অল ইন্ডিয়া মহিলা কংগ্রেসের সভাপতি অলকা লাম্বা (alka-lamba) রবিবার নয়াদিল্লির এআইসিসি অফিসে একটি সাংবাদিক সম্মেলনে ‘অপারেশন সিঁদুর’-কে ভুল করে ‘অপারেশন ব্লু স্টার’ বলে উল্লেখ করায় বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছেন। এই সাংবাদিক সম্মেলনটি ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সাংসদ রামচন্দ্র জাঙ্গড়ার পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার শিকার এবং বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের নিন্দা জানাতে আয়োজিত হয়েছিল।
অলকা লাম্বা অভিযোগ করেন (alka-lamba)
সাংবাদিক সম্মেলনে অলকা লাম্বা (alka-lamba) অভিযোগ করেন, বিজেপি নেতারা ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর কৃতিত্ব নেওয়ার চেষ্টায় পহেলগাঁও হামলার শিকার এবং বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের প্রতি সম্মান হারিয়েছেন। তিনি বলেন, “বিজেপি নেতারা পহেলগাঁও হামলার শিকারদের প্রতি সংবেদনশীলতা হারিয়ে ফেলেছেন এবং ‘অপারেশন সিঁদুর ’-এর মাধ্যমে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে চাইছেন।”
সম্মেলনে বিজেপি সাংসদ বিজয় শাহের কর্নেল সোফিয়া কুরেশির বিরুদ্ধে বিতর্কিত মন্তব্যের একটি ভিডিও প্রদর্শিত হয়। এছাড়া, মধ্যপ্রদেশের উপ-মুখ্যমন্ত্রী জগদীশ দেবদা’র মন্তব্যও উল্লেখ করা হয়, যিনি বলেছিলেন, ‘অপারেশন সিঁদুর’ চালু করার জন্য ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী এবং সমগ্র দেশ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সামনে মাথা নত করে।
সাংবাদিক সম্মেলনের সময় অলকা লাম্বা (alka-lamba) দাবি করেন, “সংসদের অধিবেশন ডাকা উচিত এবং সরকারের উচিত উভয় কক্ষে ‘অপারেশন ব্লু স্টার’-এর বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দেওয়া।” এই ভুল উল্লেখ তাৎক্ষণিকভাবে বিতর্কের সৃষ্টি করে, কারণ ‘অপারেশন ব্লু স্টার’ ১৯৮৪ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নির্দেশে স্বর্ণ মন্দিরে সামরিক অভিযান ছিল, যা পহেলগাঁও হামলার প্রতিক্রিয়ায় চালু ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর সঙ্গে সম্পূর্ণ ভিন্ন।
ইউক্রেনে সবচেয়ে বড় এয়ার স্ট্রাইক রাশিয়ার, বাড়ছে হতাহতের সংখ্যা
অলকা লাম্বা তাঁর ভুল স্বীকার করেন
পরে, অলকা লাম্বা (alka-lamba) তাঁর ভুল স্বীকার করেন এবং এক্স-এ একটি পোস্টে বলেন, “আজ আমার সাংবাদিক সম্মেলনে যে বিষয়গুলি আমি উত্থাপন করেছি, তা এতটাই গুরুতর ছিল যে ‘বদ-জবান পার্টি’ বিজেপির নেতারা আমার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন এবং প্রতিটি শব্দ নোট করেছেন। আমি তাদের ধন্যবাদ জানাই।
যদি আমার মুখ থেকে একবার ‘অপারেশন সিঁদুর ’-এর পরিবর্তে অন্য কিছু বলে ফেলি, তাহলে বিজেপি সেই ভুলকে ইস্যু করে তুলেছে, যেন তারা প্রকৃত বিষয় থেকে দৃষ্টি সরানোর অজুহাত খুঁজে পেয়েছে।” তিনি এই ভুলকে “মশার কামড়ের” সঙ্গে তুলনা করে বিজেপির সমালোচনার প্রতি কটাক্ষ করেন।
বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র কি বলেছেন
বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র শেহজাদ পুনাওয়ালা এই ভুলকে “দুষ্টুমি” এবং “মানসিকতার ভুল” হিসেবে বর্ণনা করেন(alka-lamba) । তিনি এক্স-এ পোস্ট করে বলেন, “এটি অজ্ঞতা নয়, এটি ইচ্ছাকৃত দুষ্টুমি এবং মানসিকতার ভুল। আমাদের সশস্ত্র বাহিনীকে হেয় করাই কংগ্রেসের উদ্দেশ্য। অলকা লাম্বা, খড়গে, মঞ্জুনাথ, চান্নি এবং অন্যদের পর এটি করছেন। অপারেশন ব্লু স্টার?” তিনি আরও বলেন, এই ভুল কংগ্রেসের সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি সম্মানহানির প্রমাণ।
সাংবাদিক সম্মেলনটি মূলত পহেলগাঁও হামলার নিহত দের প্রতি বিজেপি সাংসদ রামচন্দ্র জাঙ্গড়ার বিতর্কিত মন্তব্যের নিন্দা জানাতে আয়োজিত হয়েছিল। জাঙ্গড়া বলেছিলেন, ২২ এপ্রিলের পহেলগাঁও হামলায় নিহত পর্যটকদের জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াই করা উচিত ছিল এবং বিশেষ করে যে নারীরা তাদের স্বামীদের হারিয়েছেন, তাঁরা “বীরাঙ্গনার মনোভাব, উদ্দীপনা এবং সাহসের অভাব” দেখিয়েছেন।
বিজেপি সাংসদ রামচন্দ্র জাঙ্গড়ার বিতর্কিত মন্তব্য
তিনি দাবি করেন, যদি পর্যটকরা প্রধানমন্ত্রী মোদির অগ্নিবীর প্রকল্পের প্রশিক্ষণ নিতেন, তাহলে হতাহতের সংখ্যা কম হতো। এই মন্তব্য ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে, এবং কংগ্রেস নেতা দীপেন্দর সিং হুডা, সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব এবং কংগ্রেসের সোশ্যাল মিডিয়া প্রধান সুপ্রিয়া শ্রীনাথ এটিকে “অপমানজনক” এবং “নারীবিদ্বেষী” বলে নিন্দা করেন।
জাঙ্গড়া তাঁর মন্তব্যের পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেন, তিনি রানী অহল্যাবাঈ হোলকারের ৩০০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ভিওয়ানিতে একটি অনুষ্ঠানে কথা বলছিলেন এবং তাঁর বক্তব্য নির্দিষ্ট প্রেক্ষাপটে ছিল। তিনি বলেন, “যদি পহেলগাঁও নিহতদের স্ত্রীরা রানী অহল্যাবাঈ বা রানী লক্ষ্মীবাঈয়ের মতো বীরাঙ্গনা হতেন, তাহলে তারা হাত জোড় করে দাঁড়াতেন না।” তিনি আরও দাবি করেন, অগ্নিবীর প্রশিক্ষণ থাকলে হতাহতের সংখ্যা কম হতো।
রাজনৈতিক বিতর্ক
অলকা লাম্বার (alka-lamba) ভুল উল্লেখ এবং বিজেপির প্রতিক্রিয়া রাজনৈতিক বিতর্ককে আরও তীব্র করেছে। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ জাঙ্গড়ার মন্তব্যকে “লজ্জাজনক” বলে সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী মোদীর নীরবতাকে তাঁর নীরব সমর্থন হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
তিনি দাবি (alka-lamba) করেন, পহেলগাঁও হামলায় নিরাপত্তা ব্যর্থতার জন্য কাউকে দায়ী করার পরিবর্তে বিজেপি শিকারদের দোষারোপ করছে। সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব জাঙ্গড়ার মন্তব্যকে “ঘৃণ্য” বলে আখ্যায়িত করে বিজেপিকে “নারীবিদ্বেষী মানসিকতার জলাভূমি” বলে সমালোচনা করেন।
পহেলগাঁও হামলা, যেখানে ২৬ জন পর্যটক নিহত হয়েছিলেন, তা জাতীয় ক্ষোভের সৃষ্টি করেছিল। জঙ্গিরা ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে পর্যটকদের লক্ষ্য করে এবং ‘কালিমা’ পড়তে বলে অমুসলিমদের হত্যা করেছিল।
‘অপারেশন সিঁদুর’
এই হামলার জবাবে ভারত ৭ মে ‘অপারেশন সিঁদুর চালু করে, যেখানে পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে নয়টি জঙ্গি ঘাঁটিতে নির্ভুল হামলা চালানো হয়। এই অভিযানকে সরকার “ফোকাসড, পরিমিত এবং অ-উত্তেজক” বলে বর্ণনা করেছে, যা পাকিস্তানের সামরিক ঘাঁটিগুলিকে লক্ষ্য না করে শুধুমাত্র জঙ্গি পরিকাঠামোর উপর আঘাত হানে।
অলকা লাম্বার (alka-lamba) ভুল উল্লেখ এই সংবেদনশীল বিষয়ে রাজনৈতিক বিতর্ককে আরও উসকে দিয়েছে। তবে, তিনি তাঁর সাংবাদিক সম্মেলনে পহেলগাঁও হামলার শিকারদের প্রতি বিজেপির অসংবেদনশীল মন্তব্য এবং সরকারের নিরাপত্তা ব্যর্থতার বিষয়টি উত্থাপন করেছেন, যা জাতীয় আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ। এই ঘটনা ভারতের সন্ত্রাসবিরোধী অবস্থান এবং রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে চলতে থাকা উত্তেজনার প্রতিফলন ঘটায়।