চাকরিচ্যুতদের ‘হুলিগান’ মন্তব্যে বিতর্কে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, ফুঁসছে আন্দোলনকারীরা

শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে নাম জড়ানো চাকরিহারা আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে কোনও কড়া পদক্ষেপ নেওয়া যাবে না—এমনই স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, এফআইআরে নাম…

Kalyan Banerjee

শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে নাম জড়ানো চাকরিহারা আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে কোনও কড়া পদক্ষেপ নেওয়া যাবে না—এমনই স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, এফআইআরে নাম থাকলেও আন্দোলনকারীদের গ্রেফতার করা যাবে না এবং শিক্ষা দফতরের পাঠানো শোকজ নোটিসও আপাতত কার্যকর করা যাবে না। এই রায়ের পর আশার আলো দেখেছেন বহু চাকরিপ্রত্যাশী। কিন্তু ঠিক সেই সময়ই রাজ্যের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Kalyan Banerjee)মন্তব্যে নতুন করে বিতর্ক দানা বাঁধছে।

শুক্রবার আদালতে সওয়াল করতে গিয়ে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় আন্দোলনকারীদের ‘হুলিগান’ বা ‘গুণ্ডা’ বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “এই হুলিগানদের জন্যই স্তব্ধ হয়ে পড়েছে স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনাল, ভিজিল্যান্স কমিশন এবং এসবিআই-এর শাখা অফিস।” তাঁর এই মন্তব্য ঘিরে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা এবং সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ। প্রশ্ন উঠছে—যাঁরা চাকরি হারানোর ন্যায্যতা প্রমাণে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছেন, তাঁদের কীভাবে গুণ্ডা বলা যায়?

   

আন্দোলনকারীদের একজন বলেন, “সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ছেড়ে আমরা আজ রাস্তায়। মাথার ছাদ ছেড়ে, পরিবার ছেড়ে রাস্তায় বসেছি আমাদের অধিকার আদায়ের জন্য। অথচ আমাদেরই বলা হচ্ছে হুলিগান!” আর এক শিক্ষক আন্দোলনকারী বলেন, “যাঁদের পড়িয়ে মানুষ করেছি, তাঁদেরই আমরা কি এই বার্তা দিচ্ছি যে শিক্ষক হওয়া মানেই অপমানিত হওয়া? এ কেমন সমাজ?”

শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাঝে পুলিশের লাঠিচার্জ, বারবার গ্রেফতার এবং মানসিক হেনস্থার অভিযোগ তুলেছেন আন্দোলনকারীরা। তাঁদের মতে, “যদি কেউ গুণ্ডা হয়, তাহলে সেটা তো প্রশাসনের আচরণে স্পষ্ট। আমরা তো কারও গায়ে হাত দিইনি। আমাদেরই হুলিগান বলা হচ্ছে।”

এদিকে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর মন্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেন, “যেখানে হুলিগান বলার, সেখানে হুলিগান বলতে হবে। ১৫ মে যা হয়েছে, সেটাকে আপনি কী বলবেন? অফিসে ভাঙচুর, চেয়ার ছোড়া, এসব কি হুলিগানিজম নয়?” যদিও তাঁর এই বক্তব্য আরও ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে। অনেকে বলছেন, কয়েকজনের আচরণের দায় সমগ্র আন্দোলনকারী সমাজের ওপর চাপানো অনুচিত।

Advertisements

বিজেপি নেতা সজল ঘোষ এই মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করে বলেন, “এই শিক্ষকরাই কোনও একদিন কল্যাণবাবুকে পড়িয়েছেন। আজ তাঁদেরই হুলিগান বললে সমাজ কী শিখবে? আসলে তৃণমূলের ভেতরের কয়েকজন দুর্নীতিগ্রস্ত শিক্ষককে দেখেই উনি গোটা শিক্ষক সমাজকে অপমান করছেন।”

বিশেষজ্ঞদের মতে, শিক্ষক সমাজের প্রতি এমন অশ্রদ্ধা কেবল রাজনৈতিক মঞ্চে নয়, সমাজে ভুল বার্তা পাঠায়। শিক্ষকতা শুধুমাত্র একটি পেশা নয়, এটি একটি দায়িত্ব ও সম্মানের প্রতীক। সেই সমাজের প্রতিনিধিদের এভাবে হুলিগান বলে দাগিয়ে দেওয়া নিঃসন্দেহে অপমানজনক।

এখন দেখার বিষয়, হাইকোর্টের নির্দেশ এবং এই মন্তব্য ঘিরে তৈরি হওয়া বিতর্ক আগামী দিনে আন্দোলনের গতিপথে কী প্রভাব ফেলে। আপাতত আন্দোলনকারীরা চুপচাপ বসে নেই—তাঁরা আইনি ও সামাজিকভাবে নিজেদের সম্মান ফিরে পাওয়ার লড়াই চালিয়ে যেতে প্রস্তুত।