নিউ ইয়র্ক টাইমসের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, ট্রাম্প প্রশাসন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের (Harvard University) বিদেশি ছাত্র ভর্তির ক্ষমতা নিষিদ্ধ করেছে। এই পদক্ষেপটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের (ডিপার্টমেন্ট অফ হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বা ডিএইচএস) চলমান তদন্তের অংশ হিসেবে নেওয়া হয়েছে। হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোয়েম হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন, যেখানে তিনি এই নিষেধাজ্ঞার কথা উল্লেখ করেছেন।
ক্রিস্টি নোয়েম এক্স প্ল্যাটফর্মে একটি পোস্টে বলেছেন, “এই প্রশাসন হার্ভার্ডকে সহিংসতা, ইহুদি-বিদ্বেষ এবং চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে সমন্বয়ের জন্য জবাবদিহি করছে।” তিনি আরও বলেছেন, বিদেশি ছাত্রদের ভর্তি করা একটি “সুবিধা, অধিকার নয়” এবং বিদেশি ছাত্রদের উচ্চ টিউশন ফি বিশ্ববিদ্যালয়ের “বিশাল সম্পদ তহবিল” বাড়াতে সহায়তা করে। তবে, চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, হার্ভার্ড যদি আগামী একাডেমিক বছরের আগে স্টুডেন্ট অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ ভিজিটর প্রোগ্রাম (এসইভিপি) সার্টিফিকেশন পুনরুদ্ধার করতে চায়, তবে তাদের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে “প্রয়োজনীয় তথ্য” সরবরাহ করতে হবে।
এই পদক্ষেপের ফলে হার্ভার্ডে বর্তমানে অধ্যয়নরত বিদেশি ছাত্রদের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থানান্তর করতে হবে, নতুবা তারা তাদের বৈধ আইনি অবস্থান হারাবেন, বলে ডিএইচএস বৃহস্পতিবার জানিয়েছে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় এই পদক্ষেপকে প্রতিশোধমূলক হিসেবে অভিহিত করেছে এবং বলেছে যে, এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য গুরুতর ক্ষতির হুমকি। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “সরকারের এই পদক্ষেপ অবৈধ। আমরা হার্ভার্ডের বিদেশি ছাত্র ও পণ্ডিতদের হোস্ট করার ক্ষমতা বজায় রাখতে পুরোপুরি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যারা ১৪০টিরও বেশি দেশ থেকে এসে বিশ্ববিদ্যালয় এবং এই দেশকে অপরিমেয়ভাবে সমৃদ্ধ করছে।”
গত এপ্রিল মাসে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হার্ভার্ডকে একটি “হাস্যকর” প্রতিষ্ঠান হিসেবে অভিহিত করেছিলেন এবং বলেছিলেন যে, বিশ্ববিদ্যালয় যদি বাইরের রাজনৈতিক তদারকি গ্রহণ করতে অস্বীকার করে, তবে তার সরকারি গবেষণা চুক্তি হারানো উচিত। তিনি তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে বলেছেন, “হার্ভার্ডকে আর একটি শালীন শিক্ষার স্থান হিসেবে বিবেচনা করা যায় না, এবং এটি বিশ্বের মহান বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজের তালিকায় থাকার যোগ্য নয়।” তিনি এপ্রিল থেকেই হার্ভার্ডের উপর বিদেশি ছাত্র ভর্তি নিষিদ্ধ করার হুমকি দিয়েছিলেন, যদি তারা প্রশাসনের শর্তগুলি মেনে না নেয়।
হার্ভার্ডের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট অনুযায়ী, প্রতি বছর ৫০০ থেকে ৮০০ জন ভারতীয় ছাত্র ও পণ্ডিত হার্ভার্ডে অধ্যয়ন করেন। বর্তমানে, ৭৮৮ জন ভারতীয় ছাত্র এই বিশ্ববিদ্যালয়ে নথিভুক্ত রয়েছেন। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভারতীয় ছাত্রদের পড়াশোনা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার উপর গুরুতর প্রভাব পড়তে পারে। অনেক ভারতীয় ছাত্র হার্ভার্ডের মতো প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনার স্বপ্ন দেখেন, এবং এই পদক্ষেপ তাদের জন্য একটি বড় ধাক্কা হতে পারে।
ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপের পেছনে প্রধান অভিযোগ হলো হার্ভার্ডে ইহুদি-বিদ্বেষ এবং সহিংসতার প্রচার। নোয়েম দাবি করেছেন যে, হার্ভার্ডের বিদেশি ছাত্ররা “অবৈধ এবং সহিংস কার্যকলাপে” জড়িত। তবে, হার্ভার্ড এই অভিযোগের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে এবং বলেছে যে, তারা ইহুদি-বিদ্বেষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে এবং সরকারের দাবিগুলি বিশ্ববিদ্যালয়ের “বুদ্ধিবৃত্তিক স্বাধীনতা” নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টা। হার্ভার্ডের প্রেসিডেন্ট অ্যালান গার্বার বলেছেন, “বিশ্ববিদ্যালয় তার স্বাধীনতা বা সাংবিধানিক অধিকার ত্যাগ করবে না।”
এই ঘটনা হার্ভার্ড এবং ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যে একটি বড় সংঘাতের ইঙ্গিত দেয়। এর আগে, ট্রাম্প প্রশাসন হার্ভার্ডের ২.২ বিলিয়ন ডলারের ফেডারেল তহবিল হিমায়িত করেছে এবং এর ট্যাক্স-মুক্ত মর্যাদা প্রত্যাহারের হুমকি দিয়েছে। এছাড়াও, ডিএইচএস দুটি গ্রান্ট বাতিল করেছে, যার মোট মূল্য ২.৭ মিলিয়ন ডলার। এই পদক্ষেপগুলি হার্ভার্ডের আর্থিক এবং একাডেমিক স্বাধীনতার উপর চাপ সৃষ্টি করছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, হার্ভার্ডে বর্তমানে ২৭% ছাত্র বিদেশি, যার মধ্যে ৬,৭৯৩ জন আন্তর্জাতিক ছাত্র রয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞা তাদের শিক্ষা এবং ভবিষ্যৎ কর্মজীবনের উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। অনেকে মনে করেন, এই পদক্ষেপ শুধু হার্ভার্ড নয়, মার্কিন উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার উপরও প্রভাব ফেলবে, কারণ আন্তর্জাতিক ছাত্ররা মার্কিন অর্থনীতিতে প্রতি বছর প্রায় ৪৪ বিলিয়ন ডলারের অবদান রাখে।
এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায়, হার্ভার্ড জানিয়েছে যে তারা আইন মেনে চলবে এবং প্রশাসনের কাছ থেকেও একই প্রত্যাশা করে। তবে, এই সংঘাত কীভাবে সমাধান হবে, তা এখনও অস্পষ্ট। অনেকে এটিকে মার্কিন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং ফেডারেল সরকারের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার একটি অংশ হিসেবে দেখছেন। ভারতীয় ছাত্রদের জন্য, এই নিষেধাজ্ঞা তাদের শিক্ষাগত স্বপ্ন এবং ক্যারিয়ার পরিকল্পনার উপর একটি বড় প্রশ্নচিহ্ন তৈরি করেছে।