রাজধানী শহরসহ শহরতলিতে ঝড়-বৃষ্টিতে মৃত ২, আহত অনেকে

দিল্লি-এনসিআর অঞ্চলে বুধবার সন্ধ্যায় তীব্র ঝড় ও ভারী বৃষ্টির (Delhi-NCR Thunderstorms) কারণে দুজনের মৃত্যু হয়েছে এবং কমপক্ষে ১১ জন আহত হয়েছেন বলে পুলিশ সূত্রে জানা…

Delhi-NCR Thunderstorms Leave 2 Dead

দিল্লি-এনসিআর অঞ্চলে বুধবার সন্ধ্যায় তীব্র ঝড় ও ভারী বৃষ্টির (Delhi-NCR Thunderstorms) কারণে দুজনের মৃত্যু হয়েছে এবং কমপক্ষে ১১ জন আহত হয়েছেন বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। ঝড়ের তাণ্ডবে বিদ্যুৎ খুঁটি, গাছ এবং বারান্দা ভেঙে পড়ার ঘটনায় এই দুর্ঘটনাগুলো ঘটেছে। ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তর (আইএমডি) দিল্লি-এনসিআরে ‘অরেঞ্জ অ্যালার্ট’ জারি করেছে, যা আগামী কয়েক দিনের জন্য বজ্রপাত, ঝড়ো হাওয়া এবং বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে। এই আবহাওয়ার পরিবর্তন শহরে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে, যার মধ্যে রয়েছে জলাবদ্ধতা, যানজট এবং সম্পত্তির ক্ষতি।

লোধি রোডে বিদ্যুৎ খুঁটি পড়ে মৃত্যু
বুধবার সন্ধ্যা ৭:৫০ নাগাদ দক্ষিণ-পূর্ব দিল্লির লোধি রোড ফ্লাইওভারের কাছে, নিজামুদ্দিন এলাকায় একটি হাই-ভোল্টেজ বিদ্যুৎ খুঁটি ঝড়ের কারণে ভেঙে পড়ে। এই খুঁটি রাস্তায় পড়ে যায় এবং একজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তির উপর চাপা পড়ে, যিনি তখন একটি ট্রাইসাইকেলে যাচ্ছিলেন। পুলিশের একজন আধিকারিক জানান, “ভুক্তভোগীকে দ্রুত অ্যাম্বুলেন্সে করে সফদরজঙ্গ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, কিন্তু হাসপাতালে পৌঁছানোর পর তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়।” মৃত ব্যক্তির পরিচয় এখনও নিশ্চিত করা যায়নি। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, ঝড়ের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে গাছ এবং খুঁটি বিপজ্জনকভাবে দুলছিল। হঠাৎ করে খুঁটিটি ভেঙে পড়ে এবং ওই ব্যক্তির উপর চাপা পড়ে।

   

গোকুলপুরীতে গাছ পড়ে তরুণের মৃত্যু
একই দিন সন্ধ্যা ৮:১৫ নাগাদ উত্তর-পূর্ব দিল্লির গোকুলপুরী এলাকায় একটি দুর্ঘটনায় ২২ বছর বয়সী যুবক আজহারের মৃত্যু হয়। মৌজপুরের বিজয় মহল্লার বাসিন্দা আজহারের উপর ঝড়ের কারণে একটি গাছ ভেঙে পড়ে, যা দুটি মোটরসাইকেলের উপরও পড়ে। তিনি গুরুতরভাবে আহত হন এবং জিটিবি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। এই ঘটনা স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।

মুখার্জি নগরে ফুট ওভারব্রিজের গ্রিল ভেঙে আহত
উত্তর দিল্লির মুখার্জি নগরে সন্ধ্যা ৮:১১ নাগাদ একটি পুরোনো ফুট ওভারব্রিজের গ্রিলের অংশ ভেঙে পড়ে, যার ফলে কমপক্ষে ছয়জন আহত হন। দিল্লি ফায়ার সার্ভিস (ডিএফএস) দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার কাজ শুরু করে। একজন ডিএফএস আধিকারিক নিশ্চিত করেছেন, “পাঁচ থেকে ছয়জন আহত হয়েছেন।” আহতদের নিকটবর্তী হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে। এই ঘটনা পুরোনো অবকাঠামোর রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

কাশ্মীর গেট ও মঙ্গোলপুরীতে বারান্দা ভেঙে আহত
উত্তর দিল্লির কাশ্মীর গেট এলাকায়, স্টেট ইলেকশন কমিশন অফিসের বিপরীতে একটি ভবনের বারান্দা ভেঙে পড়ে ৫৫ বছর বয়সী একজন ব্যক্তি আহত হন। একইভাবে, বাইরের দিল্লির মঙ্গোলপুরী এলাকায় আরেকটি বারান্দা ভেঙে পড়ে, যার ফলে তিনজন পুরুষ এবং একজন মহিলাসহ চারজন আহত হন। এই ঘটনায় তিনটি দুই চাকার গাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঝড়ের তীব্রতা এই অবকাঠামোগত ক্ষতির জন্য দায়ী বলে মনে করা হচ্ছে।

Advertisements

ঝড়-বৃষ্টির তাণ্ডব ও জলাবদ্ধতা
বুধবার সন্ধ্যায় দিল্লি-এনসিআরে হঠাৎ আবহাওয়ার পরিবর্তন ঘটে, যার মধ্যে ছিল শিলাবৃষ্টি, ভারী বৃষ্টি এবং ঝড়ো হাওয়া। আইএমডি’র তথ্য অনুযায়ী, সফদরজঙ্গ আবহাওয়া কেন্দ্রে সকাল ২:৩০ থেকে ৮:৩০ টার মধ্যে ৭৭ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে, যা গত এক দশকের মধ্যে মে মাসের প্রথম সপ্তাহে সর্বোচ্চ। এই বৃষ্টি দিল্লি-নয়ডা, দিল্লি-গাজিয়াবাদ এবং দিল্লি-গুরুগ্রামের মতো প্রধান রুটে ব্যাপক জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করেছে। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, মথুরা রোডে একটি পার্ক করা গাড়ির উপর গাছ পড়ে এবং চলন্ত গাড়ির উপর গাছ ভেঙে পড়ার দৃশ্য। এই ঝড়ের কারণে আইজিআই বিমানবন্দরে প্রায় ৪০টি ফ্লাইট ডাইভার্ট করা হয়েছে এবং ১০০টিরও বেশি ফ্লাইট বিলম্বিত হয়েছে।

স্থানীয় প্রতিক্রিয়া ও উদ্ধার কার্যক্রম
দিল্লি ফায়ার সার্ভিস এবং পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করে। মুখার্জি নগর, কাশ্মীর গেট এবং মঙ্গোলপুরীতে উদ্ধারকারী দল আহতদের হাসপাতালে স্থানান্তর করে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ঝড়ের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে রাস্তায় গাছ এবং বিদ্যুৎ খুঁটি উপড়ে পড়ছিল। সামাজিক মাধ্যমে একটি পোস্টে বলা হয়েছে, “দিল্লি-এনসিআরে ঝড় ও বৃষ্টির কারণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কিছু জায়গায় গাছ পড়ে গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং মৃত্যুর খবরও এসেছে।”

আবহাওয়ার পূর্বাভাস
আইএমডি জানিয়েছে, আগামী তিন দিন দিল্লিতে বজ্রপাত, হালকা বৃষ্টি এবং ঝড়ো হাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। একটি নতুন পশ্চিমী ঝঞ্ঝা উত্তর ভারতে আরও বৃষ্টি এবং ঝড়ের সম্ভাবনা তৈরি করেছে। আবহাওয়াবিদ সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এই ঝড় গরম থেকে সাময়িক স্বস্তি দিলেও জলাবদ্ধতা এবং অবকাঠামোর ক্ষতির কারণে সতর্ক থাকা প্রয়োজন।”

দিল্লি-এনসিআরে তীব্র ঝড় ও বৃষ্টি সাময়িকভাবে গরম থেকে স্বস্তি এনেছে, কিন্তু এর ফলে দুজনের মৃত্যু এবং অনেকের আহত হওয়ার ঘটনা শহরের অবকাঠামোর দুর্বলতা এবং আবহাওয়ার প্রভাব মোকাবিলার প্রস্তুতির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে। বিদ্যুৎ খুঁটি, গাছ এবং বারান্দা ভেঙে পড়ার ঘটনাগুলো পুরোনো অবকাঠামোর রক্ষণাবেক্ষণ এবং নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। বাসিন্দাদের আগামী কয়েক দিন সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, এবং সরকারি সংস্থাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় উদ্ধার ও পুনরুদ্ধার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এই ঘটনা আবহাওয়ার পরিবর্তনের প্রভাব এবং শহুরে পরিকাঠামোর স্থিতিস্থাপকতা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার একটি স্মারক।