Pakistan on Terror Support: সন্ত্রাসবাদকে কোনোভাবেই বরদাস্ত করবে না ভারত—এই কঠোর বার্তাই এখন বিশ্বের দরজায় পৌঁছে দিচ্ছে কেন্দ্রের পক্ষ থেকে পাঠানো সর্বদলীয় প্রতিনিধি দল। সাম্প্রতিক পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার পর কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের অবস্থান স্পষ্ট করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই উদ্দেশ্যেই গঠিত হয়েছে একটি সর্বদলীয় প্রতিনিধি দল, যার নেতৃত্বে রয়েছেন জেডি(ইউ) সাংসদ সঞ্জয় কুমার ঝা।
এই প্রতিনিধি দল ইতিমধ্যেই জাপানে পৌঁছেছে। সেখানে প্রথমেই তাঁরা গিয়েছেন টোকিয়োর ভারতীয় দূতাবাসে। সেখানে মহাত্মা গান্ধীর মূর্তিতে মাল্যদান করে শ্রদ্ধা জানান দলের সদস্যরা। এরপর তাঁরা সাক্ষাৎ করেন জাপানে নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত সিবি জর্জের সঙ্গে। এই বৈঠকে ভারতের সাম্প্রতিক অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা পরিস্থিতি, অপারেশন সিঁদুরের সাফল্য এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে দেশের অবস্থান নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা হয়।
সাক্ষাতের পর প্রতিনিধি দল জাপানের বিদেশমন্ত্রী তাকেশি ইওয়ার সঙ্গেও বৈঠক করেন। এই বৈঠকে জাপানের তরফ থেকে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের সংগ্রামে সমর্থন জানানো হয়। জাপানের বিদেশমন্ত্রী বলেন, “ভারত যেভাবে সাহসিকতার সঙ্গে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা করেছে, তা প্রশংসনীয়।” তিনি আরও জানান, জাপান সবসময় আন্তর্জাতিক শান্তি এবং নিরাপত্তার প্রশ্নে ভারতের পাশে থাকবে।
এই প্রতিনিধি দলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা রয়েছেন, যা ভারতের গণতান্ত্রিক ঐক্যের প্রতিচ্ছবি। দলে রয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, বিজেপির সাংসদ অপরাজিতা সারাঙ্গি ও ডঃ হেমাঙ্গ জোশী, সিপিআই(এম)-এর সাংসদ জন ব্রিটাস, ব্রীজ লাল, মোহন কুমার এবং প্রধান বডুয়া। এই বৈচিত্র্যপূর্ণ সদস্যগঠন দেখায়, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সমস্ত রাজনৈতিক দল একজোট।
টোকিয়োয় উপস্থিত হয়ে বিজেপি সাংসদ অপরাজিতা সারাঙ্গি জানান, “আমরা আমাদের সফর শুরু করেছি জাপান থেকে। প্রথমেই ভারতীয় দূতাবাসে গিয়ে দেশের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা জানিয়েছি। এরপর জাপানি প্রতিনিধিদের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। পহেলগাঁও হামলা নিয়ে জাপানের দৃষ্টিভঙ্গি বুঝতে চেষ্টা করছি এবং ভারতের অবস্থান তাদের কাছে তুলে ধরছি।”
এই প্রতিনিধি দল জাপানের পর সফর করবে ইন্দোনেশিয়া, মালয়শিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও সিঙ্গাপুরেও। প্রতিটি দেশেই সন্ত্রাসবাদ বিরোধী ভারতের অবস্থান তুলে ধরা হবে। একইসঙ্গে তুলে ধরা হবে সাম্প্রতিক অপারেশন সিঁদুর—যার মাধ্যমে নিরাপত্তা বাহিনী নির্ভুল পরিকল্পনার মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটিতে হামলা চালিয়ে সফলতা অর্জন করেছে। এই অভিযানে ভারত বিশ্বের কাছে একটি কড়া বার্তা দিয়েছে—সন্ত্রাসবাদ এবং সন্ত্রাসবাদের মদতদাতাদের কোনওরকম ছাড় দেওয়া হবে না।
এই সফরের অন্যতম উদ্দেশ্য হল, ভারতকে যেসব দেশ দীর্ঘদিন ধরে কৌশলগত সহযোগী হিসেবে দেখে আসছে, তাদের সঙ্গে সন্ত্রাসবাদ বিরোধী সহায়তা আরও দৃঢ় করা। এই সফরের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মহলে ভারতের অবস্থান আরও সুসংহত হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সব মিলিয়ে, এই সর্বদলীয় সফর কেবল রাজনৈতিক সৌভ্রাতৃত্বের নিদর্শন নয়, বরং এক সুনির্দিষ্ট কূটনৈতিক কৌশলের অঙ্গ। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভারতের অবস্থান যে দৃঢ়, এই সফর সেই বার্তাই স্পষ্টভাবে পৌঁছে দিচ্ছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে।