Home Loan Refinancing: ২০২৫ সাল ভারতের বাড়ি ঋণগ্রহীতাদের জন্য এক সুবর্ণ সুযোগ নিয়ে এসেছে। চলতি বছরে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (RBI) ফেব্রুয়ারি ও এপ্রিলে পরপর দু’বার রেপো রেট হ্রাস করেছে, যার প্রভাবে ২০২২ সালের পর প্রথমবারের মতো গৃহঋণের সুদের হার ৮ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। মূল্যস্ফীতি কমে আসায় আরও সুদ হ্রাসের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ঋণগ্রহীতারা যদি চটপট সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে তাঁরা লক্ষ লক্ষ টাকা সাশ্রয় করতে পারেন – এর মধ্যে অন্যতম উপায় হলো রিফাইন্যান্সিং।
রিফাইন্যান্সিং কী?
রিফাইন্যান্সিং মানে হলো বিদ্যমান গৃহঋণটি নতুন শর্তে, কম সুদের হারে পুনর্গঠন করা – অর্থাৎ একটি নতুন ঋণের মাধ্যমে আগের ঋণটি পরিশোধ করে ফেলা। এর ফলে মাসিক EMI কমে যায়, মোট সুদের খরচ হ্রাস পায় এবং ঋণমুক্ত হওয়ার পথ আরও সংক্ষিপ্ত হয়।
BankBazaar সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গাইডে (Home Loans Made Easy) রিফাইন্যান্সিংয়ের দুটি মূল পদ্ধতি তুলে ধরা হয়েছে—
1. বর্তমান ঋণদাতার সাথেই রিফাইন্যান্স করা
2. নতুন ঋণদাতার কাছে ব্যালেন্স ট্রান্সফার করা
দুটি পথের মধ্যে পার্থক্য কী?
- বিষয় বর্তমান ঋণদাতা নতুন ঋণদাতা (ব্যালেন্স ট্রান্সফার)
- কারণ পুরনো বেঞ্চমার্কে ঋণ চলছে, ঋণদাতা নতুন হারে স্থানান্তরের প্রস্তাব দিচ্ছে অন্য ঋণদাতা আরও ভালো সুদহার ও শর্ত দিচ্ছে
- প্রি-ক্লোজার প্রয়োজন নেই নতুন ঋণদাতা আগের ঋণটি পরিশোধের জন্য চেক ইস্যু করে
- আবেদন প্রক্রিয়া সহজ, তেমন কাগজপত্র লাগে না জটিল, পরিচয়পত্র, আয়, ঠিকানা ও সম্পত্তির কাগজ লাগে
- চার্জ কেবল প্রসেসিং ফি প্রসেসিং ফি, লিগাল ফি, MOD চার্জ, প্রি-EMI সুদ ইত্যাদি
- সময় সাধারণত ৭ দিনের মধ্যে সম্পন্ন ১-৩ সপ্তাহ সময় লাগে
- প্রি-ক্লোজার খরচ প্রযোজ্য নয় কখনও কখনও প্রি-ক্লোজার পেনাল্টি লাগতে পারে
কখন রিফাইন্যান্সিং করবেন?
রিফাইন্যান্স করার সঠিক সময় নির্ভর করে কয়েকটি বিষয়ে। মূলত, আপনি যদি এমন সময়ে গৃহঋণ নিয়ে থাকেন যখন সুদের হার অনেক বেশি ছিল, এবং এখন হার অনেক কমে গেছে, তাহলে রিফাইন্যান্স উপকারী হতে পারে। এমনকি মাত্র ০.৫ শতাংশ কম সুদেও আপনি লক্ষাধিক টাকা সাশ্রয় করতে পারেন।
উদাহরণস্বরূপ, যদি কেউ ৯ শতাংশ হারে ২০ বছরের জন্য ৫০ লক্ষ টাকার ঋণ নিয়ে থাকেন এবং এখন ৮ শতাংশ হারে রিফাইন্যান্স করেন, তবে সেই ঋণগ্রহীতা প্রায় ৬ লক্ষ টাকারও বেশি সুদের সাশ্রয় করতে পারেন।
রিফাইন্যান্স করার আরও কিছু কারণ হতে পারে—
- ভাসমান সুদহার থেকে নির্দিষ্ট সুদহারে পরিবর্তন বা তার উল্টোটা
- আরও নমনীয় পরিশোধের শর্ত বা উন্নত পরিষেবা পাওয়ার আশা
- কম প্রসেসিং ফি বা অন্যান্য সুবিধাজনক শর্ত
তবে শুধু সুদের হারের দিকে তাকিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক নয়। প্রসেসিং ফি, আইনি খরচ, MOD চার্জ, এবং অন্যান্য ব্যয় বিবেচনায় নিতে হবে। যদি এসব ব্যয় সম্ভাব্য সাশ্রয়ের তুলনায় বেশি হয়, তবে রিফাইন্যান্সিং না করাই ভাল।
রিফাইন্যান্সিং-এর সর্বোচ্চ লাভ পাওয়া যায় ঋণের প্রারম্ভিক বছরে। তখন EMI-এর একটি বড় অংশ সুদে যায়, তাই সুদের হার কমলেই সাশ্রয়ের অঙ্ক বড় হয়।
রিফাইন্যান্স করার আগে কী করবেন?
- নিজের ক্রেডিট স্কোর ভালো রাখুন – এটি ভালো শর্তে নতুন ঋণ পেতে সহায়ক হবে
- আয়ের স্থায়িত্ব নিশ্চিত করুন
- বিভিন্ন ব্যাঙ্ক ও NBFC-এর অফার তুলনা করুন
- সব খরচ ও সুবিধার তুলনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিন
২০২৫ সালের নিম্ন সুদের পরিবেশে রিফাইন্যান্সিং একটি বাস্তবসম্মত কৌশল যা গৃহঋণগ্রহীতাদের লক্ষ লক্ষ টাকা সাশ্রয় করতে পারে। যাঁরা এখনও বেশি সুদে EMI দিচ্ছেন, তাঁদের জন্য এটি ঋণমুক্ত হওয়ার পথে এক দুর্দান্ত সুযোগ। তবে হ্যাঁ, হিসেব কষে, সময় বুঝে এবং সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়াই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
আপনি যদি ঋণগ্রহীতা হন, এখনই সময় আপনার ঋণটি খতিয়ে দেখার – আপনি কতটা সাশ্রয় করতে পারছেন, জানুন এবং প্রয়োজনে রিফাইন্যান্স করার উদ্যোগ নিন।