নর্থইস্টকে স্বপ্ন দেখিয়ে ৭৫০০০ কোটি লগ্নি আম্বানির

রাজনৈতিক ক্ষেত্রে এই মুহূর্তে আলোচনার শীর্ষে উত্তর পূর্ব ভারত (northeast)। বাংলাদেশ থেকে চীন সবার নজরেই এখন নর্থইস্ট (northeast)ভিত্তিক ব্যবসা তৈরি করার মনোবাসনা। ঠিক এই পরিস্থিতিতেই…

northeast investing by reliance

রাজনৈতিক ক্ষেত্রে এই মুহূর্তে আলোচনার শীর্ষে উত্তর পূর্ব ভারত (northeast)। বাংলাদেশ থেকে চীন সবার নজরেই এখন নর্থইস্ট (northeast)ভিত্তিক ব্যবসা তৈরি করার মনোবাসনা। ঠিক এই পরিস্থিতিতেই নয়া দিল্লির ভারত মণ্ডপমে ২৩ ও ২৪ মে অনুষ্ঠিত ‘রাইজিং নর্থইস্ট ইনভেস্টরস সামিট ২০২৫’-এ রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর মুকেশ আম্বানি উত্তর-পূর্বাঞ্চলের (northeast)উন্নয়নের জন্য একটি যুগান্তকারী ঘোষণা করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, আগামী পাঁচ বছরে রিলায়েন্স এই অঞ্চলে ৭৫,০০০ কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগ করবে।

এই বিনিয়োগের ফলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ২৫ লক্ষেরও বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে তিনি আশা করছেন। আম্বানি বলেন, “আমরা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ৪৫ মিলিয়ন ভাই-বোনের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে চাই।” গত ৪০ বছরে রিলায়েন্স এই অঞ্চলে প্রায় ৩০,০০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে, এবং এই নতুন ঘোষণা অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের পথে একটি বড় পদক্ষেপ।

   

উত্তর-পূর্বাঞ্চলে রিলায়েন্সের বিনিয়োগ পরিকল্পনা (northeast)

মুকেশ আম্বানি জানিয়েছেন, রিলায়েন্স রিটেল উত্তর-পূর্বাঞ্চলে উচ্চমানের এফএমসিজি (ফাস্ট মুভিং কনজিউমার গুডস) পণ্যের কারখানা স্থাপনের জন্য বিনিয়োগ করবে। এছাড়াও, এই অঞ্চলের অসাধারণ কারুশিল্প-ভিত্তিক অর্থনীতিকে প্রচার করার উদ্দেশ্যে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হবে। এই পদক্ষেপ স্থানীয় কারিগরদের কাজকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে তুলে ধরবে এবং অঞ্চলের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবে।

জিও’র ৫জি সম্প্রসারণ

ডিজিটাল সংযোগের ক্ষেত্রে, আম্বানি জানান, জিও ইতিমধ্যেই উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ৯০ শতাংশ জনগণের কাছে পৌঁছে গেছে এবং বর্তমানে এই অঞ্চলে ৫০ লক্ষেরও বেশি ৫জি গ্রাহক রয়েছে। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, চলতি বছরের মধ্যে এই সংখ্যা দ্বিগুণ করা হবে। এই উদ্যোগ উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে ডিজিটাল ভারতের সঙ্গে আরও নিবিড়ভাবে সংযুক্ত করবে এবং অঞ্চলের তরুণদের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করবে।

বর্জ্যভূমি থেকে সম্পদভূমি

মুকেশ আম্বানি উত্তর-পূর্বাঞ্চলের (northeast)বিশাল ‘বর্জ্যভূমি’কে ‘সম্পদভূমি’তে রূপান্তরিত করার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন। এই লক্ষ্যে, রিলায়েন্স ৩৫০টি সমন্বিত কম্প্রেসড বায়োগ্যাস (সিবিজি) প্ল্যান্ট স্থাপন করবে। এই প্রকল্পগুলি কৃষি ও জৈব বর্জ্যকে শক্তির উৎসে রূপান্তরিত করে অঞ্চলের পরিবেশগত ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখবে। এই উদ্যোগ কেবলমাত্র পরিবেশ সংরক্ষণে সহায়তা করবে না, বরং স্থানীয় সম্প্রদায়ের জন্য নতুন আয়ের উৎস তৈরি করবে।

‘জল বন্ধ করলে দম বন্ধ করব’ , পাক সেনার হুমকিতে হাফিজ সইদের ছায়া

স্বাস্থ্যসেবায় রিলায়েন্সের প্রতিশ্রুতি

স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে, মুকেশ আম্বানি উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে (northeast)একটি স্বাস্থ্যসেবা ও গবেষণা কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি জানান, মণিপুরে ইতিমধ্যেই একটি ১৫০ শয্যার বিশিষ্ট ক্যান্সার হাসপাতাল স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও, মিজোরাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সহযোগিতায় স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য জিনোমিক ডেটা ব্যবহার করা হচ্ছে।

Advertisements

গুয়াহাটিতে একটি অত্যাধুনিক মলিকিউলার ডায়াগনস্টিক্স অ্যান্ড রিসার্চ ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে, যা ভারতের বৃহত্তম জিনোম সিকোয়েন্সিং ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যাবগুলির মধ্যে একটি হবে। এই উদ্যোগগুলি উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে উন্নত স্বাস্থ্যসেবা ও গবেষণার কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে।
ক্রীড়াক্ষেত্রে উন্নয়ন

ক্রীড়াক্ষেত্রে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে, রিলায়েন্স ফাউন্ডেশন অঞ্চলের আটটি রাজ্যের সঙ্গে মিলে অলিম্পিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করবে। এই কেন্দ্রগুলি তরুণ ক্রীড়াবিদদের প্রশিক্ষণ দেবে এবং তাদের ভবিষ্যতে অলিম্পিকে পদক জয়ের জন্য প্রস্তুত করবে। আম্বানি বলেন, “আমরা চাই আমাদের তরুণরা আগামী দিনে অলিম্পিকে ভারতের জন্য গৌরব বয়ে আনুক।”

রাইজিং নর্থইস্ট ইনভেস্টরস সামিট

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উদ্বোধনের মাধ্যমে শুরু হওয়া ‘রাইজিং নর্থইস্ট ইনভেস্টরস সামিট ২০২৫’ উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে সুযোগের ভূমি হিসেবে তুলে ধরার লক্ষ্য নিয়ে আয়োজিত হয়েছে। এই দুই দিনের সম্মেলনের উদ্দেশ্য হল বিশ্বব্যাপী এবং দেশীয় বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করা। এই সম্মেলন উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরার পাশাপাশি অঞ্চলের সাংস্কৃতিক ও প্রাকৃতিক সম্পদের প্রচার করছে।

উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ভবিষ্যৎ

মুকেশ আম্বানির এই ঘোষণা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের (northeast)জন্য একটি নতুন যুগের সূচনা করতে পারে। রিলায়েন্সের বিনিয়োগ শুধুমাত্র অর্থনৈতিক উন্নয়নই নয়, বরং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে। স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, ক্রীড়া এবং ডিজিটাল সংযোগের ক্ষেত্রে এই উদ্যোগগুলি অঞ্চলের জনগণের জীবনমান উন্নত করবে। আম্বানির দৃষ্টিভঙ্গি উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে ভারতের অর্থনীতির একটি শক্তিশালী কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

এই সম্মেলন এবং রিলায়েন্সের বিনিয়োগ পরিকল্পনা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সম্ভাবনাকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরবে এবং অঞ্চলের তরুণদের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। আগামী পাঁচ বছরে এই বিনিয়োগ কীভাবে অঞ্চলের মুখ চেহারা বদলে দেয়, তা দেখার জন্য সবাই অপেক্ষায় রয়েছে।