অরুণাচল প্রদেশের (Arunachal Pradesh) গোল্ডেন জুবিলি স্টেডিয়ামে (Golden Jubilee Stadium) ১৮ মে রাতটা ছিল ভারতীয় যুব ফুটবলের (Indian Football) ইতিহাসে এক অনন্য সন্ধ্যা। হাজার হাজার দর্শকের সামনে, ভারতের কিশোর ফুটবলাররা ইতিহাস লিখে ফেলেছে। দক্ষিণ এশীয় ফুটবল ফেডারেশন অর্থাৎ সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ চ্যাম্পিয়নশিপের (SAFF U-19 Championship) ফাইনালে বাংলাদেশকে (Bangladesh) হারিয়ে শিরোপা ঘরে তোলে যুব ভারতীয় ফুটবল দল (Indian Football Team)। কিন্তু এই জয়ে সবচেয়ে বেশি আলোড়ন তুলে দিয়েছেন দলের অধিনায়ক সিংগময়ুম শামি (Singamayum Shami), একটি গোল যা বহুদিন মনে রাখবে গোটা দেশ সহ বিশ্বের ফুটবল প্রেমীরা। কারণ তিনি সকলে মনে করিয়ে দিয়েছেন রোনালদিনহোর (Ronaldinho) করার মুহূর্ত।
ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিটেই ফাউল থেকে একটি ফ্রি-কিক পায় ভারত। ৩০ গজেরও বেশি দূর থেকে শামি শট নিতে দাঁড়ান। মুহূর্তেই দেখা গেল এক ফুটবলীয় ম্যাজিক। বাংলাদেশি গোলকিপার সামান্য এগিয়ে ছিলেন, আর শামি সেটা বুঝেই বলটি এমনভাবে ঘুরিয়ে মারলেন যে তা গোলকিপারের আঙুল ছুঁয়ে জালে প্রবেশ করল। স্টেডিয়াম তখন গর্জে উঠেছে, দর্শকদের চিৎকারে কম্পিত আকাশ।
Just Wow! Singamayum Shami! #SAFFU19 pic.twitter.com/Xq37NOA22q
— Satish Acharya (@satishacharya) May 19, 2025
এই গোলটির সঙ্গে সঙ্গে অনেক ফুটবলপ্রেমী মনে পড়ে যান ২০০২ সালের বিশ্বকাপের কথা। ইংল্যান্ড বনাম ব্রাজিল কোয়ার্টার ফাইনালে রোনালদিনহোর সেই বিখ্যাত গোল—যেটি তিনি ৩৫ গজ দূর থেকে করেছিলেন। ইংল্যান্ডের কিংবদন্তি গোলকিপার ডেভিড সিম্যান তখন ছিলেন একটু এগিয়ে। ঠিক যেমনটা ছিল ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের গোলরক্ষক। রোনালদিনহোর গোল যেমন ছিল এক বিস্ময়, তেমনি শামির এই গোলও এক সাহসী প্রতিভার নিদর্শন।
20 years ago today, Ronaldinho fooled everyone with 𝘁𝗵𝗮𝘁 free-kick against England 🤙
(via @FIFAWorldCup)pic.twitter.com/nyelzzbIIf
— B/R Football (@brfootball) June 21, 2022
ভারত এগিয়ে গেলেও, বাংলাদেশ দ্বিতীয়ার্ধে ঘুরে দাঁড়ায়। ম্যাচের ৬১তম মিনিটে মো. জয় আহমেদ গোল করে সমতা ফেরান। এরপরে দুই দলই সুযোগ তৈরি করে, কিন্তু আর কেউ গোল করতে পারেনি। ফলে খেলা গড়ায় পেনাল্টি শুটআউটে।
সেখানেও ভারতীয় তরুণদের সাহসিকতা ও ঠান্ডা মাথার খেলা প্রশংসনীয়। গোলকিপার রজ সিং আহেইবাম দুটি দুর্দান্ত সেভ করেন। আর অধিনায়ক শামি, যিনি পুরো ম্যাচে দলের পথপ্রদর্শক ছিলেন, তিনিই শেষ পেনাল্টিটি নিশ্চিত করে ভারতকে এনে দেন বিজয়।
শামির এই গোলকে শুধু একটি সুন্দর গোল বললে কম বলা হবে। এটি ছিল এক পেশাদার ফুটবলারের মতো অবস্থা বোঝার ক্ষমতা, দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং সাহসিকতার মিশ্রণ। রোনালদিনহোর মতো কিংবদন্তির সঙ্গে তুলনা পাওয়া কেবল একটি গোলের সৌন্দর্যের কারণে নয়—বরং তার মধ্যে ফুটে উঠেছে ভবিষ্যতের এক বড় তারকার সম্ভাবনা।
২০০২ সালে রোনালদিনহো গোল করার পর লাল কার্ড দেখেন, আর ব্রাজিল শেষ পর্যন্ত ম্যাচ জিতে বিশ্বকাপ জেতে। কিন্তু ২০২৫ সালে শামি পুরো ম্যাচে দলকে নেতৃত্ব দিয়ে, মাঠে থেকে লড়াই চালিয়ে যান। আর সেই নেতৃত্বেই ভারত জেতে সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ চ্যাম্পিয়নশিপ।
ভারতীয় ফুটবলে বহু বছর ধরে এমন একটি মুহূর্তের অপেক্ষা ছিল। যুব দল থেকে এমন এক প্রতিভা উঠে এসেছে, যিনি ভবিষ্যতে সিনিয়র জাতীয় দলকে নেতৃত্ব দিতে পারেন। শামির এই গোল শুধু একটি টুর্নামেন্ট জেতার স্মৃতি নয়—এটি ভবিষ্যতের আশার আলো।
ভারতীয় ফুটবলের নতুন সূর্যোদয়ের দিনে, আমরা যেন নতুন এক তারকার জন্ম প্রত্যক্ষ করলাম—ভারতের শামি, যিনি বাংলার মাটিতে করে দেখালেন এক “রোনালদিনহো মুহূর্ত”।