India China borderOperation Sindhur Sparks: উত্তরবঙ্গে ফের রাজনৈতিক তৎপরতা তুঙ্গে। আগামী ২৯ মে ঝটিকা সফরে পশ্চিমবঙ্গে আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ঠিক তার পরপরই, ৩১ মে রাজ্যে পা রাখতে চলেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। একে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ক্রমাগত সফর, তাতে আবার বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে উত্তরবঙ্গ, যা নিঃসন্দেহে আগামী লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতির দিকেই ইঙ্গিত করছে।
প্রধানমন্ত্রীর সফর ঘিরে উত্তেজনা ইতিমধ্যেই চরমে উঠেছে আলিপুরদুয়ারে। দুপুর ১২টায় প্যারেড গ্রাউন্ডে তাঁর একটি সরকারি কর্মসূচি রয়েছে, পাশাপাশি রয়েছে একটি জনসভাও। এই সফর বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পরে এই প্রথমবার বাংলায় পা রাখছেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর কর্মসূচির স্থান নির্বাচিত হয়েছে হাসিমারা বায়ুসেনা ছাউনির কাছাকাছি, যা ডোকলামের একেবারে নীচে অবস্থিত। ভূরাজনৈতিক দিক থেকেও এই সফর গুরুত্বপূর্ণ, কারণ সম্প্রতি নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রে এসেছে ‘চিকেনস নেক’ করিডোর ও উত্তর-পূর্ব ভারতের সাত বোন রাজ্যগুলি।
আন্তর্জাতিক রাজনীতির পরিপ্রেক্ষিতেও এই সফর বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ময়দানে সাম্প্রতিক পরিবর্তন এবং সেই দেশের সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্কের বর্তমান প্রেক্ষাপটে এই সফর কেবলমাত্র রাজ্য রাজনীতিতে নয়, আন্তর্জাতিক স্তরেও এক বিশেষ বার্তা বহন করছে বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীর সফরের রেশ কাটতে না কাটতেই, ৩১ মে, শনিবার রাতে রাজ্যে আসবেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তাঁর সফরে দুটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি কর্মসূচির সম্ভাবনা রয়েছে। প্রথমটি ১ জুন আরামবাগে একটি সমবায় সম্পর্কিত অনুষ্ঠান এবং দ্বিতীয়টি সীমান্ত সংক্রান্ত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের একটি কর্মসূচি। এই দুই সরকারি মঞ্চ থেকেই রাজ্যের উন্নয়ন ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা নিয়ে কেন্দ্রের পরিকল্পনার রূপরেখা তুলে ধরতে পারেন তিনি।
তবে অমিত শাহের সফরের মূল আকর্ষণ হতে চলেছে নিউটাউনের একটি হোটেলে বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক। সেখানে রাজ্যের আসন্ন সাংগঠনিক রদবদল, লোকসভা নির্বাচনের কৌশল ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। রাজ্যে বিজেপির রাজনৈতিক পরিকাঠামো মজবুত করার জন্য এই বৈঠক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
এই দুই শীর্ষ নেতার সফরের মধ্যে দিয়ে কার্যত স্পষ্ট যে, বিজেপি এবার রাজ্যে এক নতুন ধাঁচে রাজনৈতিক প্রচার শুরু করতে চলেছে। উত্তরবঙ্গকে কেন্দ্র করে একদিকে যেমন কৌশলগত অবস্থান ও নিরাপত্তা ইস্যু তুলে ধরা হচ্ছে, অন্যদিকে রাজনৈতিক ভাবে এখানকার ভোটব্যাঙ্ককেও লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই সফর শুধুই প্রশাসনিক বা সরকারি কর্মসূচির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং আগামী লোকসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যে বিজেপির মনোবল জোগানোর এক কৌশল হিসেবেও দেখা যেতে পারে। পাশাপাশি, তৃণমূল কংগ্রেস ও অন্যান্য আঞ্চলিক দলগুলির কাছে এই বার্তা পৌঁছানোও লক্ষ্য যে, কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এখনও বাংলার প্রতি নজর রাখছে এবং যে কোনও পরিস্থিতিতে তারা সক্রিয় ভূমিকা নিতে প্রস্তুত।
সব মিলিয়ে বলা যায়, মে-জুন মাসের এই সফরদ্বয় রাজ্য রাজনীতির আবহে এক নতুন উত্তাপের সঞ্চার করেছে। এখন দেখার, এই সফরের বাস্তব প্রভাব কতটা পড়ে রাজ্যের রাজনৈতিক চালচিত্রে।