‘নকশাল দমনে তিন দশকের সবচেয়ে বড় সাফল্য’, ঘোষণা অমিত শাহের

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (amit-shah)  বুধবার ঘোষণা করেছেন যে, ভারতের নকশালবাদের বিরুদ্ধে দশকের পর দশক ধরে চলা লড়াইয়ে একটি ঐতিহাসিক সাফল্য অর্জিত হয়েছে। ছত্তিশগড়ের নারায়ণপুরে…

amit-shah announces about operation black forest

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (amit-shah)  বুধবার ঘোষণা করেছেন যে, ভারতের নকশালবাদের বিরুদ্ধে দশকের পর দশক ধরে চলা লড়াইয়ে একটি ঐতিহাসিক সাফল্য অর্জিত হয়েছে। ছত্তিশগড়ের নারায়ণপুরে একটি অভিযানে নিরাপত্তা বাহিনী ২৭ জন নকশালকে নিকেশ করেছে, যার মধ্যে ছিলেন নিষিদ্ধ সিপিআই-মাওবাদী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নম্বলা কেশব রাও, ওরফে বাসবরাজু।

শাহ জানিয়েছেন (amit-shah)

শাহ (amit-shah)জানিয়েছেন, ভারতের নকশালবাদের বিরুদ্ধে তিন দশকের লড়াইয়ে এই প্রথমবারের মতো সাধারণ সম্পাদক পদমর্যাদার একজন নেতাকে নিকেশ করা হল। বাসবরাজু ছিলেন নকশাল আন্দোলনের মতাদর্শগত ও অপারেশনাল মেরুদণ্ড, এবং তাঁর নিধন ভারতের নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য একটি বড় সাফল্য।

   

অমিত শাহ (amit-shah)তাঁর অফিসিয়াল এক্স অ্যাকাউন্টে এই অভিযানের প্রশংসা করে বলেছেন, “নকশালবাদ নির্মূলের লড়াইয়ে একটি ঐতিহাসিক অর্জন। আজ ছত্তিশগড়ের নারায়ণপুরে একটি অভিযানে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী ২৭ জন ভয়ঙ্কর মাওবাদীকে নিধন করেছে, যার মধ্যে ছিলেন সিপিআই-মাওবাদীর সাধারণ সম্পাদক নম্বলা কেশব রাও, ওরফে বাসবরাজু, যিনি ছিলেন নকশাল আন্দোলনের শীর্ষ নেতা এবং মেরুদণ্ড।

ভারতের নকশালবাদের বিরুদ্ধে তিন দশকের লড়াইয়ে এই প্রথমবার আমাদের বাহিনী একজন সাধারণ সম্পাদক পদমর্যাদার নেতাকে নিধন করেছে। আমি আমাদের সাহসী নিরাপত্তা বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলির এই বড় সাফল্যের জন্য প্রশংসা জানাই।”

অপারেশন ব্ল্যাক ফরেস্টের সাফল্য

শাহ (amit-shah)আরও জানিয়েছেন, অপারেশন ব্ল্যাক ফরেস্টের সমাপ্তির পর ছত্তিশগড়, তেলেঙ্গানা এবং মহারাষ্ট্রে ৫৪ জন নকশালকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং ৮৪ জন নকশাল আত্মসমর্পণ করেছে। এই অভিযান নকশালবাদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় সরকারের তীব্র অভিযানের একটি অংশ। গৃহমন্ত্রী পুনর্ব্যক্ত করেছেন যে, মোদী সরকার ২০২৬ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে নকশালবাদকে সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

নম্বলা কেশব রাও কে ছিলেন?

নম্বলা কেশব রাও, ওরফে বাসবরাজু, সিপিআই-মাওবাদীর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন এবং নকশাল আন্দোলনের শীর্ষ নেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তিনি কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া (মার্কসবাদী-লেনিনবাদী) প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।

বাসবরাজু নকশাল আন্দোলনের মতাদর্শ এবং অপারেশনাল কৌশলের মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে সিপিআই-মাওবাদী বিভিন্ন হিংসাত্মক কার্যকলাপে জড়িত ছিল, যার মধ্যে ছিল নিরাপত্তা বাহিনীর উপর হামলা এবং গ্রামীণ এলাকায় অশান্তি সৃষ্টি। তাঁর নিধন নকশাল আন্দোলনের জন্য একটি বড় ধাক্কা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

৭ মাসে ২৫ বিয়ে! পুলিশের জালে দেশের কুখ্যাত “লুটেরা দুলহন”

Advertisements

অভিযানের বিবরণ

ছত্তিশগড়ের নারায়ণপুরের অবুঝমাড় জঙ্গলে পরিচালিত এই অভিযানে নিরাপত্তা বাহিনী একটি বড় অস্ত্রভাণ্ডার উদ্ধার করেছে। এই অভিযানে ভারতীয় সেনাবাহিনী, কেন্দ্রীয় রিজার্ভ পুলিশ বাহিনী (সিআরপিএফ) এবং ছত্তিশগড় পুলিশের সমন্বিত প্রচেষ্টা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এই অভিযান পরিচালিত হয়, যেখানে নিরাপত্তা বাহিনী নকশালদের গতিবিধি ট্র্যাক করে তাদের উপর আক্রমণ চালায়। এই অভিযানে নিহত ২৭ জন নকশালের মধ্যে বাসবরাজু ছিলেন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য।

নকশালবাদের বিরুদ্ধে সরকারের অবস্থান

কেন্দ্রীয় গৃহমন্ত্রী অমিত শাহ (amit-shah)এর আগেও নকশালবাদ নির্মূলের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা ঘোষণা করেছিলেন। গত বছর সেপ্টেম্বরে তিনি বলেছিলেন, “নকশালরা তিরুপতি থেকে পশুপতিনাথ পর্যন্ত একটি লাল করিডর তৈরি করতে চেয়েছিল। আজ তাদের প্রভাব ছত্তিশগড়ের মাত্র চারটি জেলায় সীমাবদ্ধ। মোদী সরকার ২০২৬ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে নকশালবাদকে সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করবে।” এই অভিযান সেই প্রতিশ্রুতির একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

শাহ (amit-shah)আরও জানিয়েছেন, গত এক বছরে ছত্তিশগড়ে ২৮৭ জন নকশাল নিহত, ১,০০০ জন গ্রেপ্তার এবং ৮৩৭ জন আত্মসমর্পণ করেছে। তিনি নকশালদের অস্ত্র ত্যাগ করে মূলধারায় ফিরে এসে উন্নয়নে অবদান রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই অভিযানকে “অসাধারণ সাফল্য” হিসেবে অভিহিত করেছেন এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সাহসিকতার প্রশংসা করেছেন। ছত্তিশগড়ের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেলও এই অভিযানের প্রশংসা করে বলেছেন, “আমি সকল জওয়ানদের অভিনন্দন জানাই।” তবে, এক্স-এ কিছু পোস্টে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে নকশাল সংগঠনগুলি সরকারের কাছে ক্ষমা চেয়ে যুদ্ধবিরতির আবেদন জানাচ্ছে, যদিও এই তথ্যের সত্যতা যাচাই করা যায়নি।

নারায়ণপুরে এই অভিযান নকশালবাদের বিরুদ্ধে ভারতের লড়াইয়ে একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। নম্বলা কেশব রাও-এর নিধন এবং ২৭ জন নকশালের নির্মূল নকশাল আন্দোলনের মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছে। মোদী সরকারের নকশালবাদ নির্মূলের প্রতিশ্রুতি এবং নিরাপত্তা বাহিনীর অসাধারণ সাহসিকতা এই অভিযানকে সফল করেছে। ২০২৬ সালের মধ্যে নকশালবাদকে সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করার লক্ষ্যে এই অভিযান একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।