গ্রামের শিকড় থেকে বিশ্ব শৃঙ্গ জয়ী সিআইএসএফ গীতা

কেন্দ্রীয় শিল্প নিরাপত্তা বাহিনী (সিআইএসএফ)-এর সাব-ইন্সপেক্টর গীতা সামোটার (geeta) ঐতিহাসিক এবং অনুপ্রেরণাদায়ক সাফল্য ভারতের জন্য গর্বের মুহূর্ত। তিনি সিআইএসএফ-এর প্রথম অফিসার হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ…

geeeta wins Everest

কেন্দ্রীয় শিল্প নিরাপত্তা বাহিনী (সিআইএসএফ)-এর সাব-ইন্সপেক্টর গীতা সামোটার (geeta) ঐতিহাসিক এবং অনুপ্রেরণাদায়ক সাফল্য ভারতের জন্য গর্বের মুহূর্ত। তিনি সিআইএসএফ-এর প্রথম অফিসার হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট (৮,৮৪৯ মিটার বা ২৯,০৩২ ফুট) জয় করেছেন। ২০২৫ সালের ১৯ মে সকালে গীতা এই শৃঙ্গের চূড়ায় পৌঁছান, যা কেবল তাঁর ব্যক্তিগত যাত্রায় নয়, ভারতীয় নারী এবং সিআইএসএফ-এর জন্যও একটি মাইলফলক।

গ্রামীণ শিকড় থেকে বিশ্ব শৃঙ্গে (geeta)

রাজস্থানের সিকার জেলার চক গ্রামে জন্মগ্রহণকারী গীতা সামোটার (geeta)জীবনযাত্রা একটি সাধারণ পরিবার থেকে শুরু হয়। চার কন্যাসন্তানের মধ্যে একজন হিসেবে গীতা গ্রামীণ পরিবেশে বড় হয়েছেন। স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেছেন এবং কলেজ জীবনে একজন দক্ষ হকি খেলোয়াড় ছিলেন। তবে, একটি আঘাত তাঁর ক্রীড়া জীবনের অকাল সমাপ্তি ঘটায়। এই বাধা তাঁকে নিরুৎসাহিত করেনি, বরং তাঁকে আরও বড় লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পথ দেখায়।

   

২০১১ সালে গীতা সিআইএসএফ-এ যোগ দেন এবং সেখানে পর্বতারোহণের প্রতি তাঁর আগ্রহ জন্মায়। তখন সিআইএসএফ-এ এই ক্ষেত্রে তেমন কোনো উদ্যোগ ছিল না। ২০১৫ সালে তিনি আউলির আইটিবিপি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে ছয় সপ্তাহের একটি মৌলিক পর্বতারোহণ কোর্সে নির্বাচিত হন, যেখানে তিনি তাঁর ব্যাচের একমাত্র নারী ছিলেন। তাঁর অসাধারণ পারফরম্যান্স তাঁকে ২০১৭ সালে উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য পাঠায়, এবং তিনি সিআইএসএফ-এর প্রথম অফিসার হিসেবে এই কঠিন প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেন।

ট্রেইলব্লেজিং আরোহণ এবং সাত শৃঙ্গের স্বপ্ন

২০১৯ সালে গীতা (geeta)সেন্ট্রাল আর্মড পুলিশ ফোর্সেস (সিএপিএফ)-এর প্রথম নারী হিসেবে উত্তরাখণ্ডের মাউন্ট সাতোপন্থ (৭,০৭৫ মিটার) এবং নেপালের মাউন্ট লোবুচে (৬,১১৯ মিটার) জয় করেন। ২০২১ সালে সিএপিএফ-এর এভারেস্ট অভিযান প্রযুক্তিগত কারণে বাতিল হয়, কিন্তু গীতা হতাশ না হয়ে “সাত শৃঙ্গ” (সেভেন সামিটস) জয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করেন, যা প্রতিটি মহাদেশের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ আরোহণের চ্যালেঞ্জ।

২০২১ থেকে ২০২২ সালের প্রথমার্ধে তিনি ছয় মাস ও ২৭ দিনের মধ্যে চারটি প্রধান শৃঙ্গ জয় করেন: অস্ট্রেলিয়ার মাউন্ট কসিউসকো (২,২২৮ মিটার), রাশিয়ার মাউন্ট এলব্রাস (৫,৬৪২ মিটার), তানজানিয়ার মাউন্ট কিলিমানজারো (৫,৮৯৫ মিটার), এবং আর্জেন্টিনার মাউন্ট আকনকাগুয়া (৬,৯৬১ মিটার)। এই কৃতিত্ব তাঁকে ভারতের দ্রুততম নারী পর্বতারোহী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।

এছাড়াও, লাদাখের রুপশু অঞ্চলে তিন দিনের মধ্যে পাঁচটি শৃঙ্গ আরোহণ করেন, যার মধ্যে তিনটি ছিল ৬,০০০ মিটারের উপরে। এই কৃতিত্ব তাঁর খ্যাতি একজন রেকর্ডধারী পর্বতারোহী এবং জাতীয় গর্বের প্রতীক হিসেবে আরও উজ্জ্বল করে।

Advertisements

নমিনেশন ছাড়া পোস্ট অফিসে জমা টাকা কিভাবে তুলবেন, জানুন বিস্তারিত

স্বীকৃতি ও ভবিষ্যৎ লক্ষ্য

গীতা সামোটার (geeta)এই অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য তিনি একাধিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। ২০২৩ সালে তিনি দিল্লি কমিশন ফর উইমেন থেকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পুরস্কার এবং নাগরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয় থেকে “গিভিং উইংস টু ড্রিমস অ্যাওয়ার্ড” পেয়েছেন। তাঁর দর্শন স্পষ্ট এবং শক্তিশালী: “পর্বত কোনো বৈষম্য করে না। এটি লিঙ্গ নির্বিশেষে সকলের সঙ্গে সমান আচরণ করে। কেবলমাত্র যারা বিশেষ ‘এক্স-ফ্যাক্টর’ নিয়ে আসে তারাই চূড়ায় পৌঁছায়।”

সিআইএসএফ তাঁর এই অভিযানে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। মানালির এবিভিআইএমএএস-এ প্রশিক্ষণের সুযোগ এবং এভারেস্ট অভিযানের জন্য অর্থায়ন প্রদান করেছে। গীতার সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে সিআইএসএফ ২০২৬ সালে এভারেস্টে একটি পূর্ণাঙ্গ পর্বতারোহণ দল পাঠানোর পরিকল্পনা করছে।

নারী শক্তির প্রতীক

গীতা সামোটার (geeta)এই বিজয় কেবল একটি পর্বতারোহণ কৃতিত্ব নয়, এটি দেশের তরুণী ও নারীদের জন্য একটি শক্তিশালী বার্তা: “বড় স্বপ্ন দেখুন, কঠোর পরিশ্রম করুন, এবং কখনো হাল ছাড়বেন না।” তিনি কেবল শারীরিক শৃঙ্গ জয় করেননি, বরং নারীর ক্ষমতা সম্পর্কে গভীর-মূল সমাজের ধারণাকেও চ্যালেঞ্জ করেছেন।
সিআইএসএফ-এর মহাপরিচালকসহ পুরো সিআইএসএফ পরিবার গীতা সামোটাকে এই অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়েছে। তাঁর এই অর্জন ভারতের যুব সমাজ এবং পুরো সিএপিএফ সম্প্রদায়ের জন্য একটি অনুপ্রেরণার উৎস।

গীতা সামোটার (geeta)এই ঐতিহাসিক সাফল্য ভারতের নারী শক্তির একটি উজ্জ্বল উদাহরণ। তাঁর যাত্রা সাহস, অধ্যবসায় এবং জাতীয় গর্বের প্রতীক। মাউন্ট এভারেস্টের চূড়ায় তাঁর পতাকা উড়িয়ে তিনি প্রমাণ করেছেন যে কঠিন পরিশ্রম এবং দৃঢ়সংকল্পের মাধ্যমে যে কোনো লক্ষ্য অর্জন সম্ভব। গীতার এই অর্জন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি উজ্জ্বল পথপ্রদর্শক হয়ে থাকবে, এবং তাঁর গল্প ভারতের তরুণীদের স্বপ্ন পূরণের জন্য উৎসাহিত করবে।