ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর গত বুধবার বাহরাইনের (bahrain) বিদেশমন্ত্রী ড. আব্দুল্লাতিফ বিন রশিদ আল জায়ানির সঙ্গে একটি টেলিফোনিক আলোচনায় সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিশ্চিত করেছেন। এই আলোচনায় উভয় নেতা সন্ত্রাসবাদের চ্যালেঞ্জ এবং এর বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে লড়াই করার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছেন।
জয়শঙ্কর সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে বলেছেন
জয়শঙ্কর সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে বলেছেন, “বাহরাইনের (bahrain) পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল্লাতিফ বিন রশিদ আল জায়ানির সঙ্গে টেলিফোনিক আলোচনার জন্য কৃতজ্ঞ। আমরা সন্ত্রাসবাদের চ্যালেঞ্জ এবং এর বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে লড়াই করার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করেছি।”
এই আলোচনা এমন এক সময়ে হয়েছে যখন ভারতের একটি সর্বদলীয় প্রতিনিধি দল বাহরাইন (bahrain) সফরের প্রস্তুতি নিচ্ছে। অপারেশন সিঁদুর এবং সীমান্ত পার সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের অব্যাহত লড়াইয়ের প্রেক্ষাপটে, সাতটি সর্বদলীয় প্রতিনিধি দল এই মাসের শেষের দিকে রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য দেশগুলো সহ গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার দেশগুলোতে সফর করবে।
এই প্রতিনিধি দলগুলো ভারতের জাতীয় ঐকমত্য এবং সন্ত্রাসবাদের সব রূপের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থানকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরবে। তারা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের ‘শূন্য সহনশীলতা’ নীতির বার্তা বিশ্বব্যাপী পৌঁছে দেবে।
সর্বদলীয় প্রতিনিধি দলের সফর (bahrain)
সাতটি সর্বদলীয় প্রতিনিধি দল সৌদি আরব, কুয়েত, বাহরাইন, আলজেরিয়া, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইতালি, ডেনমার্ক, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, কোরিয়া, জাপান, সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, লাইবেরিয়া, কঙ্গো, সিয়েরা লিওন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, পানামা, গায়ানা, ব্রাজিল, কলম্বিয়া, স্পেন, গ্রিস, স্লোভেনিয়া, লাটভিয়া, রাশিয়া, মিশর, কাতার, ইথিওপিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় সফর করবে।
এই প্রতিনিধি দলগুলোর মধ্যে প্রথম দলের নেতৃত্ব দেবেন বিজেপি সাংসদ বৈজয়ন্ত পান্ডা, যারা সৌদি আরব, কুয়েত, বাহরাইন এবং আলজেরিয়া সফর করবেন। এই দলে আরও তিনজন বিজেপি সাংসদ—নিশিকান্ত দুবে, ফাংনন কোনিয়াক এবং রেখা শর্মা—অংশ নেবেন।
এছাড়াও, এআইএমআইএম প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়াইসি, জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী গুলাম নবী আজাদ, মনোনীত রাজ্যসভা সদস্য সতনাম সিং সান্ধু এবং প্রাক্তন পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ শ্রিংলা এই দলে থাকবেন।
পিকলবল খেলায় মাতলেন বিরাট-অনুষ্কা, ভাইরাল ভিডিও
অপারেশন সিঁদুর এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের অবস্থান
এই আলোচনা এবং সর্বদলীয় প্রতিনিধি দলের সফর অপারেশন সিঁদুরের প্রেক্ষাপটে বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। অপারেশন সিঁদুরে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরে (পিওকে) নয়টি জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করেছে।
এই অভিযান ছিল সীমান্ত পার সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের লক্ষ্যবস্তু-নির্ভর ও পরিমিত প্রতিক্রিয়ার অংশ। জয়শঙ্কর এই অভিযানের পর পাকিস্তানকে কঠোর বার্তা দিয়ে বলেছেন, “সন্ত্রাসবাদের প্রতি শূন্য সহনশীলতা আমাদের নীতি।”
এর আগে, গত ২৩ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার পর বাহরাইনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি বিবৃতি জারি করে এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছিল। জম্মু ও কাশ্মীরের পাহালগামে পর্যটকদের উপর এই সশস্ত্র হামলায় ২৬ জন নিরীহ নাগরিকের মৃত্যু এবং আহত হওয়ার ঘটনায় বাহরাইন সরকার ভারত সরকার ও জনগণের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, “বাহরাইন সন্ত্রাস ও সহিংসতার বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান জানাচ্ছে।
ভারত-বাহরাইন সম্পর্ক (bahrain)
ভারত ও বাহরাইনের (bahrain) মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক ক্রমশ শক্তিশালী হচ্ছে। দুই দেশই সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একসঙ্গে কাজ করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে। গত ১০ ডিসেম্বর ২০২৪-এ, দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতি এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছিল।
এছাড়াও, সম্প্রতি ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের বৈঠকে পাকিস্তানের কাশ্মীর ইস্যুতে ভারতের বিরুদ্ধে তীব্র বিবৃতি জারির প্রচেষ্টাকে বাহরাইন বাধা দিয়েছিল বলে খবর পাওয়া গেছে।
আন্তর্জাতিক সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা
জয়শঙ্করের বাহরাইনের (bahrain) বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা এবং সর্বদলীয় প্রতিনিধি দলের সফর ভারতের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা গড়ে তোলার প্রচেষ্টার অংশ। ভারত বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে যে সন্ত্রাসবাদের কোনো সীমানা নেই এবং এর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করা প্রয়োজন। এই প্রেক্ষাপটে, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে ভারতের সর্বদলীয় প্রতিনিধি দলের সফর বিশেষ তাৎপর্য বহন করে।
জয়শঙ্কর ও বাহরাইনের (bahrain)বিদেশমন্ত্রীর মধ্যে টেলিফোনিক আলোচনা এবং সর্বদলীয় প্রতিনিধি দলের আসন্ন সফর ভারতের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ‘শূন্য সহনশীলতা’ নীতির প্রতিফলন। অপারেশন সিঁদুরের মাধ্যমে ভারত ইতিমধ্যে সীমান্ত পার সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। এই কূটনৈতিক উদ্যোগগুলো ভারতের জাতীয় ঐক্য এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থানকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরবে।