PNB-র ১৬,০০০ কোটি টাকা পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে কড়া পদক্ষেপ

ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক (PNB) চলতি অর্থবছরে ১৬,০০০ কোটি টাকা পুনরুদ্ধার করার উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্য নিয়েছে এবং এক শতাংশের নিচে ঋণস্লিপেজ হার…

PNB

ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক (PNB) চলতি অর্থবছরে ১৬,০০০ কোটি টাকা পুনরুদ্ধার করার উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্য নিয়েছে এবং এক শতাংশের নিচে ঋণস্লিপেজ হার বজায় রাখতে চায়। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে ব্যাঙ্কের লাভজনকতা ধরে রাখার কৌশল গ্রহণ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। ব্যাঙ্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও অশোক চন্দ্রা সম্প্রতি পিটিআই-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই তথ্য জানান।

২০২৪-২৫ অর্থবছরে ব্যাঙ্কের মোট পুনরুদ্ধার হয়েছে ১৪,৩৩৬ কোটি টাকা, যার মধ্যে শুধু চতুর্থ ত্রৈমাসিকে পুনরুদ্ধার হয়েছে ৪,৭৩৩ কোটি টাকা। একইসঙ্গে ব্যাঙ্কের মোট স্লিপেজ হার দাঁড়িয়েছে মাত্র ০.৭৩ শতাংশ, যা ব্যাঙ্কিং শিল্পে অত্যন্ত ইতিবাচক ইঙ্গিত বহন করে।

   

অশোক চন্দ্রা বলেন, “আগামী দিনে পুনরুদ্ধার বৃদ্ধির উপর সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হবে। তাছাড়া নতুন করে ঋণস্লিপেজ যেন না ঘটে, তার দিকেও বিশেষ নজর থাকবে। আমরা এবছর ১৬,০০০ কোটি টাকার পুনরুদ্ধার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছি, যা গত অর্থবছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।”
তিনি আরও জানান, প্রতি ত্রৈমাসিকে ব্যাঙ্ক প্রায় ১,৫০০ কোটি থেকে ১,৭০০ কোটি টাকার স্লিপেজ অনুমান করছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ব্যাঙ্ক বিশেষভাবে “টেকনিক্যাল রাইট অফ” অ্যাকাউন্টগুলোর পুনরুদ্ধারে মনোনিবেশ করবে।

PNB-র টেকনিক্যাল রাইট অফ বুক বর্তমানে প্রায় ৯১,০০০ কোটি টাকার, যার ৯৬ শতাংশের বেশি সংস্থান ইতিমধ্যেই করা হয়েছে। এই অ্যাকাউন্টগুলোর থেকে পুনরুদ্ধার হলে তা সরাসরি ব্যাঙ্কের লাভে যুক্ত হয়। চন্দ্রা জানান, এই খাত থেকে প্রায় ৬,০০০ কোটি টাকার পুনরুদ্ধার প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, “আমরা প্রতি ত্রৈমাসিকে অন্তত ১,৫০০ কোটি টাকার পুনরুদ্ধারের লক্ষ্য স্থির করেছি। বড় অঙ্কের ঋণখেলাপি হয়তো এখন আর নেই, তবে ২৫ থেকে ৫০ কোটির মধ্যবর্তী অনেক ঋণখেলাপি অ্যাকাউন্ট রয়েছে, যেগুলো থেকে পুনরুদ্ধার সম্ভব।”

Advertisements

RAM (রিটেল, কৃষি ও এমএসএমই) খাতেও ব্যাঙ্ক বিস্তার ঘটাতে চায়। FY25-এ এই খাতে ব্যাঙ্কের ঋণ দাঁড়িয়েছে ৬,০২,৬৮২ কোটি টাকা, যা তাদের মোট ঋণের ৫৬ শতাংশ। চন্দ্রা জানিয়েছেন, এই হার আগামী দিনে ৫৮ শতাংশে নিয়ে যেতে চাইছে ব্যাঙ্ক, যাতে করে কর্পোরেট ঋণে সুদের হারের হ্রাসজনিত ক্ষতিপূরণ RAM খাত থেকেই করা যায়।

“আমরা আশা করছি যে RAM সেগমেন্টের সম্প্রসারণ ব্যাঙ্ককে আরও স্থিতিশীলতা দেবে। রিটেল ও কৃষি ঋণে খেলাপির হার তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায়, এই খাতে ঋণ বৃদ্ধি ব্যাঙ্কের সামগ্রিক ঝুঁকি হ্রাসে সহায়ক হবে,” তিনি বলেন।

চলতি অর্থবছরের শেষে পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক ১০২ শতাংশ নিট লাভ বৃদ্ধি করে চমক দেখিয়েছে। FY25-এ ব্যাঙ্কের নিট লাভ দাঁড়িয়েছে ১৬,৬৩০ কোটি টাকা, যেখানে FY24-এ ছিল ৮,২৪৫ কোটি টাকা। এই লাভ বৃদ্ধির হার ১২টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের মধ্যে সর্বোচ্চ। এছাড়া FY25-এ ব্যাঙ্কের মোট ব্যবসায়িক পরিমাণ পৌঁছেছে ২৬.৮৩ লক্ষ কোটি টাকায়, যা দেশের ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থায় অন্যতম সর্বোচ্চ বৃদ্ধি।

বিশ্লেষকদের মতে, PNB-র এই সাফল্য এর আর্থিক সংস্কার, ঝুঁকিব্যবস্থাপনা এবং পুনরুদ্ধার কৌশলের সুফল। সরকারের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ও MSME খাতকে সহায়তা দেওয়ার উদ্যোগে PNB-র সক্রিয় অংশগ্রহণ ভবিষ্যতের জন্য আরও মজবুত ভিত গড়ে তুলবে বলে আশা করা হচ্ছে।
PNB কর্তৃপক্ষের মতে, সুদের হার কমার ফলে কর্পোরেট ঋণে আয় কিছুটা কমে গেলেও, RAM খাতে ঋণ বৃদ্ধি এবং সঠিকভাবে পরিচালিত পুনরুদ্ধার কৌশল ব্যাঙ্ককে দীর্ঘমেয়াদে লাভবান করবে।