এশিয়ান কাপ ২০২৭ যোগ্যতা অর্জন পর্বে ভারতের সামনে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ ১০ জুন হংকং বিরুদ্ধে। তার আগে জাতীয় দলের অনুশীলন চলছে কলকাতার এআইএফএফ ন্যাশনাল সেন্টার অফ এক্সেলেন্সে। এই অনুশীলন শিবির থেকেই অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার সন্দেশ ঝিঙ্গান (Sandesh Jhingan) জানিয়ে দিলেন, দলের ছন্দে ফেরার জন্য প্রয়োজন একমাত্র সমষ্টিগত প্রচেষ্টা।
গত মার্চে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গোলশূন্য ড্রয়ের পর ভারতের পারফরম্যান্স নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে, তখন দলের অন্যতম সিনিয়র সদস্য হিসাবে সামনে আসেন ঝিঙ্গান। নিজের দায়িত্ব স্বীকার করে নিয়ে বলেন, “আমরা জানি কোথায় ভুল হচ্ছে। তবে এই মুহূর্তে কাউকে দোষারোপ করার সময় নয়। ফরোয়ার্ড গোল না করলে রাগ করা অর্থহীন, কারণ আমরা হয়তো মিডফিল্ডে বল দিতে পারিনি, মিডফিল্ডাররা যথাযথ বল পৌঁছে দিতে পারেনি বক্সে। এটা একটা চেইন প্রক্রিয়া।”
সন্দেশের স্পষ্ট বক্তব্য, “একজন ফুটবলারের জীবনে এমন সময় আসে, যখন ফল অনুকূলে আসে না। কিন্তু তাতে হাল ছেড়ে দিলে চলবে না। ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। এখন দরকার একসঙ্গে থেকে নিজেদের সেরাটা দেওয়া।”
গত বছর কোনও আন্তর্জাতিক ম্যাচ জিততে পারেনি ভারত। ২০২৪ সালে ১১টি ম্যাচ খেলে জয়শূন্য থেকেছে দল। তবে মার্চে মালদ্বীপের বিরুদ্ধে ৩-০ ব্যবধানে জয় এনে দিয়ে সেই দুর্দিনের ইতি ঘটে। এরপর বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গোল করতে না পারলেও রক্ষণভাগে ভালোই সংগঠিত ছিল দল, যার কৃতিত্ব সন্দেশ, আনোয়ার এবং শুভাশীষদের।
এবার হংকং বিরুদ্ধে ম্যাচ। সন্দেশ মনে করিয়ে দেন, “২০২২ সালে আমরাই হংকংকে ৪-০ গোলে হারিয়েছিলাম। তবে এখন অনেক কিছু বদলেছে। ওদের কোচ এখন অ্যাশলে ওয়েস্টউড, যিনি ভারতীয় ফুটবলে পরিচিত মুখ। ওর স্টাইল, স্ট্র্যাটেজি আমাদের জানা আছে। তাই প্রস্তুতি নিতে সুবিধা হচ্ছে, কিন্তু আত্মতুষ্টির কোনও জায়গা নেই।”
এফসি গোয়ার হয়ে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের সুবাদে এবার জাতীয় দলের রক্ষণে বাড়তি ভরসা হয়েছেন সন্দেশ। তার কোচ মানোলো মার্কুয়েজই এখন ভারতের কোচ। সেই প্রসঙ্গে ঝিঙ্গান বলেন, “ক্লাব ও জাতীয় দলের স্ট্র্যাটেজি আলাদা হলেও কোচের স্টাইল বুঝে নিতে আমার সময় লাগছে না। এটা বাড়তি সুবিধা দিচ্ছে।”
ক্যাম্পে এখন প্রায় সব খেলোয়াড়ই হাজির। অসুস্থতা কাটিয়ে বুধবার যোগ দিয়েছেন মিডফিল্ডার আশিক কুরুনিয়ান। শুধু রাহুল ভেকে এখনও দলের সঙ্গে যোগ দেননি, তিনি সদ্য বাবা হয়েছেন। ২৩ মে তিনি ক্যাম্পে যোগ দেবেন বলে আশা। এরপর ২৮ মে থাইল্যান্ড সফরে যাবে দল, ৪ জুন প্রীতি ম্যাচে মুখোমুখি হবে স্বাগতিকদের।
এই ম্যাচগুলিকে ঘিরেই চলছে প্রস্তুতি। থিঙ্কট্যাঙ্ক চাইছে জেলা দলগুলোর বিরুদ্ধেও ম্যাচ খেলে কম্বিনেশন মজবুত করতে। নৈহাটিতে সম্ভবত জেলার একটি দলের সঙ্গে ম্যাচ খেলবে ভারত। সেখানে সৌভিক চক্রবর্তী, প্রণয় হালদারদের মতো ঘরোয়া তারকাদের দেখা যেতে পারে।
সন্দেশের বিশ্বাস, “টিম বন্ডিং আমাদের অন্যতম শক্তি। কোচিংয়ের সময় কম থাকলেও আমরা একসঙ্গে খুব দ্রুত মানিয়ে নিতে পারি। ক্লাবের স্ট্র্যাটেজি থেকে বেরিয়ে কোচের ফর্মুলায় মানিয়ে নিতে যত বেশি সময় পাওয়া যায়, তত ভালো।”
সবশেষে ভারতের অন্যতম সিনিয়র ফুটবলারের বার্তা, “আমাদের লক্ষ্য একটাই, এশিয়ান কাপে যোগ্যতা অর্জন। সেটা নিশ্চিত করতে হলে শুধু রক্ষণ বা আক্রমণ নয়, গোটা দলকে একসঙ্গে ভালো খেলতে হবে। দলের সবাই যদি নিজের দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করে, তাহলে গোল আসবেই, জয় আসবেই।”
১০ জুনের ম্যাচ ভারতের কাছে শুধু একটি ম্যাচ নয়, এটি এশিয়ান কাপে যোগ্যতা অর্জনের লড়াইয়ের টার্নিং পয়েন্ট। আর সেই লড়াইয়ে সন্দেশ ঝিংগানদের কাছে অস্ত্র একটাই “একতা”।