বাংলাদেশে আবারও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার ছায়া ঘনাচ্ছে। দেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনূসের (Muhammad Yunus) পদত্যাগের সম্ভাবনা ঘিরে জোর জল্পনা শুরু হয়েছে। ওপার বাংলায় যেমন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা উদ্বেগ প্রকাশ করছেন, তেমনই দেশের অন্দরে নানাবিধ গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ স্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছে, পরিস্থিতি আর স্বাভাবিক নয়।
মূলত, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যাঁরা মহম্মদ ইউনূসকে অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে বসিয়েছিলেন, সেই শক্তিগুলোর মধ্যেই এখন বিভাজন দেখা যাচ্ছে। নাহিদ ইসলাম, যিনি সেই আন্দোলনের অন্যতম মুখ এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক, তিনি তড়িঘড়ি ইউনূসের বাসভবন যমুনায় গিয়ে বৈঠক করেন। সেখান থেকেই বেরিয়ে এসে তিনি জানান, ইউনূস সত্যিই পদত্যাগের কথা ভাবছেন।
এই খবর সামনে আসতেই দেশের রাজনৈতিক ময়দানে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠছে—ইউনূস যদি সরে যান, তাহলে দেশ চালাবে কে? বর্তমানে বাংলাদেশে কোনও নির্বাচিত সরকার নেই। বিগত এক বছর ধরে অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনা করছে। এই সরকার গঠনের মূল উদ্দেশ্য ছিল স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান। কিন্তু বাস্তবে সেই নির্বাচন আজও হয়নি। বরং রাজনৈতিক চাপ, প্রশাসনিক অচলাবস্থা ও উন্নয়ন কার্যক্রমে স্থবিরতা ক্রমেই বেড়েছে।
উপদেষ্টা পরিষদের একাধিক সদস্য জানিয়েছেন, ইউনূস সাম্প্রতিক বৈঠকে তাঁর অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, যদি দেশের কাঙ্ক্ষিত সংস্কারই বাস্তবায়ন করতে না পারেন, তবে পদে থাকার অর্থ কী? এই বক্তব্য থেকেই বোঝা যাচ্ছে, তিনি মানসিকভাবে পদত্যাগের সিদ্ধান্তের কাছাকাছি পৌঁছে গেছেন।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হল, ইউনূস সরে গেলে তাঁর স্থলাভিষিক্ত কে হবেন? পর্দার আড়ালে ইতোমধ্যেই আলোচনা শুরু হয়েছে নতুন অন্তর্বর্তী সরকার গঠন নিয়ে। এমনও আশঙ্কা করা হচ্ছে, রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যে সমঝোতা না হলে সেনাবাহিনী অস্থায়ীভাবে শাসনভার গ্রহণ করতে পারে। তবে এই পথ অত্যন্ত বিপজ্জনক। অতীতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় সেনার ভূমিকা নিয়ে জনরোষ তৈরি হয়েছিল। সেই সেনাবাহিনী আবার যদি শাসনে আসে, তাহলে দেশজুড়ে ছাত্র ও নাগরিক আন্দোলনের নতুন ঢেউ শুরু হতে পারে।
বস্তুত, বাংলাদেশ আজ এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে দাঁড়িয়ে। একদিকে রাজনৈতিক স্থবিরতা, অন্যদিকে জনগণের প্রত্যাশা—এই দুইয়ের মাঝে দোদুল্যমান সরকারের ভবিষ্যৎ। মহম্মদ ইউনূসের সিদ্ধান্ত শুধু তাঁর নিজস্ব অবস্থান নয়, বরং গোটা দেশের দিকনির্দেশক হয়ে উঠতে পারে। তাঁর পদত্যাগ করলে কেবল সরকার নয়, গণতন্ত্র, সংবিধান এবং দেশের ভবিষ্যৎ পথচলা নতুন করে নির্ধারিত হবে।
তাই এখন গোটা দেশের দৃষ্টি নিবদ্ধ রয়েছে এক ব্যক্তির উপর—মহম্মদ ইউনূস। তিনি কী সিদ্ধান্ত নেন, সেটাই ঠিক করে দেবে, বাংলাদেশে গণতন্ত্র আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে, না কি অস্থিরতার আরও গভীরে তলিয়ে যাবে।