সুনীল ছেত্রীর চোখে ব্লু টাইগার্সদের মিশন ‘ভুল শুধরে নতুন শুরু’

ভারতীয় ফুটবল দলের (Indian Football Team) জীবন্ত কিংবদন্তি সুনীল ছেত্রী (Sunil Chhetri ) আবারও একবার দেশের হয়ে বড় মঞ্চে কিছু করে দেখাতে প্রস্তুত। ৪০ বছর…

Indian Football Team captain Sunil Chhetri

ভারতীয় ফুটবল দলের (Indian Football Team) জীবন্ত কিংবদন্তি সুনীল ছেত্রী (Sunil Chhetri ) আবারও একবার দেশের হয়ে বড় মঞ্চে কিছু করে দেখাতে প্রস্তুত। ৪০ বছর বয়সেও তিনি জাতীয় দলের মূল ভরসা। এবারে তার লক্ষ্য ২০২৭ সালের এএফসি এশিয়ান কাপের যোগ্যতা অর্জন। তার মতে, ভারতের মতো এক ফুটবলপ্রেমী দেশের পক্ষে এই টুর্নামেন্টে খেলা ‘ন্যূনতম’ চাহিদা হওয়া উচিত।

২০০৮ সালের এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপের ফাইনালে ঐতিহাসিক হ্যাটট্রিক করে দেশকে ২০১১ সালের এশিয়ান কাপে নিয়ে যাওয়ার পথ সুগম করেছিলেন ছেত্রী। তারপর ২০১৭ এবং ২০২৩, এবং এবার ২০২৭— টানা চতুর্থবার এই প্রতিযোগিতায় জায়গা করে নেওয়ার লক্ষ্যে এগোচ্ছে ব্লু টাইগার্সরা। তবে এবারের শুরুটা মোটেই ভালো হয়নি। মার্চে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে গোলশূন্য ড্র করে ভারত। সেই ম্যাচ নিয়ে আক্ষেপ আজও রয়েছে ছেত্রীর মনে।

   

সুনীল ছেত্রী বলেন, “বাংলাদেশ ম্যাচের পর প্রথমেই মনে হয়েছিল, আমরা নিজেদের এবং দেশকে হতাশ করেছি। পরে ভিডিও দেখে মনে হল, আরও অনেক কিছু ভালোভাবে করা যেত। ঘরের মাঠে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ম্যাচ জেতা উচিত ছিল আমাদের। একটা পয়েন্ট নিয়ে ম্যাচ শেষ হওয়াটা হতাশাজনক। আমাদের দোষেই সেটা হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা ভিডিও বিশ্লেষণ করেছি, ভুলগুলো নিয়ে আলোচনা করেছি এবং এবার সেই ভুল শুধরে নেওয়ার জন্য মুখিয়ে আছি।”

ভারতের পরবর্তী ম্যাচ জুন ১০ তারিখে হংকং-এর বিরুদ্ধে। তার আগে জুন ৪ তারিখে থাইল্যান্ডের পাথুম থানিতে এক প্রস্তুতি ম্যাচে মুখোমুখি হবে দুই দেশ। কোচ মানোলো মার্কুয়েজ ইতিমধ্যেই দল নিয়ে কলকাতায় প্রস্তুতি শুরু করেছেন মে ১৯ থেকে। ছেত্রীর কথায়, প্রথম পাঁচদিন শারীরিক প্রস্তুতির দিকে জোর দেওয়া হয়েছে।

“অনেকেই বিভিন্ন ফিটনেস লেভেলে ক্যাম্পে এসেছে। তাই সবার ফিজিক্যাল কন্ডিশন এক স্তরে নিয়ে আসাটাই প্রথম ধাপ ছিল। সব খেলোয়াড়ই বেশ ফুরফুরে, আত্মবিশ্বাসী। ভিডিও সেশনে অনেক কিছু শিখেছি। আপাতত সবকিছু পরিকল্পনামাফিক চলছে,” জানান ভারত অধিনায়ক।

হংকং ম্যাচের আগে থাইল্যান্ডে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ট্রেনিং সেশন হবে দলের। তারপর হংকংয়ের উদ্দেশে রওনা দেবে দল। তবে শুধু শারীরিক বা কৌশলগত প্রস্তুতি যথেষ্ট নয় বলেই মনে করেন সুনীল।

Advertisements

“বাংলাদেশ ম্যাচে আমাদের আসল ভুল ছিল, আমরা ম্যাচে উপস্থিতই ছিলাম না— মানসিকভাবে। ম্যাচে নামার আগে যতই পরিকল্পনা হোক না কেন, শেষ পর্যন্ত মাঠে নামতে হবে সেই মানসিকতা নিয়ে। খেলোয়াড়দের বুঝতে হবে যে নিজেদের সেরাটা দেওয়াই মূল লক্ষ্য। তাই প্রথম শর্তই হল মাঠে ‘টার্ন আপ’ করা।”

হংকং সম্পর্কে কিছু ভিডিও ইতিমধ্যে বিশ্লেষণ করা হয়েছে, আরও করা হবে আগামী দিনগুলোয়। তবে ছেত্রীর মতে, আপাতত নিজেদের দিকেই বেশি মনোযোগ দিচ্ছে ভারতীয় দল।

“এই মুহূর্তে আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল নিজেদের খেলাটা বুঝে নেওয়া, নিজেদের প্রস্তুত রাখা। তারপর ধীরে ধীরে প্রতিপক্ষ সম্পর্কে বিশদভাবে চিন্তাভাবনা করা যাবে,” বলেন ছেত্রী।

ভারত এর আগে ১৯৬৪ ও ১৯৮৪ সালে মাত্র দুবার এশিয়ান কাপে অংশ নিয়েছিল। কিন্তু গত এক দশকে ভারতের ফুটবল উন্নয়নের ছাপ পড়েছে এশিয়ান কাপেও। ২০১১, ২০১৯ ও ২০২৩— এই তিনটি টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ ছিল এক বিশাল অগ্রগতি। এবার সেই ধারাবাহিকতাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে চায় ছেত্রী-নেতৃত্বাধীন দল।

“আমাদের জন্য এশিয়ান কাপে খেলা বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত। প্রতি টুর্নামেন্টে খেলে আমরা নিজেদের আরও ভালোভাবে প্রস্তুত করতে পারি, এশিয়ার সেরা দলগুলোর সঙ্গে লড়াই করে নিজেদের উন্নত করতে পারি। তবে আমি ছেলেদের উপর বাড়তি চাপ দিতে চাই না। প্রতিটি ম্যাচ ধাপে ধাপে এগোতে হবে,” বলেন ছেত্রী।

ভারতীয় ফুটবলের ইতিহাসে যিনি ইতিমধ্যেই নিজের নাম অমর করে ফেলেছেন, সেই সুনীল ছেত্রী এখনো থামতে নারাজ। দেশের জার্সিতে, মাঠে শেষ অবধি লড়াই চালিয়ে যাওয়াটাই তার একমাত্র লক্ষ্য। আর ভারতীয় ফুটবলভক্তদের প্রত্যাশা— ছেত্রীর এই শেষ অভিযানেও লেখা হোক আরেকটি সোনালি অধ্যায়।