অমানবিক পাকিস্তান, প্রাকৃতিক দুর্যোগেও ভারতীয় বিমানকে পাকিস্তানের আকাশ সীমা ব্যাবহারে নিষেধাজ্ঞা

আবার ও অমানবিকতার পরিচয় দিল পাকিস্তান (pakistan)। দিল্লি থেকে শ্রীনগরগামী  ইন্ডিগো ফ্লাইট 6E-2142 গত ২১ মে, ২০২৫-এ ভয়াবহ ঝড় ও শিলাবৃষ্টির কবলে পড়ে, যার ফলে…

pakistan cancels india flight

আবার ও অমানবিকতার পরিচয় দিল পাকিস্তান (pakistan)। দিল্লি থেকে শ্রীনগরগামী  ইন্ডিগো ফ্লাইট 6E-2142 গত ২১ মে, ২০২৫-এ ভয়াবহ ঝড় ও শিলাবৃষ্টির কবলে পড়ে, যার ফলে বিমানটির নাক (র‍্যাডোম) মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই ফ্লাইটে ২২০ জনেরও বেশি যাত্রী ছিলেন, যার মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের (TMC) সাংসদরাও ছিলেন।

বিমানটি শ্রীনগরে নিরাপদে অবতরণ করলেও, এই ঘটনায় পাইলটের দক্ষতা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা প্রশংসিত হয়েছে। ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ সিভিল এভিয়েশন (ডিজিসিএ) এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে এবং জানিয়েছে যে ভারতীয় বিমানবাহিনীর (আইএএফ) উত্তরাঞ্চলীয় এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (এটিসি) এবং লাহোর এটিসি উভয়ই বিমানটিকে পাকিস্তানের (pakistan)আকাশসীমায় প্রবেশের অনুমতি দিতে অস্বীকার করে।

   

ঝড়ের মধ্যে বিমানের অবস্থান

ডিজিসিএ-র বিবৃতি অনুযায়ী, ফ্লাইট 6E-2142, যা এয়ারবাস A321 নিও (VT-IMD) দ্বারা পরিচালিত হচ্ছিল, পাঞ্জাবের পাঠানকোটের কাছে প্রায় ৩৬,০০০ ফুট উচ্চতায় উড়ছিল যখন এটি একটি প্রচণ্ড ঝড় ও শিলাবৃষ্টির মুখোমুখি হয়। এই ঝড় দিল্লি-এনসিআর এবং উত্তর প্রদেশে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছে, যার ফলে ৫০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং বহু গাছ উপড়ে পড়েছে।

বিমানটি ঝড়ের মধ্যে প্রবেশ করার সময় তীব্র অশান্তি (টার্বুলেন্স) অনুভব করে, যার ফলে যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, বিমানের ভিতরে যাত্রীরা, বিশেষ করে শিশুরা, ভয়ে চিৎকার করছে এবং প্রার্থনা করছে। বিমানের ফিউজলেজে শিলার আঘাতে তীব্র কাঁপুনি সৃষ্টি হয়েছিল।

পাকিস্তানের আকাশসীমায় প্রবেশের অনুমতি প্রত্যাখ্যান (pakistan)

ঝড় এড়াতে বিমানের ক্রু প্রথমে ভারতীয় বিমানবাহিনীর অধীনস্থ উত্তরাঞ্চলীয় এটিসি-র কাছে আন্তর্জাতিক সীমান্তের দিকে বিমানের পথ পরিবর্তনের (ডিভিয়েশন) অনুমতি চায়। সম্প্রতি অপারেশন সিঁদুরের সময় ভারত ও পাকিস্তানের (pakistan)মধ্যে তীব্র উত্তেজনার কারণে এই অনুমতি প্রত্যাখ্যান করা হয়।

এরপর পাইলট লাহোর এটিসি-র কাছে পাকিস্তানের আকাশসীমায় সাময়িকভাবে প্রবেশের অনুমতি চান, কিন্তু সেটিও প্রত্যাখ্যাত হয়। পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে পারস্পরিক আকাশসীমা বন্ধ থাকায় এই প্রত্যাখ্যানের ঘটনা ঘটে।

জাতীয় দলের তিন ফুটবলারের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদী চুক্তির পরিকল্পনায় বাগান!

পাইলটের সিদ্ধান্ত ও চ্যালেঞ্জ

অনুমতি না পাওয়ায় পাইলটের সামনে সীমিত বিকল্প ছিল। ডিজিসিএ-র বিবৃতি অনুযায়ী, পাইলট প্রথমে দিল্লিতে ফিরে যাওয়ার কথা ভেবেছিলেন, কিন্তু ঝড়ের মেঘের খুব কাছে থাকায় এটি নিরাপদ বিকল্প ছিল না। তাই তিনি শ্রীনগরের দিকে সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত পথে ঝড়ের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

ঝড়ের মধ্যে বিমানটি তীব্র উত্থান-পতন (আপড্রাফ্ট ও ডাউনড্রাফ্ট) অনুভব করে, যার ফলে অটোপাইলট সিস্টেম বন্ধ হয়ে যায় এবং বিমানের গতি ওঠানামা করে। ডিজিসিএ জানায়, এই সময় বিমানের অ্যাঙ্গেল অফ অ্যাটাক ফল্ট, অল্টারনেট ল প্রোটেকশন হারানো এবং এয়ারস্পিড ইন্ডিকেশনের অবিশ্বস্ততার মতো সতর্কতা সংকেত সক্রিয় হয়েছিল। এক পর্যায়ে বিমানের অবতরণের হার ৮,৫০০ ফুট প্রতি মিনিটে পৌঁছে যায়, যা অত্যন্ত বিপজ্জনক।

Advertisements

জরুরি অবস্থা ঘোষণা ও নিরাপদ অবতরণ

এই গুরুত্বপূর্ণ পরিস্থিতিতে পাইলটরা ম্যানুয়ালি বিমান নিয়ন্ত্রণ করেন এবং শিলাবৃষ্টি থেকে বেরিয়ে আসার পর শ্রীনগর এটিসি-র কাছে ‘প্যান প্যান’ (জরুরি অবস্থা) ঘোষণা করেন। তারা রাডার ভেক্টরের (রাডারের মাধ্যমে দিকনির্দেশনা) জন্য অনুরোধ করেন এবং অটো থ্রাস্ট সিস্টেম স্বাভাবিকভাবে কাজ করার সময় শ্রীনগর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিরাপদে অবতরণ করেন।

অবতরণের সময় সন্ধ্যা ৬:৩০ টায় বিমানটি কোনো যাত্রী বা ক্রু আহত না হয়ে নিরাপদে পৌঁছায়। অবতরণের পর পরিদর্শনে দেখা যায়, শিলাবৃষ্টির কারণে বিমানের নাকের র‍্যাডোম মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ইন্ডিগোর বিবৃতি

ইন্ডিগো এয়ারলাইন্স এক বিবৃতিতে জানায়, “ইন্ডিগো ফ্লাইট 6E-2142 দিল্লি থেকে শ্রীনগর যাওয়ার পথে হঠাৎ শিলাবৃষ্টির সম্মুখীন হয়। ফ্লাইট এবং কেবিন ক্রু প্রতিষ্ঠিত প্রোটোকল অনুসরণ করে এবং বিমানটি শ্রীনগরে নিরাপদে অবতরণ করে। বিমানবন্দরের দলটি যাত্রীদের সুস্থতা ও আরামকে অগ্রাধিকার দিয়ে তাদের সেবা প্রদান করে। বিমানটি প্রয়োজনীয় পরিদর্শন ও রক্ষণাবেক্ষণের পর ছাড়া হবে।”

ডিজিসিএ-র তদন্ত

ডিজিসিএ এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শুরু করেছে। তদন্তে বিমানের ক্রু-র সিদ্ধান্ত, এটিসি-র প্রতিক্রিয়া এবং আকাশসীমা প্রত্যাখ্যানের কারণগুলি খতিয়ে দেখা হবে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে যাত্রীদের আতঙ্ক এবং বিমানের তীব্র কাঁপুনি প্রকাশ পেয়েছে, যা এই ঘটনার ভয়াবহতা তুলে ধরে।

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার প্রেক্ষাপট

এই ঘটনা ভারত ও পাকিস্তানের (pakistan)মধ্যে চলমান উত্তেজনার মধ্যে ঘটেছে। পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলায় ২৬ জনের মৃত্যুর পর অপারেশন সিঁদুরের মাধ্যমে ভারত পাকিস্তান ও পিওকে-তে জঙ্গি ঘাঁটিতে হামলা চালায়।

এর জবাবে পাকিস্তান ভারতীয় বিমানের জন্য তাদের আকাশসীমা বন্ধ করে দেয়, এবং ভারতও পাকিস্তানি বিমানের জন্য তাদের আকাশসীমা বন্ধ করে। এই পারস্পরিক নিষেধাজ্ঞা ইন্ডিগো ফ্লাইটের পথ পরিবর্তনের অনুমতি প্রত্যাখ্যানের পেছনে একটি প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

পাইলটের প্রশংসা

এই চরম পরিস্থিতিতে পাইলট ক্যাপ্টেন পঙ্কুল নাগ এবং ফার্স্ট অফিসার শোভিত সিং কোহলির দক্ষতা ও শান্ত মনোভাব ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। যাত্রীদের মধ্যে একজন, শেখ সামিউল্লাহ, সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, “দিল্লি থেকে শ্রীনগর ফ্লাইটে আমরা মৃত্যুর মুখ থেকে রক্ষা পেয়েছি। ক্যাপ্টেন ও ক্রুদের প্রতি বিশেষ ধন্যবাদ।”

এই ঘটনা বিমান চলাচলের অপ্রত্যাশিত ঝুঁকি এবং পাইলটের দক্ষতার গুরুত্ব তুলে ধরেছে। ডিজিসিএ-র তদন্ত এই ঘটনার পেছনের কারণ এবং ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি এড়ানোর উপায় খুঁজে বের করবে বলে আশা করা হচ্ছে। পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে আকাশসীমা নিষেধাজ্ঞার প্রেক্ষিতে এই ঘটনা আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল নীতির উপরও নতুন আলোকপাত করেছে।