নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ২০১৬ সালের প্যানেল বাতিল হওয়ায় প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক ও অশিক্ষক চাকরি হারিয়েছেন। সেই থেকে শুরু আন্দোলনের। কখনও ধর্মতলা, কখনও বিকাশ ভবন—রাজপথে দিনের পর দিন অবস্থান বিক্ষোভে (SSC Protest) সামিল হয়েছেন ‘যোগ্য’ চাকরিহারা। তাঁদের দাবি, যাঁরা মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরি পেয়েছিলেন, তাঁরা যেন নতুন করে পরীক্ষা না দিয়ে পুনর্নিয়োগ পান। এই দাবিতে আন্দোলন থামেনি একদিনের জন্যও। তবে ১৫ মে বিকাশ ভবনের সামনে আন্দোলন ঘিরে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। পুলিশি হস্তক্ষেপে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। অভিযোগ ওঠে, আন্দোলনের নামে তাণ্ডব চালানো হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে কলকাতা হাই কোর্টে মামলা ওঠে। আদালতের রায়ে এখন আন্দোলনের নতুন ঠিকানা হল সেন্ট্রাল পার্কের সুইমিং পুল লাগোয়া অঞ্চল। বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ জানিয়ে দিয়েছেন, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের অধিকার আছে চাকরিহারাদের, তবে তা হতে হবে নিয়ম ও শৃঙ্খলার মধ্যে। তাই বিকাশ ভবনের পরিবর্তে সেন্ট্রাল পার্কে আন্দোলনের অনুমতি দেওয়া হল। তবে কিছু শর্ত সাপেক্ষে।
প্রথমত, আন্দোলনে সর্বাধিক ২০০ জন একসঙ্গে অংশ নিতে পারবেন পর্যায়ক্রমে। দ্বিতীয়ত, আন্দোলনকারীদের প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো—যেমন বায়ো টয়লেট ও পানীয় জলের ব্যবস্থা করতে হবে প্রশাসনকে। এছাড়াও, আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে আদালতে প্রতিনিধিদের একটি তালিকা জমা দিতে হবে। আদালত জানিয়েছে, এই তালিকার ভিত্তিতে আন্দোলনের দায়িত্ব নির্ধারিত হবে এবং শৃঙ্খলা বজায় রাখা সহজ হবে।
আদালত শুধু আন্দোলনকারীদের জন্য নয়, পুলিশের জন্যও বার্তা দিয়েছে। বিচারপতি পরামর্শ দিয়েছেন, পুলিশ যেন ‘ধীরে চলো’ নীতিতে চলে, যাতে অযথা উত্তেজনা না বাড়ে এবং মানবিক দৃষ্টিকোণ বজায় থাকে। পাশাপাশি, ১৫ মে-র ঘটনার জেরে বিধাননগর পুলিশ ও মধ্যশিক্ষা পর্ষদের পদক্ষেপের বিরুদ্ধেও কড়া অবস্থান নেয় হাই কোর্ট। জানিয়ে দেয়, পুলিশ এখনই কোনও কড়া ব্যবস্থা নিতে পারবে না। পর্ষদও কোনও শোকজ নোটিস পাঠাতে পারবে না। আদালত স্পষ্ট করে জানায়, গোটা বিষয়টিকে মানবিক দৃষ্টিতে দেখতে হবে।
এদিকে, এখনও বিকাশ ভবনের সামনে কিছু ‘যোগ্য’ চাকরিহারা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁদের বক্তব্য, সেন্ট্রাল পার্কে সরলেই আন্দোলনের তীব্রতা হারাবে। জনদৃষ্টির বাইরে চলে যাবে তাঁদের প্রতিবাদ। তাঁরা চান, রাজ্য সরকারের নজরে রাখতে আন্দোলন বিকাশ ভবনের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে হোক। তবে আদালতের নির্দেশে তাঁরা আপাতত একপ্রকার বাধ্য হচ্ছেন সেন্ট্রাল পার্কে আন্দোলন চালিয়ে যেতে।
প্রসঙ্গত, সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বলা হয়েছে, শিক্ষকরা ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্কুলে যেতে পারবেন এবং তাঁরা বেতন পাবেন। তবে অশিক্ষক কর্মীরা এখন সম্পূর্ণরূপে চাকরিহারা। ফলে তাঁদের অসন্তোষ আরও প্রকট। যদিও এসএসসিকে নতুন করে পরীক্ষা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত, কিন্তু ‘যোগ্য’ চাকরিহারারা নতুন করে পরীক্ষা দিতে নারাজ। তাঁদের দাবি, পুরনো ভিত্তিতে পুনর্বহাল করতে হবে। সেই দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা।
এই আন্দোলন এখন শুধুই চাকরির লড়াই নয়, এক সামাজিক ন্যায় ও সম্মানের প্রশ্ন হয়ে উঠেছে। আদালতের হস্তক্ষেপে আপাতত কিছুটা স্থিতি এলেও, চূড়ান্ত সমাধান এখনও অধরা। ‘যোগ্য’ চাকরিহারারা আশায় আছেন, একদিন ন্যায়ের জয় হবেই।