পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (mamata) নীতি আয়োগের সাম্প্রতিক বৈঠকে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যা রাজনৈতিক মহলে তীব্র বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বিরোধী দলগুলো, বিশেষ করে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি), এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করে দাবি করেছে যে, মমতার এই পদক্ষেপ রাজ্যের স্বার্থকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং পশ্চিমবঙ্গ কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
গত বছর এই একই অনুষ্ঠানে মাইক বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ করে বৈঠকে ছেড়ে বেরিয়ে যান বাংলার মুখ্যমন্ত্রী (mamata)। তবে এবার তিনি নিজেই এই নীতি আয়োগ বৈঠকে থাকবেন না বলে স্থির করেছেন।
তৃণমূল কংগ্রেস পাল্টা জবাব দিয়ে বলেছে (mamata)
তৃণমূল কংগ্রেস এই অভিযোগের পাল্টা জবাব দিয়ে বলেছে, মমতার (mamata) এই বয়কট বাংলার মানুষের সম্মান রক্ষার জন্য একটি সাহসী পদক্ষেপ। নীতি আয়োগের বৈঠক, যেখানে দেশের বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাথে উন্নয়ন, অর্থনীতি এবং নীতিগত বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন, তা রাজ্যগুলোর জন্য তাদের দাবি-দাওয়া তুলে ধরার একটি গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চ।
বিরোধীদের কাছে একটি বড় হাতিয়ার
এই বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (mamata)অনুপস্থিতি বিরোধীদের কাছে একটি বড় হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নীতি আয়োগের বৈঠক বয়কট করে রাজ্যের স্বার্থকে বিপন্ন করেছেন। এই বৈঠকে রাজ্যের উন্নয়নের জন্য কেন্দ্রীয় তহবিল এবং প্রকল্পের বিষয়ে আলোচনা হয়। তিনি না গিয়ে বাংলার মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন।”
“রাজনৈতিক অভিমান”
বিজেপির আরেক নেতা এবং বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী আরও এক ধাপ এগিয়ে মমতার এই সিদ্ধান্তকে “রাজনৈতিক অভিমান” হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, “নীতি আয়োগের বৈঠক রাজ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই বয়কটের ফলে পশ্চিমবঙ্গ কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে। তিনি শুধু নিজের রাজনৈতিক স্বার্থ দেখছেন, রাজ্যের উন্নয়নের কথা ভাবছেন না।”
শুভেন্দু আরও অভিযোগ করেন যে, মমতার (mamata)এই সিদ্ধান্ত কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের মধ্যে আরও দূরত্ব সৃষ্টি করবে, যার খেসারত দিতে হবে রাজ্যের সাধারণ মানুষকে। অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেস মমতার এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে বলেছে যে, এটি কেন্দ্রীয় সরকারের “বাংলা-বিরোধী” নীতির বিরুদ্ধে একটি প্রতিবাদ।
তৃণমূলের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন
তৃণমূলের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, “কেন্দ্রীয় সরকার বারবার পশ্চিমবঙ্গের প্রাপ্য তহবিল আটকে রেখেছে। নীতি আয়োগের বৈঠকে রাজ্যের দাবিগুলো কখনও গুরুত্ব পায় না। মুখ্যমন্ত্রী এই বৈঠক বয়কট করে বাংলার মানুষের সম্মান রক্ষা করেছেন।” তৃণমূলের দাবি, কেন্দ্রীয় সরকারের “পক্ষপাতমূলক” আচরণের বিরুদ্ধে এই বয়কট একটি স্পষ্ট বার্তা। গত বছরের একটি পোস্টে মমতা নিজেও বলেছিলেন, “নীতি আয়োগের বৈঠক বয়কট করে আমি বাংলার মানুষের সম্মানে মাথা নত করিনি।”
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মমতার এই সিদ্ধান্তের পেছনে রাজনৈতিক কৌশলও কাজ করছে। আগামী ২০২৬ সালে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন। এই পরিস্থিতিতে মমতা কেন্দ্র-বিরোধী অবস্থান জোরদার করে তৃণমূলের ভোটব্যাঙ্ককে আরও শক্তিশালী করতে চাইছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (mamata)এই বয়কট রাজ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে, কারণ নীতি আয়োগের মতো মঞ্চে রাজ্যের দাবি তুলে ধরার সুযোগ হারিয়েছে। তবে, তিনি এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে তাঁর সমর্থকদের কাছে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের বার্তা দিতে চেয়েছেন।”
নীতি আয়োগের বৈঠকে অনুপস্থিতির ফলে পশ্চিমবঙ্গ কেন্দ্রীয় প্রকল্প এবং তহবিল বণ্টনের ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশেষ করে, গ্রামীণ উন্নয়ন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং অবকাঠামোর মতো ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সহায়তার জন্য রাজ্যের দাবি উত্থাপনের সুযোগ কমে গেছে। বিরোধীরা দাবি করেছেন, এর ফলে রাজ্যের সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
পরবর্তী মরসুমে এই ক্রিকেটারকে নিয়ে চমক নাইটদের!
তৃণমূলের নেতারা জানিয়েছেন
এদিকে, তৃণমূলের (mamata)নেতারা জানিয়েছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনার জন্য অন্য পথ খুঁজে নেবেন। তিনি ইতিমধ্যে বিভিন্ন জেলা সফরে গিয়ে স্থানীয় সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা করছেন এবং রাজ্যের প্রশাসনিক পর্যালোচনা বৈঠকে সরাসরি জনগণের অভিযোগ শুনছেন। তবে, বিরোধীরা বলছেন, এই পদক্ষেপ কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে সরাসরি আলোচনার বিকল্প হতে পারে না।
সাম্প্রতিক সময়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন নীতির বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। বিশেষ করে, ভোটার তালিকায় কারচুপি, ওয়াকফ বিল এবং সীমান্ত নিরাপত্তার মতো বিষয়ে তিনি কেন্দ্রকে নিশানা করেছেন। তাঁর এই বৈঠক বয়কটকে অনেকে এই বিরোধেরই একটি ধারাবাহিকতা হিসেবে দেখছেন। তবে, এই সিদ্ধান্তের ফলে রাজ্যের উন্নয়নের সম্ভাবনা কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে।
সাধারণ মানুষের মধ্যেও এই ঘটনা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। কেউ কেউ মমতার এই পদক্ষেপকে রাজ্যের স্বার্থ রক্ষার জন্য সাহসী বলছেন, আবার অনেকে মনে করছেন, এর ফলে রাজ্যের উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি হতে পারে। একজন কলকাতার বাসিন্দা বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী যদি কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনায় না বসেন, তাহলে আমাদের রাজ্যের জন্য প্রয়োজনীয় তহবিল কীভাবে আসবে? আমরা চাই, রাজ্যের উন্নয়ন অব্যাহত থাকুক।”
আগামী দিনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (mamata)এই বিতর্কের জবাবে কী পদক্ষেপ নেন, তা নিয়ে সবার নজর রয়েছে। নীতি আয়োগের বৈঠকে তাঁর অনুপস্থিতি কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের মধ্যে নতুন টানাপোড়েন সৃষ্টি করেছে, যার প্রভাব রাজ্যের রাজনীতি এবং উন্নয়নের ক্ষেত্রে কতটা পড়বে, তা সময়ই বলবে। তবে, এই ঘটনা রাজ্যের রাজনৈতিক মঞ্চে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে, যা আগামী নির্বাচনের আগে আরও তীব্র হতে পারে।