কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়গে (kharge) মঙ্গলবার কর্ণাটকের বিজয়নগরে ‘সমর্পণে সঙ্কল্প’ সমাবেশে অপারেশন সিঁদুরের বিরুদ্ধে পরোক্ষভাবে কটাক্ষ করে বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ‘ছুটপুট’ (ছোটখাটো) যুদ্ধ চালাচ্ছে। তিনি গত মাসে জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে ২৬ জনের প্রাণহানির মর্মান্তিক জঙ্গি হামলায় জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থতার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের তীব্র সমালোচনা করেন।
খড়গে বলেন (kharge)
খড়গে বলেন(kharge) , “প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ১৭ এপ্রিল কাশ্মীর সফরের কথা ছিল। কিন্তু গোয়েন্দা সংস্থাগুলি বড় ধরনের সহিংসতার সতর্কতা জারি করায় তিনি সফর বাতিল করেন। আমি প্রশ্ন করছি, আপনি কি এই বিষয়ে অবগত ছিলেন? যদি অবগত থাকেন, তবে জনগণকে কেন জানানো হয়নি?
যদি সতর্কতা জারি করা হতো, তবে ২৬ জন নিরীহ মানুষের জীবন রক্ষা করা যেত।” তিনি আরও বলেন, “এই ছুটপুট যুদ্ধের মাধ্যমে পাকিস্তান, বিশেষ করে চিনের নীরব সমর্থনে, সব স্তরে ভারতকে হেয় করছে।”
অপারেশন সিঁদুরের (kharge) পর ভারতের অবস্থান বোঝাতে সরকারের সর্বদলীয় প্রতিনিধি দল বিদেশে পাঠানোর সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে খড়গে বলেন, “প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন যে প্রতিনিধি দল পাঠানো হবে, কিন্তু আমাদের সঙ্গে পরামর্শ করা হয়নি। তবুও আমরা জাতীয় স্বার্থে এর বিরোধিতা করিনি। আমাদের প্রতিনিধিরা এখন বিভিন্ন দেশে যাচ্ছেন। আমাদের অগ্রাধিকার দেশকে রক্ষা করা, রাজনৈতিক পয়েন্ট স্কোর করা নয়।”
এই দ্বিমুখী নীতি কেন?”
প্রবীণ কংগ্রেস নেতা খড়গে (kharge) প্রধানমন্ত্রী মোদীর বিরুদ্ধে বিহারে রাজনৈতিক সমাবেশে ব্যস্ত থাকার এবং সর্বদলীয় বৈঠকে অনুপস্থিত থাকার অভিযোগ তুলে বলেন, “২৬ জন নাগরিক নিহত হওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী বিহারে সমাবেশে ব্যস্ত ছিলেন।
দুটি সর্বদলীয় বৈঠক হয়েছে, এবং প্রধানমন্ত্রী কোনোটিতেই উপস্থিত ছিলেন না। আমরা যদি এই বৈঠকগুলো এড়িয়ে যেতাম, তবে আমাদের বিশ্বাসঘাতক বলা হতো। কিন্তু মোদী যখন এড়িয়ে যান, তখন তা দেশপ্রেম হিসেবে চিহ্নিত হয়। এই দ্বিমুখী নীতি কেন?”
সম্বিত পাত্র তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন
খড়গের (kharge) মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিজেপি সাংসদ সম্বিত পাত্র তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, “খড়গে জি বলছেন অপারেশন সিঁদুর একটি ছোট যুদ্ধ। রাহুল গান্ধী এবং খড়গে জি কি বুঝতে পারছেন না যে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী পাকিস্তানে প্রবেশ করে নয়টি জঙ্গি ঘাঁটিতে আঘাত করেছে এবং ১০০-র বেশি জঙ্গি নিহত হয়েছে?
পাকিস্তানের প্রতিশোধের পর তাদের ১১টি বিমানঘাঁটি ধ্বংস হয়েছে, এবং আজ পাকিস্তান ব্যথায় কাঁদছে। আর আপনারা বলছেন অপারেশন সিঁদুর ছোট যুদ্ধ। এটা দেশের সঙ্গে এবং সশস্ত্র বাহিনীর সাহসিকতার সঙ্গে প্রতারণা।”
প্লে অফ থেকে লখনউয়ের বিদায়ের পর শান্ত সুরে বড় বার্তা দিলেন সঞ্জীব গোয়েঙ্কা
পহেলগাঁও হামলা ও অপারেশন সিঁদুর
২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ের বাইসরান উপত্যকায় জঙ্গি হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যার মধ্যে ২৫ জন পর্যটক এবং একজন নেপালি নাগরিক ছিলেন। এই হামলার দায় স্বীকার করে লস্কর-ই-তৈবার শাখা দ্য রেসিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ)।
এর প্রতিশোধ হিসেবে ভারত ৭ মে অপারেশন সিঁদুর শুরু করে, যার মাধ্যমে পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে (পিওকে) নয়টি জঙ্গি ঘাঁটিতে নির্ভুল হামলা চালানো হয়। এই অপারেশনে জৈশ-ই-মোহাম্মদের প্রধান মাসুদ আজহারের ১০ জন পরিবারের সদস্য এবং চারজন ঘনিষ্ঠ সহযোগী নিহত হন।
খড়গে (kharge) অভিযোগ করেন, প্রধানমন্ত্রী মোদী তিন দিন আগে গোয়েন্দা তথ্য পেয়েছিলেন, তবুও পর্যটকদের সুরক্ষার জন্য কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, “যখন আপনি সতর্কতা পেয়ে সফর বাতিল করলেন, তখন পর্যটকদের সুরক্ষার জন্য অতিরিক্ত বাহিনী কেন পাঠানো হলো না? স্থানীয় পুলিশ, গোয়েন্দা এবং সীমান্ত বাহিনীকে কেন সঠিকভাবে সতর্ক করা হলো না?”
সর্বদলীয় প্রতিনিধি দল নিয়ে বিতর্ক
অপারেশন সিঁদুরের পর ভারতের অবস্থান বোঝাতে সরকার সর্বদলীয় প্রতিনিধি দল বিদেশে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। খড়গে (kharge) বলেন, এই সিদ্ধান্তে বিরোধী দলগুলির সঙ্গে আলোচনা করা হয়নি, তবুও কংগ্রেস জাতীয় স্বার্থে এর বিরোধিতা করেনি। কংগ্রেসের চার সাংসদ—আনন্দ শর্মা, গৌরব গগৈ, নাসির হুসেন এবং রাজা ব্রার—এই প্রতিনিধি দলের অংশ হিসেবে বিদেশে যাচ্ছেন।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
খড়গে (kharge) এবং রাহুল গান্ধী পাহলগাম হামলা, অপারেশন সিঁদুর এবং ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনার জন্য সংসদের বিশেষ অধিবেশনের দাবি জানিয়েছেন। তারা প্রধানমন্ত্রী মোদীকে চিঠি লিখে এই অনুরোধ করেছেন, যা বিরোধী দলগুলির ঐক্যবদ্ধ দাবি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। খড়গে আরও বলেন, অপারেশন সিঁদুর ততক্ষণ সফল বলা যাবে না, যতক্ষণ না পহেলগাঁও হামলার জন্য দায়ী জঙ্গিরা ধরা বা নিহত হয়।
বিজেপি সাংসদ সম্বিত পাত্র খড়গের মন্তব্যকে দেশ এবং সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে প্রতারণা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন, অপারেশন সিন্দুর ভারতের সামরিক শক্তি এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান প্রদর্শন করেছে।
খড়গের মন্তব্য এবং বিজেপির প্রতিক্রিয়া ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক এবং জম্মু ও কাশ্মীরের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে রাজনৈতিক উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। পহেলগাঁও হামলা এবং অপারেশন সিঁদুর নিয়ে বিতর্ক দেশের রাজনৈতিক মঞ্চে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে। খড়গের দাবি এবং সরকারের প্রতিক্রিয়া আগামী দিনে জাতীয় নিরাপত্তা এবং কূটনৈতিক নীতির উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।