বাংলাদেশের (bangladesh) অন্তর্বর্তী সরকার, মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে, কলকাতা কনস্যুলেটে ঈদুল আজহা বা বকরিদের সময় গরু ও ছাগলের কোরবানি নিষিদ্ধ করার নির্দেশ জারির পর তাদের প্রধান কূটনীতিক শাবাব বিন আহমেদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে। ঢাকার সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জানা গেছে , এই নির্দেশ বিতর্কের জন্ম দেওয়ার পর বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রণালয় শাবাব বিন আহমেদকে অবিলম্বে ঢাকায় ফিরে আসার নির্দেশ দেয়।
শাবাব বিন আহমেদ, যিনি জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে, ঈদুল আজহার সময় কলকাতা কনস্যুলেটে বাংলাদেশের ডেপুটি হাই কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করার কথা ছিল, তিনি দায়িত্ব গ্রহণের আগেই পশু কোরবানির প্রথা বন্ধ করার নির্দেশ জারি করেন।
তিনি কলকাতা মিশনের কর্মকর্তাদের এই প্রথা বন্ধ করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলেন। প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুসারে, কনস্যুলেটের কর্মীরা তাকে এই বিষয়ের সংবেদনশীলতা সম্পর্কে সতর্ক করলেও তিনি তাদের উদ্বেগ উপেক্ষা করেন।
বিতর্কের সূত্রপাত (bangladesh)
শাবাব বিন আহমেদের এই নির্দেশ কলকাতা কনস্যুলেটে (bangladesh)৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে পালিত হয়ে আসা কোরবানির ঐতিহ্যের উপর আঘাত হানে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতি বছর কনস্যুলেটে বেশ কয়েকটি গরু ও ছাগল কোরবানি করা হয় এবং এর মাংসের একটি বড় অংশ স্থানীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে বিতরণ করা হয়। এই নির্দেশের ফলে কনস্যুলেটের কর্মীদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ দেখা দেয়, এবং কেউই তার এই অবস্থানের সমর্থনে এগিয়ে আসেননি।
স্থানীয় বাংলাদেশি (bangladesh)সংবাদমাধ্যমে শাবাব বিন আহমেদকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, কলকাতা ছাড়া বাংলাদেশের অন্য কোনো বিদেশি মিশনে বকরিদে কোরবানি পালন করা হয় না এবং এই প্রথা কনস্যুলেটের আশপাশে স্যানিটেশন সমস্যা সৃষ্টি করে।
তিনি তার নির্দেশের পক্ষে বলেন, “আমরা কূটনীতিক হিসেবে আমাদের দেশের সেবা করি। আমাদের যে দেশে পোস্টিং দেওয়া হয়, সেখানকার স্থানীয় পরিবেশ ও প্রেক্ষাপট বিবেচনা করতে হবে। আতিথেয় দেশের রীতিনীতির প্রতি সম্মান জানানো উচিত। কূটনীতিকদের জন্য আতিথেয় দেশের আস্থা অর্জন করা অপরিহার্য।”
শাবাব বিন আহমেদের পটভূমি
শাবাব বিন আহমেদ বর্তমানে নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে বাংলাদেশ (bangladesh)দূতাবাসে মিনিস্টার (পলিটিকাল) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ২০২৪ সালের নভেম্বরে তাকে কলকাতা কনস্যুলেটে ডেপুটি হাই কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এই নিয়োগ বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের কয়েক মাস পরে ঘটে, যখন ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে তার সরকার উৎখাত হয় এবং ইসলামপন্থীরা এই আন্দোলনের নিয়ন্ত্রণ নেয়।
14 জুন পর্যন্ত বিনামূল্যে আপডেট করুন আপনার আধার কার্ড, জেনে নিন কীভাবে
ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের প্রেক্ষাপট
শাবাব বিন আহমেদের এই নির্দেশ এবং তার নিয়োগ বাতিলের ঘটনা ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ইতিমধ্যে উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে ঘটেছে। শেখ হাসিনার সরকারের পতন এবং মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে বাংলাদেশে জঙ্গিদের মুক্তি এবং ইসলামপন্থী মৌলবাদীদের উত্থান ভারতের উদ্বেগ বাড়িয়েছে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ত্রিপুরার আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাই কমিশনে হিন্দুত্ববাদী দলের হামলার ঘটনা দুই দেশের সম্পর্কে আরও জটিলতা যোগ করেছে।
এই ঘটনার পর বাংলাদেশ সরকার ভারতের হাই কমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মাকে ডেকে এই হামলার তীব্র নিন্দা জানায় এবং এটিকে ১৯৬১ সালের ভিয়েনা কনভেনশনের লঙ্ঘন হিসেবে বর্ণনা করে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই ঘটনাকে “গভীরভাবে দুঃখজনক” বলে উল্লেখ করে এবং কূটনৈতিক সম্পত্তির উপর হামলার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়।
কোরবানি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তের প্রভাব
শাবাব বিন আহমেদের (bangladesh)কোরবানি নিষিদ্ধের নির্দেশ কনস্যুলেটের কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে এবং এটি স্থানীয় সম্প্রদায়ের মধ্যেও বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। কলকাতায় বাংলাদেশ কনস্যুলেটে কোরবানির ঐতিহ্য দীর্ঘদিন ধরে পালিত হয়ে আসছে এবং এটি ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক সম্পর্কের একটি অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়। এই নির্দেশকে অনেকে স্থানীয় রীতিনীতি এবং ধর্মীয় সংবেদনশীলতার প্রতি অসম্মান হিসেবে দেখেছেন।
এক্স-এ প্রকাশিত পোস্টে বলা হয়, শাবাব বিন আহমেদের এই নির্দেশ বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পূর্ববর্তী শাসন থেকে দূরে সরে যাওয়ার এবং কূটনৈতিক ভূমিকা পুনর্গঠনের প্রচেষ্টার অংশ হতে পারে। তবে, এই সিদ্ধান্ত কনস্যুলেটের অভ্যন্তরীণ সম্পর্ক এবং ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
বাংলাদেশ সরকারের পদক্ষেপ
ইউনুস সরকার শাবাব বিন (bangladesh)আহমেদের কলকাতায় ডেপুটি হাই কমিশনার হিসেবে নিয়োগ বাতিল করে তাকে ঢাকায় ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছে। এই পদক্ষেপকে অনেকে বাংলাদেশের কূটনৈতিক কৌশলের পরিবর্তন এবং ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠনের প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছেন।
ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের উপর প্রভাব
শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে ইসলামপন্থীদের উত্থান এবং ভারত-বিরোধী বক্তব্যের বৃদ্ধি দুই দেশের সম্পর্ককে জটিল করে তুলেছে। শাবাব বিন আহমেদের এই ঘটনা এই উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ভারত বাংলাদেশে হিন্দু সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা এবং সীমান্ত ব্যবস্থাপনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
শাবাব বিন আহমেদের (bangladesh)কোরবানি নিষিদ্ধের নির্দেশ এবং তার নিয়োগ বাতিল ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের একটি সংবেদনশীল সময়ে ঘটেছে। এই ঘটনা কূটনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে স্থানীয় রীতিনীতি ও সংবেদনশীলতার প্রতি সম্মানের গুরুত্ব তুলে ধরেছে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের এই পদক্ষেপ দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনর্গঠনের একটি প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে, তবে এটি ভবিষ্যতে আরও আলোচনার জন্ম দিতে পারে।