Gold price in Kolkata: ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সোনা ভোক্তা দেশ হিসেবে, আবারও প্রমাণ করেছে যে সোনা এখানকার সংস্কৃতি ও অর্থনীতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। চীনকে ছাড়িয়ে না গেলেও, ভারতের গ্রাম থেকে শহর—সবখানেই সোনার গুরুত্ব অপরিসীম। বিয়ের মরসুম হোক বা কোনো শুভ উপলক্ষ, সোনার উপস্থিতি এখানে বাধ্যতামূলক বললেই চলে।
ভারতে সোনার দাম প্রধানত নির্ভর করে আন্তর্জাতিক বাজার ও ডলারের মূল্যের ওপর। যেহেতু অধিকাংশ সোনাই আমদানিকৃত, ফলে আমদানি শুল্ক ও বিভিন্ন কর এই দামের উপর যথেষ্ট প্রভাব ফেলে। বর্তমান পরিস্থিতিতে, ডলারের মূল্যবৃদ্ধি এবং বৈশ্বিক অনিশ্চয়তার কারণে ভারতের বাজারে সোনার দাম আশানুরূপ ঊর্ধ্বমুখী।
ভারতের প্রধান ১০টি শহরে আজকের সোনার দাম (প্রতি গ্রাম)
- দিল্লি:
২২ ক্যারেট – ৮,৯৫৫ টাকা| ২৪ ক্যারেট – ৯,৭৬৮ টাকা
(এই মুহূর্তে দিল্লি ও লখনউয়ে সর্বোচ্চ দাম দেখা যাচ্ছে) - লখনউ:
২২ ক্যারেট – ৮,৯৫৫ টাকা| ২৪ ক্যারেট – ৯,৭৬৮ টাকা - চেন্নাই:
২২ ক্যারেট – ৮,৯৪০ টাকা| ২৪ ক্যারেট – ৯,৭৫৩ টাকা - বেঙ্গালুরু, মুম্বই, পুনে, কলকাতা, হায়দরাবাদ:
২২ ক্যারেট – ৮,৯৪০ টাকা| ২৪ ক্যারেট – ৯,৭৫৩ টাকা
(এই পাঁচটি শহরে সোনার দাম অভিন্ন এবং তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল) - ইন্দোর:
২২ ক্যারেট – ৮,৯৪৫ টাকা| ২৪ ক্যারেট – ৯,৭৫৮ টাকা - আহমেদাবাদ:
২২ ক্যারেট – ৮,৯৪৫ টাকা| ২৪ ক্যারেট – ৯,৮১২ টাকা
(২৪ ক্যারেট সোনার দামে আহমেদাবাদে সবচেয়ে বেশি পার্থক্য দেখা যাচ্ছে)
এই পরিসংখ্যান স্পষ্টভাবে দেখায় যে সারা দেশে সোনার দাম কিছুটা ভিন্ন হলেও সাধারণভাবে এটি ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, মুদ্রাস্ফীতি এবং শেয়ার বাজারের ওঠানামার মাঝে সোনা এখনো এক ‘সেফ হ্যাভেন’ বা নিরাপদ বিনিয়োগ মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত।
সোনার চাহিদার কারণ ও বিনিয়োগমূল্য
ভারতীয় পরিবারগুলির জন্য সোনা শুধুই অলংকার নয়, এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ। বিশেষ করে গ্রামের মানুষজন এখনো ব্যাংক বা শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের চেয়ে সোনা কেনাকাটাকে বেশি নিরাপদ মনে করেন। এছাড়া, অর্থনৈতিক মন্দা বা মুদ্রাস্ফীতির সময় সোনার দাম সাধারণত বাড়ে, ফলে এটি রিটার্নসের ক্ষেত্রেও লাভজনক প্রমাণিত হয়।
চলতি বছরে আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম বেড়েছে কারণ ডলার শক্তিশালী হয়েছে, মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার বাড়িয়েছে এবং ইউক্রেন যুদ্ধের মতো আন্তর্জাতিক সংকট বাজারে অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। ভারতের প্রেক্ষাপটে, আমদানি শুল্ক প্রায় ১৫% এবং জিএসটি ৩% থাকায়, অভ্যন্তরীণ বাজারে দাম আরও বেশি।
বাজার বিশ্লেষকদের মতে
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, আগামী মাসগুলোতেও সোনার দাম এমন উচ্চতায় বজায় থাকবে। দেশের মুদ্রাস্ফীতি ও রাজস্ব ঘাটতি যদি আরও বাড়ে, তবে এই ধাতুর মূল্য আরও বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি, আসন্ন উৎসব মৌসুম এবং বিয়ের ঋতুও এই চাহিদাকে ত্বরান্বিত করবে।
ভারতে সোনার প্রতি মানুষের ভালোবাসা যুগ যুগ ধরে চলমান। বর্তমান অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে, যেখানে বাজার অস্থির ও অনিশ্চিত, সোনা সেখানে স্থিতিশীল ও আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছে। দিল্লি, লখনউ কিংবা আহমেদাবাদ—সব শহরেই আজ সোনার দাম সাধারণ মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রে। এটাই প্রমাণ করে যে ভারতীয়দের কাছে সোনা কেবল এক টুকরো ধাতু নয়, বরং তা অর্থনৈতিক নিরাপত্তার অন্যতম স্তম্ভ।