কেন্দ্রীয় সরকারের সাফাই অভিযান অব্যাহত, ঝাড়খণ্ডে নিকেশ আরও ৩ মাও নেতা

ঝাড়খণ্ডের লাতেহার জেলার ইচাবার জঙ্গলে শনিবার সকালে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে তীব্র গোলাগুলির ঘটনায় জেজেএমপি (ঝাড়খণ্ড জনমুক্তি পরিষদ)-এর সুপ্রিমো পাপ্পু লোহরা-সহ দুই মাওবাদী (maoist-leaders) নিহত হয়েছেন।…

maoist-leaders killed in jharkhand

ঝাড়খণ্ডের লাতেহার জেলার ইচাবার জঙ্গলে শনিবার সকালে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে তীব্র গোলাগুলির ঘটনায় জেজেএমপি (ঝাড়খণ্ড জনমুক্তি পরিষদ)-এর সুপ্রিমো পাপ্পু লোহরা-সহ দুই মাওবাদী (maoist-leaders) নিহত হয়েছেন। এই সংঘর্ষে একজন মাওবাদী এবং একজন পুলিশ কর্মী আহত হয়েছেন। আহত পুলিশ সদস্য আবধ সিংকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিমানে করে রাঁচির রাজেন্দ্র ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্সেস (রিমস)-এ স্থানান্তর করা হয়েছে।

নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য একটি বড় সাফল্য (maoist-leaders)

এই ঘটনা নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য একটি বড় সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, কারণ পাপ্পু লোহরার (maoist-leaders)মাথায় ১০ লাখ টাকার পুরস্কার ঘোষিত ছিল। ঝাড়খণ্ড পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স (সিআরপিএফ)-এর যৌথ অভিযানে এই সংঘর্ষ সংঘটিত হয়। পালামু ডিআইজি ওয়াই এস রমেশ জানিয়েছেন, “নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে গোলাগুলিতে দুই মাওবাদী নিহত হয়েছে।

   

তাদের দেহ উদ্ধার করা হয়েছে।” নিহতদের মধ্যে পাপ্পু লোহরা ছাড়াও প্রভাত গঞ্জু নামে আরেকজন মাওবাদী (maoist-leaders) ছিলেন, যার মাথায় ৫ লাখ টাকার পুরস্কার ছিল। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, একজন আহত মাওবাদীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তার কাছ থেকে একটি ইনসাস রাইফেল উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়াও, আরেকজন মাওবাদীর মৃত্যুর সম্ভাবনা রয়েছে, যদিও তার দেহ এখনও উদ্ধার করা যায়নি।

পুলিশ সুপারিনটেনডেন্ট (এসপি) কুমার গৌরব

লাতেহার পুলিশ সুপারিনটেনডেন্ট (এসপি) কুমার গৌরবের নেতৃত্বে এই অভিযান পরিচালিত হয়। পুলিশের কাছে গোপন সূত্রে খবর আসে যে, পাপ্পু লোহরা (maoist-leaders)এবং তার সঙ্গীরা ইচাবার জঙ্গলে একটি বড় হামলার পরিকল্পনা করছে।

এই তথ্যের ভিত্তিতে সিআরপিএফ এবং ঝাড়খণ্ড পুলিশের একটি যৌথ দল জঙ্গল ঘিরে ফেলে এবং তল্লাশি অভিযান শুরু করে। ঝাড়খণ্ড পুলিশের মুখপাত্র এবং আইজি (অপারেশন) অমোল ভি হোমকার জানান, “লাতেহার থানায় জেজেএমপি-র গতিবিধি সম্পর্কে তথ্য পাওয়া গিয়েছিল। এসপি কুমার গৌরবের নেতৃত্বে একটি অভিযান পরিকল্পনা করা হয়।”

তিনি আরও বলেন, “জঙ্গলে তল্লাশির সময় জেজেএমপি দলটি নিরাপত্তা বাহিনীর উপর গুলি চালায়। আমাদের দলও পাল্টা গুলি চালায়।” এই তীব্র গোলাগুলির সময় পাপ্পু লোহরা এবং প্রভাত গঞ্জু নিহত হন। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, পাপ্পুর বিরুদ্ধে প্রায় ৩৬টি ফৌজদারি মামলা ছিল, যেখানে তিনি হত্যা, চাঁদাবাজি এবং পুলিশের উপর হামলার মতো অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। প্রভাত গঞ্জুর বিরুদ্ধেও এক ডজনেরও বেশি মামলা ছিল।

‘টিম ইন্ডিয়ার মতো কাজ করলে ভারতের বিকাশ সম্ভব’, নীতি আয়োগে বিবৃতি মোদীর

আহত পুলিশ কনস্টেবল আবধ সিং

এই সংঘর্ষে আহত পুলিশ কনস্টেবল আবধ সিংকে রাঁচির রিমস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে, যেখানে তার অবস্থা স্থিতিশীল বলে জানা গেছে। আহত মাওবাদীকেও স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে। ঝাড়খণ্ডের ডিজিপি অনুরাগ গুপ্তার নির্দেশনায় এই অভিযান পরিচালিত হয়। পুলিশ এখনও জঙ্গলে তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে, কারণ ধারণা করা হচ্ছে যে আরও কিছু মাওবাদী এলাকায় লুকিয়ে থাকতে পারে।

Advertisements

পাপ্পু লোহরা এই গোষ্ঠীর নেতা

জেজেএমপি, যা সিপিআই (মাওবাদী)-এর (maoist-leaders)একটি বিচ্ছিন্ন গোষ্ঠী, লাতেহার এবং পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতে সক্রিয়। এই সংগঠনটি চাঁদাবাজি, ঠিকাদারদের উপর হামলা এবং সরকারি সম্পত্তির ক্ষতিসাধনের মতো ঘটনায় জড়িত। পাপ্পু লোহরা এই গোষ্ঠীর নেতা হিসেবে এলাকায় আতঙ্কের প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, তিনি নিজেকে “অজেয়” মনে করতেন এবং তার দলের কোনও সদস্য তার নির্দেশের বিরুদ্ধে যাওয়ার সাহস দেখাত না।

২০১৮ সালে পাপ্পু লোহরার একটি ছবি ভাইরাল হয়েছিল, যেখানে তিনি পুলিশ কর্মীদের সঙ্গে পোজ দিচ্ছিলেন। সেই সময় গুজব ছড়িয়েছিল যে তিনি পুলিশের সঙ্গে মাওবাদী-বিরোধী অভিযানে সহযোগিতা করছেন। তবে, পরবর্তীতে জেজেএমপি পুলিশের জন্য হুমকি হয়ে ওঠে। ২০১৫ সালে পালামুর বাকোরিয়ায় একটি সংঘর্ষে পুলিশ ১২ জন মাওবাদীকে হত্যার দাবি করেছিল, যা পরে সিবিআই তদন্তের আওতায় আসে।

জেজেএমপি-ই ওই হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী

অভিযোগ উঠেছিল যে জেজেএমপি-ই ওই হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী ছিল, এবং পুলিশ এটিকে নিজেদের কৃতিত্ব হিসেবে প্রচার করেছিল। এই ঘটনা জেজেএমপি-র জন্য একটি বড় ধাক্কা হলেও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এই গোষ্ঠীর এখনও এক ডজনেরও বেশি কট্টর সদস্য রয়েছে। পাপ্পু লোহরা এবং প্রভাত গঞ্জুর মৃত্যু সংগঠনটির কাঠামোতে বড় ক্ষতি করলেও এটি সম্পূর্ণরূপে নির্মূল হয়নি। পুলিশ এখনও এলাকায় তল্লাশি অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে এবং অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারের চেষ্টা করছে।

এই অভিযান নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য একটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য। গত কয়েকদিনে ঝাড়খণ্ডে মাওবাদী-বিরোধী (maoist-leaders)অভিযান তীব্রতর হয়েছে। শুক্রবার রাতেও একটি অভিযানে দুই মাওবাদী নিহত হয়েছিল। পুলিশের এই ধারাবাহিক অভিযান লাতেহার এবং আশপাশের জেলাগুলোতে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

এই ঘটনা ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ। মাওবাদী কার্যকলাপ দীর্ঘদিন ধরে ঝাড়খণ্ড, ছত্তিশগড় এবং অন্যান্য রাজ্যে চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে। পাপ্পু লোহরার মতো নেতাদের নির্মূল করা সরকারের মাওবাদী-বিরোধী নীতির একটি অংশ। তবে, পুলিশ এবং স্থানীয় প্রশাসনের সামনে এখনও চ্যালেঞ্জ রয়েছে, কারণ জেজেএমপি-র মতো গোষ্ঠীগুলো এখনও সম্পূর্ণরূপে দমন করা যায়নি।

এই সংঘর্ষের পর লাতেহার এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে। পুলিশ এবং সিআরপিএফ-এর যৌথ অভিযান অব্যাহত রয়েছে, এবং জঙ্গল এলাকায় আরও তল্লাশি চালানো হচ্ছে। এই ঘটনা স্থানীয়দের মধ্যে আশা জাগিয়েছে যে, মাওবাদী কার্যকলাপ কমে আসবে এবং এলাকায় শান্তি ফিরে আসবে।