ইন্ডিয়ান সুপার লিগ (ISL) একাদশ সংস্করণে ইস্টবেঙ্গলের (East Bengal) পারফরম্যান্স ফুটবলপ্রেমীদের মনে হতাশার ছাপ রেখে গিয়েছে। মরসুমের শুরু ও শেষ দুই সময়েই টানা চারটি করে ম্যাচে হারের মুখ দেখতে হয়েছে দলকে। এই হতাশাজনক পরিস্থিতি নিয়ে মুখ খুলেছেন লাল-হলুদের প্রাক্তন স্প্যানিশ কোচ কার্লেস কুয়াদ্রাত (Carles Cuadrat)। দ্য টেলিগ্রাফকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি ক্লাব পরিচালনা থেকে সমর্থকদের মনোভাব – সবকিছু নিয়েই খোলামেলা আলোচনা করেছেন।
২০২৩-২৪ মরসুমের শুরুতে ইস্টবেঙ্গলের দায়িত্বে আসেন বার্সেলোনার প্রাক্তন ডিফেন্ডার কুয়াদ্রাত। তাঁর কোচিংয়ে দল বহুদিন পর সাফল্যের স্বাদ পায়। ২০২৪ জানুয়ারিতে জেতে কালিঙ্গ সুপার কাপ। সেই প্রতিযোগিতার গ্রুপ স্টেজে মোহনবাগান সুপার জায়ান্টকে হারিয়েই ইস্টবেঙ্গল নিজেদের ক্ষমতা প্রমাণ করেছিল। তবে, সেই গতি বেশিদিন ধরে রাখতে পারেনি। ২০২৪-২৫ মরসুমের শুরুতে টানা চার হারের পর তাঁকে বরখাস্ত করা হয়। তাতে অবস্থার উন্নতি না হলেও, কোচ বদলে ক্লাব কর্তৃপক্ষ যেন দায় ঝেড়ে ফেলতে চেয়েছিল।
“মরসুমের শুরু এবং শেষ – দুটোতেই টানা হারের মুখ দেখতে হয়েছে,” বলেন কুয়াদ্রাত। “আমি চলে যাওয়ার পরও দল ভালো ফল করতে পারেনি। আমাদের প্রথম মরসুমে যে উন্নতির ইঙ্গিত ছিল, তা ধরে রাখা গেল না – সেটা খুবই দুঃখজনক।”
সুপার কাপ জয়ের পর দলের প্রতি প্রত্যাশা আকাশচুম্বী হয়ে উঠেছিল, সেটা স্বীকার করে নেন কুয়াদ্রাত। তবে তিনি দাবি করেন, বড় ক্লাব মানেই চাপে থাকা এবং অস্থিরতা। তাই তিনি বলেন, “ম্যানেজমেন্ট আমার উপর ভরসা রেখেছিল, কিন্তু বড় ক্লাবগুলিতে ধৈর্য থাকে না বেশিক্ষণ। আমি বিশ্বাস করতাম আমাদের দল ভালো করত, যদি একটু সময় পাওয়া যেত। কিন্তু ইস্টবেঙ্গল সবসময় তাড়াহুড়ো করে সিদ্ধান্ত নেয়।”
সমর্থকদের মনোভাব নিয়েও তিনি খোলাখুলি বলেন, “যে সমর্থকরা এক সময় আমাকে ‘প্রফেসর’ বলে সম্বোধন করত, তারাই ফল খারাপ হলে ভিলেন বানাতে দেরি করেনি। বড় ক্লাব মানেই সমর্থকদের আবেগে ওঠা-নামা থাকবে, কিন্তু কখনও কখনও সেটা দলের ক্ষতিই ডেকে আনে।”
একটি বিতর্কিত সিদ্ধান্ত ছিল স্প্যানিশ মিডফিল্ডার বোরহা হেরেরাকে ছেড়ে দেওয়া। ক্লাব ম্যানেজমেন্টের আপত্তি সত্ত্বেও কুয়াদ্রাত জানুয়ারির ট্রান্সফার উইন্ডোতে তাঁকে এফসি গোয়াতেযেতে দেন। পরবর্তীতে সেই বোরহা ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধেই হ্যাটট্রিক করে ম্যাচ জেতান। কুয়াদ্রাত জানান, “বোরহা স্পষ্ট বলেছিল যে ও গোয়াতে থাকতে চায়। তার পরিবার সেখানেই স্বচ্ছন্দ। কেউ থাকতে না চাইলে তাকে জোর করে রাখার কোনও মানে হয় না।”
প্রাক্তন বার্সেলোনা ফুটবলার কুয়াদ্রাত আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোকপাত করেন – তরুণ খেলোয়াড়দের সুযোগ পাওয়া। তাঁর কথায়, “আমাদের সময়ে আমরা তরুণদের তুলে আনতাম, জাতীয় দলে পাঠাতাম। এখন দেখা যাচ্ছে, শুধু পিভি বিষ্ণু কিছুটা খেলেছে। সায়ন ব্যানার্জি, আমান সিকে, শ্যামল বেসরার মতো ফুটবলাররা কোথায় হারিয়ে গেল? আগে ইস্টবেঙ্গল থেকে ছয়-সাত জন জাতীয় দলে থাকত। এখন কেবল আনোয়ার আলি ও নাওরেম মহেশ সিংয়েরই কিছুটা সম্ভাবনা আছে।”
এই সব ব্যর্থতা ও দিশাহীনতার মধ্যেই ইস্টবেঙ্গল যেন নিজেদের ভিত নড়িয়ে ফেলেছে। কোচ বদল, খেলোয়াড়দের নিয়ে অনিশ্চয়তা এবং তরুণ প্রতিভা অবহেলিত হওয়া – সবমিলিয়ে ক্লাব আবার নতুন করে ভাবতে বাধ্য হচ্ছে। কুয়াদ্রাতের এই সাক্ষাৎকার যেন শুধুমাত্র আক্ষেপ নয়, বরং ইস্টবেঙ্গলের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় একটা সতর্কবার্তা।