবর। যেহেতু সুদের হার ধারাবাহিকভাবে চলবে ১ এপ্রিল থেকে, তাই শেষ তারিখের কাছাকাছি রিটার্ন জমা দিলেও সেই অতিরিক্ত সময়ের জন্য বেশি সুদ পাওয়া যাবে। তবে দেরি না করে সময়মতো সঠিকভাবে রিটার্ন দাখিল করাটাই হবে সবচেয়ে নিরাপদ আর্থিক পদক্ষেপ।