কেন্দ্রীয় সরকার শীঘ্রই ৮ম পে কমিশনের (8th Pay Commission) টার্মস অফ রেফারেন্স (ToR) অনুমোদন করতে চলেছে। সরকারি সূত্রে জানা গেছে, এই বিষয়ে প্রস্তুতি চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে এবং যেকোনো সময় আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে কমিশন গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, এবং এটি কার্যকর হবে ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে।
এই পদক্ষেপের ফলে বেতন, পেনশন এবং ভাতায় বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে এবং এতে উপকৃত হবেন প্রায় ৫০ লক্ষ কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী ও ৬৫ লক্ষ পেনশনভোগী।
বেতন বৃদ্ধির মূল ভিত্তি: ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর
সরকারি কর্মচারীদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলির একটি হল বেতন বৃদ্ধির হার। ৮ম পে কমিশনে এই বৃদ্ধির হার নির্ধারিত হবে ‘ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর’-এর ওপর ভিত্তি করে।
ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর হল একটি সাধারণ গুণক, যা সকল স্তরের কর্মচারীদের নতুন বেতন নির্ধারণে ব্যবহৃত হয়। এটি একটি অভিন্ন বৃদ্ধি নিশ্চিত করে, যেন উচ্চ বা নিম্ন পে ব্যান্ডের কর্মচারীরা একই হারে বেতনবৃদ্ধি পান।
৭ম পে কমিশনে ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর ছিল ২.৫৭। এর ফলে সর্বনিম্ন মূল বেতন ৭,০০০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছিল ১৮,০০০ টাকা। পেনশনও বেড়ে হয়েছিল ৩,৫০০ টাকা থেকে ৯,০০০ টাকা। একইসঙ্গে, কমিশন একটি স্বাস্থ্য বিমা প্রকল্পও চালু করেছিল।
৮ম পে কমিশনে সম্ভাব্য ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর ২.৫
যদিও ৮ম পে কমিশনের আনুষ্ঠানিক ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর এখনো ঘোষণা করা হয়নি, তবে আশা করা যাচ্ছে যে এটি ২.৫-এর কাছাকাছি হতে পারে। এমনটি হলে, কর্মচারীদের বেতনে বড়সড় বৃদ্ধি আসবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বেতন কিভাবে বাড়বে, তা একটি উদাহরণের মাধ্যমে বোঝা যাক—
বর্তমান মূল বেতন: ₹৪০,০০০/মাস
সম্ভাব্য ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর: ২.৫
নতুন মূল বেতন: ₹৪০,০০০ × ২.৫ = ₹১,০০,০০০/মাস
অর্থাৎ, শুধুমাত্র মূল বেতনের ক্ষেত্রেই বৃদ্ধি হতে পারে ₹৬০,০০০ পর্যন্ত। অতিরিক্ত ডিএ (ডিয়ারনেস অ্যালাওয়েন্স), এইচআরএ (হাউস রেন্ট অ্যালাওয়েন্স) ও অন্যান্য ভাতা যোগ হলে মোট মাসিক বেতন আরও বাড়বে।
পেনশনভোগীরাও উপকৃত হবেন
এই ফিটমেন্ট ফ্যাক্টরের প্রভাব পড়বে পেনশনভোগীদের ওপরেও। ৮ম পে কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, পেনশনের পরিমাণও বাড়বে, ঠিক যেভাবে ৭ম কমিশনে পেনশনের পরিমাণ প্রায় তিন গুণ বেড়েছিল। ফলে, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীরাও এই সুবিধা পাবেন।
কেন গুরুত্বপূর্ণ এই ঘোষণা?
সরকারি কর্মচারীদের জন্য প্রতি দশ বছরে একবার করে পে কমিশন গঠিত হয়। এটি শুধু বেতন বৃদ্ধির জন্য নয়, কর্মপরিবেশ, সুযোগ-সুবিধা ও অন্যান্য নীতিগত পরিবর্তনের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
৮ম পে কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে, দেশের অর্থনীতির ওপর এর প্রভাব পড়বে। বেতন ও পেনশন বৃদ্ধির ফলে খরচ বাড়বে, কিন্তু একইসঙ্গে ভোগব্যয়েরও প্রবণতা বাড়বে, যার ফলে বাজারে চাহিদা তৈরি হবে।
কেন্দ্রের প্রস্তুতি ও সম্ভাব্য ঘোষণা
বর্তমানে ৮ম পে কমিশনের টার্মস অফ রেফারেন্স নিয়ে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয় কাজ করছে। কমিশনের কাজ শুরু হলে তারা বিভিন্ন দপ্তরের কর্মচারীদের সঙ্গে আলোচনা করে সুপারিশ তৈরি করবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ২০২৫ সালের শেষের দিকেই কমিশন তাদের প্রাথমিক রিপোর্ট জমা দিতে পারে এবং ২০২৬ সালের জানুয়ারি থেকে তা কার্যকর হবে।
৮ম পে কমিশন শুধু বেতন বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি নয়, বরং এটি একটি সামগ্রিক জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের ইঙ্গিত। সরকারি কর্মচারী ও পেনশনভোগীরা দীর্ঘদিন ধরেই এই ঘোষণার অপেক্ষায় ছিলেন।
সরকারি কর্মজীবনের প্রতি আস্থা বাড়াতে এবং যুব সম্প্রদায়কে সরকারি চাকরির প্রতি আকৃষ্ট করতে এই কমিশনের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে সব চোখ এখন কেন্দ্রের আনুষ্ঠানিক ঘোষণার দিকে, যা যেকোনো সময়ে আসতে পারে।