সরকারকে লাভের টাকা দেয় RBI! কিন্তু কেন? জানুন এই ৫টি বড় কারণ

ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক (RBI) আজ আর্থিক বছর ২০২৪-২৫ (FY25)-এর জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে কতটা লভ্যাংশ বা উদ্বৃত্ত অর্থ হস্তান্তর করবে, তা ঘোষণা করতে চলেছে। এই ঘোষণা…

RBI Directs Banks

ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক (RBI) আজ আর্থিক বছর ২০২৪-২৫ (FY25)-এর জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে কতটা লভ্যাংশ বা উদ্বৃত্ত অর্থ হস্তান্তর করবে, তা ঘোষণা করতে চলেছে। এই ঘোষণা আসবে RBI-এর সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ডিরেক্টরস-এর বৈঠকের পর, যেখানে এই অর্থের পরিমাণ চূড়ান্ত করা হবে।

গত বছর RBI ইতিহাসে রেকর্ড পরিমাণ ২.১ লক্ষ কোটি টাকা লভ্যাংশ দিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকারকে। সেই অঙ্ক ছিল FY23-এ দেওয়া ৮৭,৪১৬ কোটি টাকার তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি। এবার এই অঙ্ক আরও বাড়তে পারে বলে অনুমান করছেন অর্থনীতিবিদরা।

   

বিশেষজ্ঞদের মতে, FY25-এর জন্য RBI প্রায় ২.৫ থেকে ৩ লক্ষ কোটি টাকা পর্যন্ত লভ্যাংশ দিতে পারে, যা সরকারের জন্য একটি বড় আর্থিক সহায়তা হয়ে উঠবে। এর ফলে কেন্দ্রের বিভিন্ন ব্যয় পরিকল্পনা, বিশেষ করে কল্যাণমূলক প্রকল্প ও অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগে গতি আসবে এবং একই সঙ্গে রাজকোষ ঘাটতি নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করবে।

কেন RBI লভ্যাংশ দেয়?
RBI তার বিভিন্ন আর্থিক কার্যক্রম থেকে প্রতি বছর যে উদ্বৃত্ত অর্থ (surplus) আয় করে, তার একটি অংশ সরকারকে লভ্যাংশ বা dividend হিসাবে দেয়। এটি একটি নিয়মিত প্রক্রিয়া এবং “Economic Capital Framework” (ECF)-এর আওতায় পরিচালিত হয়।

২০১৯ সালে প্রাক্তন গভর্নর বিমল জালান-এর নেতৃত্বাধীন কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ECF-এ কিছু পরিবর্তন আনা হয়। এই কাঠামো অনুসারে, RBI তার মোট ব্যালান্স শিটের ৬.৫% থেকে ৫.৫% পর্যন্ত অর্থ “Contingent Risk Buffer” (CRB)-এর অধীনে রিজার্ভ হিসেবে রেখে বাকি উদ্বৃত্ত অর্থ সরকারকে হস্তান্তর করতে পারে।

RBI কীভাবে আয় করে?
RBI যদিও একটি বাণিজ্যিক ব্যাংক নয়, তবুও বিভিন্ন উৎস থেকে বিপুল পরিমাণ আয় করে থাকে। এর মধ্যে প্রধান কয়েকটি হল:

1. সরকারি বন্ড থেকে সুদের আয় –
RBI সরকারকে ধার দেওয়ার বদলে যে বন্ড বা ট্রেজারি বিল রাখে, সেগুলির সুদ থেকে অনেকটা আয় করে।

2. বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ ব্যবস্থাপনা –
RBI তার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ (ডলার, ইউরো, সোনা ইত্যাদি) থেকে সুদ ও মূলধনী মুনাফা অর্জন করে।

3. ওপেন মার্কেট অপারেশন (OMO) –
RBI বাজারে সরকারি সিকিউরিটি কেনাবেচার মাধ্যমে ট্রেডিং ইনকাম অর্জন করে।

Advertisements

4. লিকুইডিটি ব্যবস্থাপনা অপারেশন –
RBI যখন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলিকে অস্থায়ীভাবে টাকা ধার দেয় (যেমন রেপো অপারেশন), তখন তার ওপর সুদ আদায় করে।

5. মুদ্রা ছাপানো ও ‘Seigniorage’ –
নোট ছাপাতে RBI-এর যে খরচ হয় তার চেয়ে অনেক গুণ বেশি মূল্যবান সে নোটটি। এই ব্যবধানটিই RBI-এর আয়ের একটি উৎস।

6. সার্ভিস ফি ও চার্জ –
সরকার ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের জন্য যে পরিষেবা দেয় RBI, তার জন্য ফি আদায় করে।ইকোনমিক ক্যাপিটাল ফ্রেমওয়ার্ক কী?
ECF হল RBI-এর সেই নীতি কাঠামো যা নির্ধারণ করে কতটা উদ্বৃত্ত অর্থ কেন্দ্রকে হস্তান্তর করা হবে এবং কতটা RBI তার নিজস্ব রিজার্ভ হিসেবে রেখে দেবে। এতে RBI-এর আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং সরকারের অর্থনৈতিক প্রয়োজনে সহায়তা করার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা হয়।

গত সপ্তাহেই RBI-এর সেন্ট্রাল বোর্ড ECF-র সাম্প্রতিক পর্যালোচনা করেছে। মূলত RBI-এর ব্যালান্স শিট, আর্থিক ঝুঁকি ও বর্তমান আর্থিক অবস্থার উপর ভিত্তি করেই এই পর্যালোচনা হয়।

আজকের জন্য কী প্রত্যাশা?
চলতি আর্থিক বছরের কেন্দ্রীয় বাজেটে RBI এবং অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে মোট ২.৫৬ লক্ষ কোটি টাকা লভ্যাংশ পাওয়ার অনুমান করা হয়েছিল। তবে সাম্প্রতিক তথ্য বলছে, RBI একাই এবার ২.৫ থেকে ৩ লক্ষ কোটি টাকা পর্যন্ত লভ্যাংশ দিতে পারে।

এই রেকর্ড লভ্যাংশ হস্তান্তর অর্থনীতিতে একদিকে যেমন সরকারের ব্যয়ের ভার হালকা করবে, তেমনই পরোক্ষভাবে রাজস্ব ঘাটতি নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সাহায্য করবে। ফলে সরকারের জন্য এটি একটি দারুণ সুযোগ হতে চলেছে নির্বাচনী বছরের প্রাক্কালে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে বাড়তি আয়, সোনার মূল্যবৃদ্ধি, এবং ঋণপত্রের উপর বেশি সুদ আদায়—সব মিলিয়ে RBI-এর আয় আগের তুলনায় বেশি হয়েছে, যার ফলশ্রুতিতেই লভ্যাংশের পরিমাণও রেকর্ড ছুঁতে চলেছে।

RBI-এর আজকের এই লভ্যাংশ হস্তান্তরের ঘোষণা দেশের অর্থনীতির পরিপ্রেক্ষিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি সরকারের রাজস্ব পরিস্থিতিকে যেমন শক্তিশালী করবে, তেমনই বাজার ও বিনিয়োগকারীদের কাছেও একটি ইতিবাচক বার্তা দেবে যে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক আর্থিকভাবে সুরক্ষিত এবং শক্ত ভিতের উপর দাঁড়িয়ে আছে।