বিশ্ব মন্দার মাঝেও ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজারে গতির কথা জানাল আরবিআই

বিশ্ব অর্থনীতি এখনো ভঙ্গুর অবস্থার মধ্য দিয়ে চলেছে। যদিও সাম্প্রতিককালে বাণিজ্যিক উত্তেজনা কিছুটা প্রশমিত হয়েছে, তবুও নীতিগত অনিশ্চয়তা, চলমান বাণিজ্য দ্বন্দ্ব এবং ভোক্তাদের মধ্যে নিরুৎসাহবোধ—এই…

India Economy

বিশ্ব অর্থনীতি এখনো ভঙ্গুর অবস্থার মধ্য দিয়ে চলেছে। যদিও সাম্প্রতিককালে বাণিজ্যিক উত্তেজনা কিছুটা প্রশমিত হয়েছে, তবুও নীতিগত অনিশ্চয়তা, চলমান বাণিজ্য দ্বন্দ্ব এবং ভোক্তাদের মধ্যে নিরুৎসাহবোধ—এই সমস্ত কারণে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পূর্বাভাসে অন্ধকারাচ্ছন্নতা রয়ে গেছে। ভারতের রিজার্ভ ব্যাংক (RBI) তার মে মাসের বুলেটিনে এই পরিস্থিতির ওপর আলোকপাত করেছে।

তবে এই বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও ভারতীয় অর্থনীতি তুলনামূলকভাবে দৃঢ়তা প্রদর্শন করছে। RBI জানিয়েছে, ভারত উচ্চ হারে চলমান বাণিজ্যিক ও শুল্ক সংক্রান্ত অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও অর্থনৈতিক গতিশীলতা বজায় রেখেছে। শিল্প ও পরিষেবা ক্ষেত্রের একাধিক উচ্চ-ফ্রিকোয়েন্সি সূচক এপ্রিল মাসেও ইতিবাচক প্রবণতা দেখিয়েছে, যা অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের সংকেত বহন করে।

   

আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট
বিশ্ব বাণিজ্যে সাময়িক স্বস্তি এসেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে। তিনি ৯ এপ্রিল ঘোষণা করেন যে, যুক্তরাষ্ট্র ৯০ দিনের জন্য রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ স্থগিত রাখবে, যেখানে চীন ছাড়া বাকি সমস্ত দেশ এই ছাড়ের আওতাভুক্ত হবে। এর আগে ২ এপ্রিল তিনি ভারতীয় রপ্তানির ওপর ২৬ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছিলেন, যার ফলে শেয়ার বাজারে হঠাৎ বড় ধস নেমে আসে।

এই ঘোষণার পরে বাজারে আতঙ্ক কিছুটা প্রশমিত হয় এবং বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরে আসে। যদিও এই সিদ্ধান্ত সাময়িক, তবুও তা বাজারে ইতিবাচক বার্তা দিয়েছে। RBI তার বুলেটিনে জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য উত্তেজনা কিছুটা প্রশমিত হওয়ার পাশাপাশি ভারতের অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক সূচক উন্নতি করেছে, যার ফলে এপ্রিল মাসের মধ্যভাগ থেকে দেশের আর্থিক বাজারে উল্লেখযোগ্য পুনরুদ্ধার লক্ষ্য করা গেছে।

গাড়ি শিল্পের মিশ্র চিত্র
গাড়ি শিল্পে এপ্রিল মাসে মিশ্র প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। RBI জানিয়েছে, এই সময়ে পাইকারি গাড়ি বিক্রি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৩.৩ শতাংশ কমেছে। বিশেষ করে দু-চাকা গাড়ির বিক্রিতে এই পতন সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে, যার প্রধান কারণ হলো গত বছরের উচ্চ ভিত্তি প্রভাব (high base effect)।

অন্যদিকে, ট্রাক্টর বিক্রি সুস্থ ধারায় রয়েছে, যদিও তার সম্প্রসারণের হার কিছুটা কমেছে। গাড়ি নিবন্ধনের সামগ্রিক হার বা বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ২.৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে পরিবহন যানবাহন খাতে গত ছয় মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে, যা বাণিজ্যিক গাড়ির চাহিদা পুনরুদ্ধারের সংকেত দিচ্ছে।

Advertisements

আর্থিক বাজারে পুনরুদ্ধার
আরবিআই-এর মতে, এপ্রিল মাসের শুরুতে শেয়ার বাজারে পতন দেখা দিলেও, মাসের মধ্যভাগ থেকে শক্তিশালী রিবাউন্ড লক্ষ্য করা গেছে। ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতের কোম্পানিগুলোর চতুর্থ ত্রৈমাসিকের ভালো ফলাফলের জন্য এই উন্নতি সম্ভব হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফেরানোর ক্ষেত্রে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রবণতা যদি বজায় থাকে, তবে আগামী কয়েক মাসে ভারতীয় অর্থনীতি আরও সুসংহত অবস্থানে পৌঁছাতে পারে। যদিও বিশ্ববাজারে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে, তবে অভ্যন্তরীণ চাহিদা ও উৎপাদন খাতে উন্নতি ভারতের জন্য ইতিবাচক বার্তা বহন করছে।

RBI-এর এই বুলেটিন স্পষ্টভাবে দেখিয়ে দিয়েছে যে, বৈশ্বিক অর্থনীতির অনিশ্চয়তার মধ্যেও ভারতীয় অর্থনীতি স্থিতিশীলতা ও পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে সঠিক পথে এগিয়ে চলেছে। এটি সরকারের নীতিগত দিশা, অভ্যন্তরীণ উৎপাদন কাঠামোর দৃঢ়তা এবং ভোক্তা চাহিদার ওপর নির্ভর করে ভবিষ্যতে আরও গতিশীলতা অর্জন করতে পারে।

বিশ্বের বৃহত্তর অর্থনীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য ভারতের এমন একটি ধৈর্যশীল ও পুনরুদ্ধারশীল অর্থনৈতিক রূপরেখা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। আগামী সময়ে বাণিজ্য নীতিতে আরও স্থিতিশীলতা এলে, ভারত তার প্রবৃদ্ধির গতিকে আরও ত্বরান্বিত করতে পারবে—এমনটাই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।